শওকত আলী, ॥
এ পথের ৫৭ কিলোমিটার এলাকার কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে রেলপথ সচিবসহ চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি দল চাঁদপুরে এসেছেন। তারা এ পথের উন্নয়ন পরিদর্শনের শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুর ত্যাগ করেন। চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের উন্নয়ন কাজ বিগত ৪ বছর যাবৎ চলছে। তারপরও এ কাজটি সমাপ্তি হচ্ছে না। দক্ষিণাঞ্চলীয় যাত্রীসহ হাজার হাজার যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে এ পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভারতীয় কালিন্দি রেলওয়ে কোঃ লিঃ কে এ কাজ করার জন্য ১ বছরের সময় বেধে দিয়েছিল। ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি এ কাজ শুরু করে ২০১৩ সালের ৩০ জুন এ কাজ শেষ করার কথা। এ পর্যন্ত ৫ বার এ উন্নয়ন কাজ বন্ধ হওয়ার পর পুনরায় সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়। ১শ’ ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথের উন্নয়নে, ৫০ কোটি টাকায় এ পথের ৮টি স্টেশন ভবনের রি-মডেলিংয়ের কাজ ও ৫৮টি ব্রিজের কাজ করার জন্য এ দেশীয় কোঃ কাসেম কনস্টেকশনকে দায়িত্ব অর্পন করা হয়। ধিমেতালে সময় ক্ষেপন করে কাজ করায় এ পথের কাজ আশা অনুরুপ এগিয়ে যাচ্ছিল না। যার ফলে এ পথের কাজের অগ্রগতি দেখার জন্য গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ পথের চিতোশী থেকে প্রতিনিধি দল রেলপথ, এ পথের নির্মানাধীন ব্রিজ ও রি-মডেলিং স্টেশন ভবনগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখে-দেখে বিকেল ৫ টায় চাঁদপুর এসে পরিদর্শন শেষ করেন। পরিদর্শনকালে রেলপথ সচিবসহ চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তাসহ প্রতিনিধি দলে ছিলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, উপ-সচিব আশরাফ আলী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় চীফ ইঞ্জিনিয়ার টেক-মোঃ রমজান আলী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মোঃ আবিদুর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় টেলি যোগাযোগ সংকেট প্রকৌশলী সুশীল কুমার হালদার, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, জেটিআইসি মোঃ মাসুদ সারোয়ার, চাঁদপুর-লাকসাম ও নোয়াখালী রেলপথের দায়িত্বরত এসএসএই/ পথ মোঃ লিয়াকত আলী মজুমদার, এসএসএই/কার্য্য রাম নারায়ন ধরসহ চট্টগ্রাম বিভাগীয় অসংখ্য কর্মকর্তা এসময় উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধি দল চিতোশী ছাড়াও শাহ্রাস্তি, মেহের , উয়ারুক, বলাখাল, মধু রোড, শাহাতলী, মৈশাদী, চাঁদপুর কোর্ট স্টেশন ও চাঁদপুর স্টেশন পরিদর্শন করেন এবং এ উন্নয়ন কাজের অগ্রগতির দেখে তা লিপিবদ্ধ করেন। পরিদর্শন শেষে এ দলটি চাঁদপুর এসে চাঁদপুর সার্কেট হাউজে রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সকল কর্মকর্তাদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মিলিত হন। রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উর্ধ্বতন একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, জনবল ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ কাজের বিলম্ব হচ্ছিল। যার ফলে ভারতীয় এ কোম্পানীটি ১ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার স্থলে ৪ বছর সময় অতিকান্ত করেও কাজটি শেষ হচ্ছে না। রেলপথ সচিবসহ চট্টগ্রাম বিভাগীয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটিত এ প্রতিনিধি দল রিপোর্ট দেওয়ার পর এ বছর উন্নয়ন কাজ দ্রুত গতিতে চলবে বলে ওই সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
এ ব্যাপারে রেলপথ সচিব ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় চীফ ইঞ্জিনিয়ার টেক মোঃ রমজান আলী ও চট্টগ্রাম বিভাগ প্রকৌশলী-১ আবিদুর রহমান জানিয়েছে, এ বছরের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে। কাজ শেষ হওয়ার পর ৫৭ কি.মি. রেলপথ অতিক্রম করতে যেখানে ২ ঘন্টা সময় লাগতো, সেখানে মাত্র ৪৫ মিনিট সময় লাগবে। চাঁদপুর লাকসাম রেলপথের উন্নয়নে সরকারের একনেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালে ১শ’ ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। পরে তা রিভাইজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়।
চাঁদপুর জেলা তথা দক্ষিণ অঞ্চলীয় হাজার হাজার যাত্রী এ পথে প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে। যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধা ও সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে এ পথের উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হয়। বৃটিশ শাসন আমলে প্রায় ২শ’ বছর পূর্বে এ রেলপথ স্থাপন করা হয়। সেই সময় থেকে এ পথের উন্নয়নে কোন বড় ধরনের সংস্কার কাজ হয়নি। বর্তমানে এ সংস্কারের লক্ষ্যে রেলপথ, ব্রীজ, স্টেশন ভবন ও ডিজিটাল পদ্ধতির সিগনালের কাজ হাতে নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এ ৫৭ কি.মি. কাজের দায়িত্ব পান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভারতীয় কালিন্দি কোম্পানি। এ কোম্পানি ২০১২ সালের ৩০ মার্চ এ কাজ শুরু করে হাজীগঞ্জ এলাকা থেকে। ১ বছরের মধ্যে ২০১৩ সালের ৩০ জুন এ কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ভারতীয় কোম্পানির জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় ৪ বছরে ৬ বার কাজ শুরু করে, আবার বন্ধ করে রাখে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, এ পর্যন্ত এ কোম্পানি কে কাজের সময়সীমা ৫ বার বর্ধিত করে দেওয়া হয়।
রেলওয়ে চট্রগ্রাম বিভাগীয় সূত্রে জানাগেছে, ২০১৪ সালে কালিন্দি কোম্পানি নিজেরা কাজ করতে না পারায়, এ দেশীয় কোম্পানি চট্রগ্রাম আজমাইন ট্রেড ইন্টার ন্যাশনাল কোম্পানির নিকট কাজটি বিক্রি করে দেয়। সেই কোম্পানি ২ বারই কাজ শুরু করে বন্ধ করে দেয়। অবশেষে ভারতীয় কোম্পানি তাদের বিরাট অঙ্কের জামানতের অর্থ ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পুনরায় কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতে গত এক সপ্তাহ যাবত এ পথের উন্নয়ন কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের দায়িত্বরত এসএসএই (পথ) মোঃ লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, পূর্বে রেলপথ যে অবস্থায় ছিল তার চাইতে বর্তমান রেলপথ ১ ফুট উচু হবে। পুরাতন রেলপথ খুলে ফেলে দিয়ে, নতুন কংক্রিট স্লিপার বসিয়ে ৭৫ পাউন্ড ওজনের রেলপাত স্থাপন করা হচ্ছে। এর পূর্বে ৬০ পাউন্ড রেলপাত ছিল এ পথে। এ পথে বর্তমানে ট্রেন চলাচল করছে ২৫/৩০ কি.মি. গতিতে। পুরো কাজ শেষ হলে ট্রেন চলাচল করবে ঘন্টায় ৭২/৭৫ গতিতে। এতে সময় বাচবে সোয়া ১ ঘন্টা। ২ ঘন্টার স্থলে লাগবে ৪৫ মিনিট। এ পর্যন্ত ৩৫ কি.মি. কাজ সম্পন্ন হয়েছে।