চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
চাঁদপুর শহরের মিশন রোডস্থ রেল লাইনের পাশে রেলওয়ের বিশাল পুকুর (জলাশয়) অবৈধভাবে ভূমিদস্যুরা ভরাট করে চলছে। মঙ্গলবার সকালে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-কর্মকর্তার নেতৃত্বে ওই স্থান থেকে ড্রেজারের পাইপ সরানো হয়। এর সাথে জড়িত চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের চট্টগ্রাম ভূ-কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন। খুব শীঘ্রই ওই স্থানে কাটা তার দিয়ে সীমানা প্রাচীর করবে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ। এদিকে মাসাধিককাল যাবৎ রেলওয়ের ওই বিশাল জলাশয় ভরাট কাজ চললেও এতোদিন পর রেলওয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ঘুম ভেঙ্গেছে। তাদের লোক দেখানো অভিযানকে নাটক বলেছে জনগণ। তারা বলছে, ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে আরো অর্থ বাণিজ্য করার এটাও তাদের একটা কৌশল।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, চাঁদপুরে এত বড় ধরনের রেলওয়ের সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাচ্ছিল তাদের তা জানা ছিলো না। তারা দখলের বিষয়টি জেনে প্রশাসনের সকল বিভাগকে সহযোগিতার জন্য জানিয়েছেন। তবে সর্বপ্রথম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর আইনগত কার্যক্রম শুরু করে। এদিকে রেল কর্মকর্তাদের এই বক্তব্যকে হাস্যকর বলছে শহরবাসী। প্রকাশ্য দিবালোকে একমাস যাবৎ ভরাট কাজ চলছে, অথচ তারা বলছেন, জানেন না। এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল জানান, ভূমিদস্যুরা পরিবেশের বিপর্যয় জেনেও কোর্ট স্টেশনের পূর্ব পাশে ও ট্রাকরোডের পশ্চিম পাশে রেলওয়ের বর্তমান কিলোমিটার নং-১৭৭/৭-৯ বিশাল জলাশয় ভরাট করে চলছিলো। বাকি পুকুরগুলোও ভরাটের প্রস্তুতি চলছিলো। আমি বিষয়টি জানার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়কে অবহিত করি।
গত রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ জাফর আলমের নির্দেশক্রমে অবৈধভাবে রেলওয়ের ভরাটকৃত ভূমির উপর পরিবেশের আইনগত সতর্ক সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। নিয়মানুযায়ী এরপরই ২৭ এপ্রিল চাঁদপুর মডেল থানায় (১৪২৫ নম্বরে) একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ডায়েরিতে দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে রেলওয়ের বিশাল জলাশয় ভরাটে পরিবেশ আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ বিষয়টি উল্লেখ করে সতর্ক করে দেয়া হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, প্রভাবশালী একটি মহল জলাশয়টি চাঁদপুর পৌরসভার মেয়রের নাম ভাঙ্গিয়ে বিশাল আকারের মার্কেট তৈরির পরিকল্পনা করে। তারা নবদিগন্ত নামে একটি সমিতির মাধ্যমে শতাধিক সদস্যদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে। তারা কৃষিলীজ এনেছে বলে দাবি করলেও প্রচার করেছে বাণিজ্যিক লীজের কথা।
রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী ভূ-কর্মকর্তা এম.এ. বারী জানান, অবৈধভাবে দখলের সংবাদ পেয়ে বিভাগীয় ভূ-কর্মকর্তার নেতৃত্বে লাকসাম কানুনগোসহ আমরা চাঁদপুরে আসি। সরজিমনে তদন্ত চলছে ও ড্রেজার পাইপ উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়াও চাঁদপুরের বড় স্টেশন, যমুনা রোড, ক্লাব রোড, শহীদ মিনার এলাকায় রেলওয়ের অবৈধ দখল সম্পত্তিগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর জানান, রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভু-কর্মকর্তা আমাকে সোমবার দিবাগত রাতে টেলিফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। সরকারি সম্পদ রক্ষায় পুলিশ সবসময় সহযোগিতা করে আসছে, এখনও প্রস্তুত রয়েছে।
উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ও সদর উপজেলা এসিল্যান্ড আল-আমিন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও রেলওয়ের কানুনগো (লাকসাম) আব্দুল হালিম, সার্ভেয়ার মোঃ মোরশেদ আলম, চাঁদপুর জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র দাসসহ সঙ্গীয় ফোর্স অভিযানে সহযোগিতা করেন।
চট্টগ্রাম ভূ-কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ভরাটের সংবাদ পেয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে আমরা সরজমিনে তদন্ত করেছি। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবগত করানো হয়েছে। পুকুর চুরি শুনলেও চাঁদপুরে এসে প্রথম দেখলাম কীভাবে রেলওয়ের পুকুর চুরি হয়। রেলওয়ে কাউকে জলাশয় ভরাটের জন্য অনুমতি দেয়নি। তারা যদি কোনো কাগজপত্রের কথা বলে থাকে, সেসব কাগজ তারা নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছে। যারা ভরাট করেছে, তাদের নাম আমরা সংগ্রহ করেছি। তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা করা হবে। ভরাটকৃত ভূমি সংরক্ষণ করার জন্য রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এ সপ্তাহের মধ্যে কাটা তারের প্রাচীর নির্মাণ করবে। এখানে যারা মার্কেট কিংবা ভবন করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে এবং মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, তাদেরকে তাদের টাকা-পয়সা ফেরৎ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাবো।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরে রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে দখল বিষয়ে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় বেশ ক�টি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ রেলওয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রকাশ্যে সড়কের পাশে ড্রেজার দিয়ে ভরাট কার্যক্রম চললেও স্থানীয়ভাবে রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা বিষয়টি বিভাগীয় পর্যায়ে অবগত করেনি। পত্রিকার মাধ্যমেই জানতে পেরেছেন বলে বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান।