চাঁদপুর: চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের ‘‘রামপুর ছিদ্দিকিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা” এর সম্পত্তি জোরপূর্বক ও সন্ত্রাসী কায়দায় দখল করার উদ্দেশ্যে দেয়াল নির্মাণের চেষ্টা চালিয়েছে মো. মাছুম বিল্লাহ গংরা। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দখলে বাধা দিতে গেলে মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. মফিজুল ইসলামের ছেলে আবু বকর ছিদ্দীক আরাফাত (৩৫) ও তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকী (৩৪) কে মেধম মারধর করে আহত করেন।
শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রাঙ্গনে এই ঘটনা ঘটে।
মাছুম বিল্লাহ গংরা মারধরের পর স্থানীয়দের সহায়তায় আবু বকর ও তানভীর চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এই ঘটনায় রাতেই চাঁদপুর মডেল থানায় রামপুর ফজর আলী মুন্সী বাড়ীর মাছুম বিল্লাহ (৫০), আলী আহাম্মদ (৭০), নুরুল ইসলাম (৭২), শুক্কুর মুন্সী (৫০), আবদুর রব (৫২) কে অভিযুক্ত করে একটি সাধাণ ডায়েরী করে। যার নম্বর: ৭৫৭।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে এবং প্রতিষ্ঠাতা, আহত দুইজন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ১৯৮১ সালে “রামপুর ছিদ্দিকিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা” প্রতিষ্ঠা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. মফিজুল ইসলাম। এরপর ১৯৯৬ সালে এতিমখানা সমাজসেবায় নিবন্ধনের আওতায় আসে। বর্তমানে এই মাদ্রাসায় ৩৭জন এতিম অধ্যয়নরত। দুইজন কুরআনে হাফেজ ও একজন জেনারেল শিক্ষক মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফজর আলী মুন্সী বাড়ীর সামনেই গ্রামের মনোরম পরিবেশে এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্থানীয় লোকজনের সার্বিক সহযোগিতা থাকলেও প্রতিষ্ঠাতার আপন ভাই ও ভাইয়ের ছেলে মাছুম বিল্লাহ গংরা সম্পত্তির লোভে ও নিজেদের ব্যাক্তি স্বার্থে জবর দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালনায় সহযোগিতা না করে মাদ্রাসার পূর্ব ও উত্তর পাশে দু’টি পোল্টি ও মাছের খামার গড়ে তুলেছে। যা পরিবেশের জন্য খুবই হুমকি এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা বসবাসের জন্য খুবই কষ্টদায়ক।
স্থানীয়রা জানান, মাদ্রাসার পূর্ব পাশে মাছুম বিল্লাহ তার পোল্টি ফার্ম করার পরে দেয়াল দিয়েছেন। সেখানে মাদ্রাসার ছাত্রদের নিরাপত্তার স্বার্থে মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ ৩২ হাজার ২শ’ টাকা দিয়েছেন। এরপর মাছুম কাউকে না জানিয়ে করোনাকালীন সময়ে দেয়াল ভেঙে গেট নির্মাণ করেন। উত্তর পাশে জোর জোর পূর্বক সীমানা দিয়েছেন কাউকে না জানিয়ে। এখন আবার এতিম ছাত্রদের চলার রাস্তায় জোর পূর্বক দেয়ার নির্মাণ করার মত ঘৃণ্য কাজ লীপ্ত। এর আগেও মাছুম বিল্লাহ মাদ্রাসা ও এতিম খানার বিষয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করেছেন। সাংবাদিকরা আসলে তাদেরকে ভুল ও মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন। সে নিজেকে সাংবাদিক বলে দাবী করে এলাকায় এই ধরণের বেআইনি কাজ করে বেড়াচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছোট পরিসরে থাকলেও এখন আমাদের আরো বড় করে পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। যার কারণে আমরা নির্মাণ সামগ্রী এনে রেখেছি। এই প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামো গড়ার জন্য বর্তমানে ২১ শতাংশ ভূমি ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়া আছে ১২ শতাংশ। আর বাকী ৯ শতাংশ আমার নিজ ক্রয়কৃত ও পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত। এই ৯ শতাংশও মাদ্রাসার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই সম্পত্তির উপরে বর্তমানে সেমিপাকা একটি অফিস কক্ষ, একটি ৩ কক্ষের মাদ্রাসা, পাকের ঘর, টয়লেট ও গোসল খানা রয়েছে।
তিনি বলেন, মাদ্রাসার সম্পত্তি জোর পূর্বক দখলের চেষ্টা দীর্ঘদিনের। এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে বৈঠক হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বিবাদীগণ ও আমরা সম্পর্কে ভাই ও ভাতিজা হওয়ার কারণে সুষ্ঠু সমাধান করে মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনার জন্য শালিস বৈঠক করার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও তারা আজ পর্যন্ত আসেননি। বরং সমাধানের কথা বলে একের পর বেআইনি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। আমার অনপুস্থিতিতে মাদ্রাসার সম্পত্তি দখল করতে আসলে আমার দুই সন্তান বাধা দেয়। মাছুম নিজে সংঘবদ্ধ হয়ে লোকজনসহ আমার দুই সন্তানকে মারধর করে আহত করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম বলেন, আমি ও আমার পরিবারের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি ধর্মীয় পরিবেশে পরিচালিত হবে। যার কারণে আমি স্থানীয় সকল শিক্ষিত ও গনম্যান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছি। দীর্ঘ বছর সেই উদ্দেশ্যে ধর্র্মীয় প্রচার ও প্রসারে এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানটি অবদান রেখে আসছে। কিন্তু মাছুম বিল্লাহ গংরা মাদ্রাসার ছাত্রদের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়ার পায়তারা করছে এবং আমার পরিবারকে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার জীবনের নিরাপত্তা হুমকিতে ভুগছি। আমি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট এই দূর্বৃত্তদের শাস্তি দাবী করছি।
এই বিষয়ে বক্তব্যের জন্য অভিযুক্ত কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।
চাঁদপুরনিউজ/এমএমএ/