মুসলমানদের অন্যতম বৃহত্তম উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন শেষে জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রিয়জনদের ছেড়ে দূর-দূরান্তে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ।
চাঁদপুর জেলাসহ পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালির অধিকাংশ মানুষই সড়ক পথের চেয়ে নদী পথেই ঢাকায় যাতায়াত করে থাকে। এবছর ঈদ ও পুজার ছুটি একই সাথে শেষ হওয়ায়, গত শুক্রবার থেকেই চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এ সুযোগে কিছু অসাধু চক্র যাত্রী হয়রানিতে মেতে ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, এসব চক্রের সাথে ঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সংশিষ্টতা রয়েছে।
শনিবার সরেজমিনে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কর্মস্থলে ফেরার তাগিদে চাঁদপুর মাদ্রাসা ঘাটস্থ বিকল্প লঞ্চঘাটে যাত্রীরা ভিড় জমায়। এসময় লঞ্চে দ্বিগুন ভাড়া আদায়, লঞ্চের সিডিউল বিপর্যয়, যাত্রী হয়রানি, চাঁদপুর রুটের লঞ্চ রেখে অন্য রুটের লঞ্চ চলাচল এবং যাত্রী নিয়ে টানা হেচড়াসহ আরো নানান অভিযোগ করেন যাত্রীরা। আজও যাত্রীদের এমন ভিড় হবার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে লঞ্চ মালিক প্রতিনিধিরা বন্দর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, চাঁদপুর রুটের লঞ্চ রেখে অভিযান-৫ নামে ঢাকা-শৌলা-মুলাদী রুটের একটি লঞ্চ স্পেশাল হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তারা আরো জানান চাঁদপুর রুটের দুটি লঞ্চ ঘাটে থাকা স্বত্তেও নৌ বন্দর কর্মকর্তা কি কারণে অন্য রুটের লঞ্চ স্পেশাল হিসেবে দিয়েছে তা আমরা জানি না। এ লঞ্চটি চাঁদপুর রুটের না হওয়ায় যাত্রীরা বিপাকে পড়ে। তারা ঘাটে থাকা চাঁদপুর রুটের লঞ্চগুলোতে উঠলে বন্দর কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে এসব লঞ্চ যেতে দেয়া হবে না বলে জানায়, কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরা বেয়াদবি করেছে। এসব লঞ্চে প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত যাত্রীরা অপেক্ষা করে বন্দর কর্মকর্তার উপর চড়াও হলে অবশেষে লঞ্চগুলো ছাড়ার অনুমতি দেয়া হয়।
অন্যদিকে এমভি মিতালী লঞ্চের এক যাত্রী রায়পুরের আসলাম পাটওয়ারী জানায়, শুক্রবার ভিড় বেশি হবে ভেবে আমি শনিবারে ঢাকা যাবার জন্য ঘাটে এসে লঞ্চের এক ষ্টাফের কাছে সিঙ্গেল কেবিন দিতে বললে সে ১হাজার টাকা চায়। এছাড়াও শহরের স্টেডিয়াম রোড়ের আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতালের আলী ইমাম নামক আরেক যত্রী জানায়, সোনার তরী-২ লঞ্চে উঠে কেবিনের টিকেট করেছি। পরে লঞ্চ ষ্টাফরা বলেন, সোনার তরী যাবে না অভিযান-৫ লঞ্চ যাবে। এমন আরো বেশ কিছু যাত্রীরা এক লঞ্চের টিকেট কেটে অন্য লঞ্চে যেতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যাত্রীদের অভিযোগ মতে বাড়তি ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে লঞ্চ মালিক প্রতিনিধিরা বলেন, ঈদ উপলক্ষে একটু বেশি ভাড়া নেওয়া হতে পারে।
হয়রানির স্বীকার হয়ে বেশ কিছু যাত্রীরা নৌ-বন্দর কর্মকর্তার প্রতি চড়াও হয়ে উঠে এবং তাকে চোরের গুষ্ঠি চোর বলে গালমন্দ ও বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করে। এসময় সাধারণ যাত্রীরা সেবার নামে হয়রানি করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
এভাবেই দুর্ভোগ স্বীকার করে যাত্রীরা কর্মস্থলে ফিরছে। এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও প্রতিকার পাননি কর্মস্থলমুখো মানুষ। যাত্রীরা লঞ্চের ভেতর ও ছাদে যেখানেই জায়গা পেয়েছেন সেখানে উঠে বসেছেন। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী তুলছে। আগের তুলনায় যাত্রীর চাপ বেশি থাকার সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করেছে লঞ্চগুলোতে। পথে পথে এসব ভোগান্তির পরও কর্মস্থলে ফিরছে তারা। এছাড়াও নৌ-বন্দর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ করে অনেকেই বলেন, তিনি তার ইচ্ছে মতো লঞ্চ পরিচালনা করছেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ থাকা স্বত্ত্বেও এখনো ইচলী ঘাটে লঞ্চ চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি ও যাত্রীরা বলেন, ইচলী লঞ্চ ঘাটটি চালু হলে ফরিদগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ এসব এলাকার যাত্রীরা ইচুলী ঘাট দিয়ে চলাচল করতো। এতে শহরের যানজট অনেকটাই কমে যেতো।
এ বিষয়ে নদী বন্দর কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন জানান, কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভিড় থাকায় লঞ্চ গুলোকে নির্দিষ্ট সময়ের ১ থেকে দেড় ঘন্টা আগে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীরা যেন নিরাপদে ঢাকা যেতে পারে সেজন্য শুক্রবার ৪টি স্পেশাল লঞ্চ ও গতকাল শনিবার বেশ কয়েকটি স্পেশাল লঞ্চ দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের চাহিদামত আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। চাঁদপুর রুটের লঞ্চবিহীন অন্য রুটের লঞ্চ স্পেশাল হিসেবে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্পেশাল লঞ্চ আমার ইচ্ছে মতো দেওয়া হবে। তাই দিয়েছি।
অপরদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় কুমার মোহন্ত জানায়, লঞ্চের ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের দায়ে আব-এ-জম জমকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌ পুলিশ এবং বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিয়েছি। যাত্রীরা যাতে সমস্যায় না পড়ে সেজন্য একটির পর একটি লঞ্চ ঘাটে ভিড়িয়ে যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
পুলিশ সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে বলে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এএসপি রিভার রিপন কুমার মোদত জানায়, এবছর মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তম উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম উৎসব দুর্গাৎসব এক সাথে হওয়ায় যাত্রীদের চাপ একটু বেশি। ঈদ ও পুজার ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশি টহল জোরদার রয়েছে।
শিরোনাম:
সোমবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৮ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।