শওকতআলী ॥
ঈদের ৭দিন পার হয়ে গেলেও তবুও লঞ্চ ঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভীড় কমছে না। শনিবার ১০টায় চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ল। সকাল থেকে প্রায় সব লঞ্চেই ধারণ ক্ষমতার কয়েক গুণ বেশী যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই ঘাট ত্যাগ করেছে লঞ্চগুলো। চাঁদপুর হতে অধিকাংশ যাত্রী বাহী লঞ্চ গুলো ধারন ক্ষমতার ৪/৫গুন যাত্রী নিয়ে ঝুকির মধ্যে দিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করছে। এতে করে যে কোন মূহুতে লঞ্চ গুলো নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ¯্রােতের কবলে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্বাবনা বিরাজ করছে। প্রশাসনের সামনে যাত্রী বোঝাই করলেও দেখার যেন কেউ নাই।
সরোজমিনে গতকাল শনিবার চাঁদপুর নৌ-টামিনালে গিয়ে দেখা যায়,পবিত্র ঈদুল আযহার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও চাঁদপুর থেকে ঢাকা অভিমুৃখে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতিটি যাত্রী বাহি লঞ্চ ধারন ক্ষমতার চার.পাঁচ গুন যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে ঢাকা যাচেছ। ঈদের পূর্বে চাঁদপুর জেলা ছাড়া লক্ষীপুর,নোয়াখালী,রায়পুর,রামগঞ্জ ও পাশর্^বতী জেলা শরিয়তপুরে শত-শত যাত্রী নাড়ির টানে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে এসেছে। এবার ঈদের ছুটির রোববার শেষ হওয়ার পরও যাত্রীরা ঈদের পর পর তাদের কর্মস্থলে যোগদান করতে বিলম্ব করেছে।
যার ফলে গতকাল শুক্রবার ও শনিবার কর্মস্থলে অফিস,আদালত,ব্যাংক,বীমাও গার্মেন্টেসে যোগদান করতে এক সাথে সকল যাত্রী নিয়স্ত্রন হারিয়ে ছুটছে। শিশু,মহিলা,পুরুষ ও যুবকরা তাদের জীবনের দিক বিবেচনা না করে প্রতিটি লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় থাকার পরও তারা ভীর উপেক্ষা করে ৪/৫ গুন যাত্রীর মধ্যে যাত্রী হয়ে জীবন বাজি রেখে লঞ্চে উঠছে,কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য। প্রতিটি লঞ্চে কেবিন,প্রথমশ্রেনীর,ভিজনেছ শ্রেনী, ২য় শ্রেনী ,তৃতীয় শ্রেনীর আসন ভরপুর হয়ে যাওয়ার পরও ডেকে – মেঝেতে বসে ও ছাদের উপর উঠে যাত্রীরা গন্তব্যে যাত্রা করছে
পরিবারের টানে বাড়ি ফেরা ঈদের আনন্দকে সবার সাথে কাটানোর জন্য নিজস্ব বাড়িতে আসা লোকজন এখনো পুরোপুরি কর্মস্থলে ফিরতে পারেনি। এই বিষয়ে চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানায়, ঈদে বাড়ি আসা লোকজন পুরোপুরি কর্মস্থলে যেতে আরো দুই থেকে তিনদিন সময় লাগতে পারে। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ থাকায় নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আমরা লঞ্চগুলো ছেড়ে দিচ্ছি যাতে কোনো দূর্ঘটনা না ঘটে। আমরা বিআইডাব্লিউটিএর পক্ষ থেকে যাত্রীদের সুবির্ধাতে লঞ্চ মালিক প্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে অতিরিক্ত লঞ্চের ব্যবস্থা করে রেখেছি। এই বিষয়ে চাঁদপুর নদী বন্দরের উপ-পরিচালক নৌ-ন্ট্রিা মোবারক হোসেন জানায়, চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি যাতে কোনো লঞ্চ ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিতে না পারে। এই বিষয়ে পরিবহন পরির্দশক মোঃ জহিরুল ইসলাম ও সুমন এই বিষয়ে চাঁদপুর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবুল হাসিম জানায়, আমাদের নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে লঞ্চ ঘাটে যাত্রীদের নিরাপত্তার সব ধরণের ব্যবস্থা রয়েছে। ঘাটে আমাদের একটি কন্ট্রোল রুমে রয়েছে সেখানে আমাদের অফিসাররা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। যাত্রীদের সুবিদার্থে পল্টুনটি হকার মুক্ত রেখেছি যাতে করে যাত্রীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারে ঘাটের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে। সাধারণ যাত্রীদের চলাচলের গতিবিধি আমরা সবসময় দৃষ্টিতে রাখছি। এখনো পর্যন্ত কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী দেখা মাত্রই লঞ্চে আর উঠতে না দিয়েই লঞ্চগুলো ছেড়ে দেই।লক্ষীপুর জেলার রায়পুর থেকে আসা যাত্রী মোফাজ্জল হোসেন জানায়, আসার পথে চাঁদপুর শহরে দীর্ঘ গাড়ির যানজট পেয়েছি। যার কারণে নির্ধারিত সময়ে লঞ্চ ঘাটে পৌঁছাতে পারিনি। ঘাটে এসে লঞ্চে গিয়ে কোনো কেবিন না পেয়ে লঞ্চের কিছু স্টাফ দাড়িয়ে কেবিন আছে কেবিন আছে বলতে থাকে। ভাড়া কত জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে জিজ্ঞাস করে লোক কয়জন আমি তিন জন বলার পর আমাকে বলে কোম্পানির কেবিন শেষ হয়ে গেছে এখন শুধু আমাদের স্টাফদের কেবিন আছে এগুলো নিতে হলে প্রতি কেবিনে ২হাজার টাকা করে দিতে হবে। ঈদের পূর্বে যে কেবিন ৮শত টাকার ছিল সেই কেবিন এখন ২হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। ঘাটে সবকটা লঞ্চে একই অবস্থা। তাই ঘাটে দাড়িয়ে পরবর্তী লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু পরবর্তী লঞ্চ ঘাটে আসলে তাতে উঠতে পারবো কিনা তা নিয়ে ভাবছি। এই বিষয়ে আরো জানায় বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক লীগের চাঁদপুর জেলা শাখা সভাপতি মোঃ বিপ্লব সরকার জানায়, অতীতের অন্যান্য ঈদের চাইতে এই ঈদে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যাত্রী বেশী হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ (১) সড়ক পথে দীর্ঘ যানজটের কারণে লক্ষীপুর, নোয়াখালী জেলার লোকজনও চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট দিয়ে যাতায়াত করে তাই একটু যাত্রীদের ভিড় হচ্ছে। (২) লঞ্চগুলো বর্তমানে ইচুলী ঘাট যাচ্ছে না সকল যাত্রী চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে আসে তাই যাত্রী অনেক বেশী হচ্ছে। (৩) নদীর ওপার থেকে ট্রলার যোগে অনেক যাত্রী আসে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে। এখন চাঁদপুরের সকল লঞ্চই অনেক মানসম্মত হয়েছে। ঘাটে জেলা প্রশাসন কর্তৃক নিযুক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিআইডাব্লিটিএ, নৌ-পুলিশ, কোষ্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সুশিল সমাজের লোকজন যাত্রী নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। কোনো লঞ্চেই দূর্ঘটনা ঘটার মতো যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে না। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যাত্রীর চাপ থাকায় একটু বিরম্ভনায় পড়ছে যাত্রীরা। যাত্রীদের জন্য নেই ঘাটে বসার জন্য কোনো যাত্রী ছাউনি, মানসম্মত শৌচাগার, পান করার মতো বিশুদ্ধ পানিসহ আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। ঘাটে কিছু লোকজন রয়েছে তারা লঞ্চ থেকে কেবিন নিয়ে যাত্রীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে কিন্তু তারা লঞ্চের কোনো কর্মী না তারা যাত্রী সেজে লঞ্চের কাউন্টারে যায় সেখান থেকে টিকেট নিয়ে এসে সাধারণ যাত্রীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ২১ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।