অভিজিত রায় ॥
চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, চাঁদপুরের বিজয় মেলা এখন চাঁদপুরবাসীর প্রাণের মেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। স্বাধীনতা আমাদের কেউ দান করেনি। আমরা অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে এ স্বাধীনতা পেয়েছি। আজকের এই বিজয় মেলা মঞ্চে আমি স্মরণ করছি যারা মিত্র বাহিনী ছিলো, আমাদের পাশে থেকে যুদ্ধ করেছিলো। সারা বিশ্বের মুক্তিকামী জনতা যারা ’৭১ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাদেরকে অভিনন্দন জানাই এবং যারা এই পৃথিবী ছেড়ে চলেগেছেন তাদের সকলকে স্মরণ করছি। তিনি গতকাল সোমবার সকালে চাঁদপুর হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ মঞ্চে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উদ্বোধকের বক্তব্য এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বের কাছে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারতাম, যদি ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট না ঘটতো। জাতির পিতাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে আমাদের জাতিকে এই রাষ্ট্রটিকে তাঁর ইচ্ছার উল্টোদিকে আমাদেরকে পিছন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিলো। বার বার বাঙালী চেস্টা করেছে, কখনো মাথা নত করেনি। বার বার রক্ত দেয়ার ফলশ্রুতিতেই আমরা গণতন্ত্রের প্রত্যাপর্তন করতে পেরেছি। সেই সংগ্রামের অনেক পথ পেরিয়ে বাংলাদেশ এমন একটি জায়গায় এস উপনতি হয়েছে। সারা বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, এই বাংলাদেশ অনেক প্রতিকুলতাকে মোকাবেল করে কিভাবে দীপ্ত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে তার কারণ হচ্ছে, এই বাংলাদেশের নেতৃত্বে সেই দল, যেই দল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছিলো। সেই দলটি এখন দেশ পরিচালনা করছে। আর এর কৃতিত্ব এ দেশের সাধারণ জনগণের। কারণ তারা এই দলটিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতা দিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা দেওয়ার কারণে তিনি গত ৬ বছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামাজিক ক্ষেত্রে এবং সকল ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, মাঝখানে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে ফিরে পেয়েছি। কিন্তু আমাদের পথ চলা কোনভাবেই শেষ হয়নি। আমরা এখনো অর্থনৈতিক যে সার্বিক মুক্তি তা এখনো পুরো পুরি অর্জণ করতে পারিনি। তবে এখন বাংলাদেশে কোন মানুষ না খেয়ে মরে না। প্রতিটি মানুষের গায়ে জামা কাপড় আছে, পায়ে এক জোড়া সেন্ডেল হলেও আছে। প্রতিটি মানুষ অসুস্থ্য হলে এখন নূন্যতম চিকিৎসা পাওয়ার ব্যবস্থাটুকু হয়েছে। কিন্তু এদেশটির আরো অনেকদূর যাবার আছে। আমাদের দেশ আরো বহু দূর যাবে, উন্নত একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হবে, সোনার বাংলা হবে। সেটিই আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্য। আর এই অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়ার জন্য সেই ৭১ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত যারা আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। সরকার দেশের বড় একটি দল, যেই দল যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় তাদেরকে কোন সময় সমর্থন করে না। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায় কার্যকর হচ্ছে। তারা কিভাবে বাঁচানোর জন্য যায়। আমরা চাই শান্তি, শান্তি থাকলেই দেশ আরো উন্নত হবে।
মেলার প্রথম পর্বের কর্মসূচীর মধ্যে ছিলো জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ডাঃ দীপ মনি এমপি ও মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলন করেন জেলা কমান্ডার এম.এ.ওয়াদুদ। পরে তারা শান্তির প্রতিক পায়ড়া উড়িয়ে দেন। ডাঃ দীপুমনি এমপিসহ সকল অতিথিবৃন্দ এরপর শহীদদের স্মরণে তৈরী ভাস্কর্য অঙ্গীকারে পুস্পস্তবক অর্পন করেন। তারপর ফিতাকেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন পর্বে সভাতিত্ব করেন মেলা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাড. সেলিম আকবর। সদস্য সচিব অ্যাড. বদিউজ্জামান কিরনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এম.এ.ওয়াদুদ, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. জহিরুল ইসলাম, জেলা সিপিবি সভাপতি মনিষা চক্রবর্তী। আরো বক্তব্য রাখেন মেলায় আর্থিক সহায়তা দানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের পক্ষে আব্দুল করিম মো. নিয়ামুল খোদা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়নগঞ্জ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হোসনে আরা বেগম বাবলী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএম হান্নান, সহ-সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী, জেলা যুবলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান ভুঁইয়া কালু, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য অ্যাড. জসিম উদ্দিন পাটওয়ারী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ মোতালেব, মেলার অন্যতম কর্ণধার হারুন আল রশিদসহ মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও সুধীজন। অনুষ্ঠানে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনির ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও মেলা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।