চাঁদপুর শহরের হাসপাতাল গুলোয় ঘটছে অহরহ রুগী মৃত্যুর ঘটনা। বিগত কয়েকমাসে চাঁদপুর শহরের সরকারী বে-সরকারী হাসপাতাল গুলোর চিকিৎসা সেবায় ফুটে উঠেছে এমন চিত্র। কোন হাসপাতালেই ভোগান্তি ছাড়া মেলেনা চিকিৎসা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রুগীদেরকে প্রথমেই পড়তে হয় বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালের দালাল চক্রের ভোগান্তির কবলে। এ ছাড়াও রয়েছে সিট পাওয়ার েেত্র ভোগান্তি, ঠিকমত ডাক্তার না পাওয়ার ভোগান্তি, নার্স ও স্টাফদের দুর্ব্যবহারসহ নানা ধরণের ভোগান্তির কবলে পড়তে হয় উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়ার লে আসা জেলার বিভিন্ন উপজেলার অজপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠিকে। এসব রুগীদের অভিযোগ, প্রভাবসালি মহলের পরিচিত কেউ না থাকায় দায়সারাভাবেই করা হয় তাদের চিকিৎসা। অন্যদিকে যাদের এমন পরিচিত কেউ আছে তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় দ্রুত সকল ধরণের সেবা’ই দেওয়া হয়। এসব কারনেই চাঁদপুরের হাসপাতাল গুলোর চিকিৎসার মান নিয়ে রুগীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনাস্থা।
সরকারী হাসপাতালের এমন বেহাল দশার কারণেই অনেক রুগী আরো ভালো সেবা পাবেন এমন আসায় যাচ্ছেন বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে। কিন্তু সেখানকার চিত্রও ভিন্নরকম। ডাক্তারদের গলাকাটা ফি এবং এই টেস্ট সেই টেস্ট করাতে গিয়ে নাজেহাল এসব ভুক্তভোগি রুগীরা। তাদের আসা এর বিনিময়ে হয়তো মিলবে কাঙ্খিত চিকিৎসা, ভালো হয়ে উঠবে রুগী। এতসব ভোগান্তি এবং ব্যাপক অর্থ ব্যায়ের পরেও মিলছে না সঠিক রোগের চিৎিসা। এরপর ডাক্তার ও হাসপাতাল কতৃপ বলছেন এখানে আর সম্ভব নয়, এ রুগীকে ঢাকায় নিতে হবে। আর এ ভাবেই চিকিৎসা খরচ মিটাতে গিয়ে অনেকেই হচ্ছেন সর্বশান্ত।
চাঁদপুর শহরে গড়ে ওঠা ব্যাঙের ছাতার মতো এসব প্রাইভেট হাসপাতালগুলো সরকারের কোনো নিয়ম-নীতি ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কতৃপরে দৃস্টির অগচরেই কিছুদিন পর পর এসব হাসপাতালে ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রুগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এমনই এক ঘটনা ঘটে রোববার চাঁদপুর শহরের তালতলা রোডস্থ হাফিজ টাওয়ারে অবস্থিত কর্ণফুলি হাসপাতালে। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মারা যায় অসহায় গৃহবধূ নাজমা বেগম।
জানা যায়, কর্ণফুলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চাঁদপুর সদরের পূর্বশ্রীরামদী পুরাণ বাজারের জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নাজমা বেগম (৪২) জরায়ু টিউমারের অপারেশনের রুগী ছিলেন। অপারেশনের পর থেকে ডাক্তারদের খামখেয়ালীপনার কারণে ভুল ঔষধ সেবন করে অপারেশনের স্থান চুলকাতে থাকে। তারা রোগীর প্রতি ঠিকমতো যতœবান হননি এবং রোগীর প্রতি ছিলেন উদাসীন। ফলে প্রায় চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় ৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জালড়ে গতকাল রোববার ভোর ৫ টায় মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন গৃহবধু নাজমা বেগম।
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফার সাথে আলাপকালে তিনি জানান যে, গত ২৭ জুন শুক্রবার নাজমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার জরায়ুতে টিউমার ছিলো বলে তাকে হাসপাতালের কর্তব্যররত ডাক্তার হাসানুর রহমান ও সহযোগী ডাক্তার সামছুর নাহার তানিয়াসহ বিকেল ৩ টায় তাকে অপারেশন করায়। সে সময় তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অপরেশনের ৩ দিন পর রবিবার ভোর ৫ টায় নাজমা বেগম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
কর্ণফুলী হাসপাতালের ডাঃ সামছুর নাহার তানিয়ার সাথে রোববার বিকেল ৪ টায় মুঠোফোনে আলাপ করলে তিনি জানান যে, আমি এ রুগী সম্পর্কে কিছুই জানি না। তিনি তার দায়িত্ব সম্পর্কে কথা বললে সাংবাদিকদের এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান। অপরদিকে ডাঃ হাসানুর রহমানের ফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
এদিকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে নাজমা বেগমের স্বামী জাহাঙ্গীর জানান, আমার স্ত্রীকে ২৭ জুন শুক্রবার কর্ণফুলী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করানো হয়। এরপর বিকেলে আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার স্ত্রীকে অপারেশন করানো হয়। এর পর থেকেই তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক ছিলো। অপারেশনের ৩ দিন না যেতেই ডাক্তারদের অবহেলা অযতেœ আমার স্ত্রী মারা যায়। তিনি আরো জানান, স্ত্রীকে পোর্স্টমর্টেমের ভয়ে আমি থানায় জানাইনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চাঁদপুরের ডাক্তারদের চিকিৎসা সেবার এমন দশা দেখেই সামান্য প্রয়োজনেই ঢাকামূখি হচ্ছেন, যারা নূন্যতম অর্থবিত্তের মালিক। অপরদিকে অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠির রুগীরা প্রয়োজনীয় টাকার যোগান দিতে না পেরে সঠিক চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারাচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ঠ কতৃপ যথাযথ পদপে না নিলে এমন ঘটনা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে। দোশিরা শাস্তি না পেয়ে আরো ব্যাপরোয়া হয়ে উঠবে।
শিরোনাম:
বুধবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।