মিজানুর রহমান রানা
চাঁদপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এখনও বহাল তবিয়তে ডা. হামিমা। চলছে রোগীদের নানা দুর্ভোগ।
গত ক’সপ্তাহ ধরে সরজমিনে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা পর্যবেণে দেখা গেছে রোগীদের নানা দুর্ভোগের চিত্র। একটি আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন জেলার ৮টি উপজেলা চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর, মতলব দণি, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ থেকে প্রতিনিয়ত প্রচুর রোগী আসে এ হাসপাতালটিতে। শুধু জেলারই নয়, বরং পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর, রায়পুরসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে দুর্ঘটনা, জরুরি ডেলিভারীর দুঃস্থ, অসহায়, গরিব রোগীরা এ হাসপাতালে এসে চিকিৎসা গ্রহণের চেষ্টা চালায়। কিন্তু এসব রোগী চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার সদর হাসপাতালে এসে বিভ্রমে পড়ে যায়।
সরজমিনে পর্যবেণে দেখা গেছে বর্তমানে বেশিরভাগ সময়ই ডা. হামিমা জরুরি বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। তার সাথে থাকেন ডাক্তার মাহবুব আলী খান। বেশিরভাগ রোগীরই অভিযোগ এই দু’জন ডাক্তার রগচটা এবং রোগী সম্পর্কে উদাসীন থাকেন। এখানে জরুরি কোনো দুর্ঘটনা বা ডেলিভারীর রোগী এলে তারা এদের নিয়ে তেমন একটা কর্ণপাত করেন না। বরং তারা নিজেদের সাথে খোশগল্পে মশগুল থাকেন।
গত সপ্তাহে চাঁদপুরের একটি স্থানীয় পত্রিকার একজন সাংবাদিক তার অসুস্থ নিকটাত্মীয় রোগীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গেলে ডাক্তার হামিমা রোগী দেখেই চটে যান এবং আবোল তাবেল বকতে থাকেন। এই সময় ওই সাংবাদিক ডাক্তার হামিমার অকথ্য গালিগালাজ এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা মুঠোফোনে রেকর্ড করে অন্য সহকর্মীদের শোনান। রেকর্ড অনুযায়ী জানা গেছে, ডাক্তার হামিমা বলছেন, আপনারা আমার কাছে কেনো এসেছেন? আমি কি একলাই এই হাসপাতালটা চালাবো নাকি? এই হাসপাতালে আরো অনেক ডাক্তার থাকার কথা, তারা নিজেরা ডিউটি পালন করছে না, আমি একলাই কি সবার ডিউটি করবো নাকি? এতো রোগী আমার কাছে আসে, আমি তো পাগল হয়ে যাবো।
ওই সাংবাদিক সহকর্মীর কাছে আরো জানা গেছে, তিনি তার আত্মীয় রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানোর কথা বললেই কর্তব্যরত ডাক্তার হামিমা অশালীন ভাষায় কথাবার্তা বলতে থাকেন এবং পরে তিনি এক প্রকার রেগেই তার ক থেকে বের হয়ে চলে যান।
এসব বিষয়ে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার প্রদীপ কুমার দত্তের সাথে ক’বার কথা বলে কোনো লাভ হয়নি। তিনি মুখে এসব সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় সমাধান করবেন বললেও বাস্তবে ঘটে এর উল্টোটি। হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম তার কাছে বার বার তুলে ধরলেও তিনি কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই সময় কাটান অথবা ঢাকা চট্টগ্রামে বিভিন্ন কাজে গিয়ে সময় কাটান।
শুধু তাই নয়, রোগীদের অভিযোগ এই হাসপাতালটিতে চলছে আরো নানা অনিয়ম। রোগীদেরকে ঠিকমতো খাদ্য দেয়া হয় না। হাসপাতালের রান্নাঘরে গিয়ে দেখা গেছে অবাক করার মতো চিত্র। সেখানে ময়লা, নোংরা পরিবেশে হাসপাতালের রোগীদের খাদ্য রান্না করা হয়। এসব চিত্র ক্যামেরায় দৃশ্যবন্দী করতে গেলে সেখানকার কর্তব্যরতরা বাধা দেন, এবং উপহাস করে বলেন এসব ছবি তুলে ঘরে বাঁধিয়ে রাখার জন্য। পত্রিকায় প্রকাশ করে কোনো লাভ হবে না। হাসপাতালের রান্নাঘরে কিছুণ ঘুরে দেখা গেছে, রোগীদের জন্যে তৈরিকৃত মুরগি ফোরে ময়লা, না ধোয়া একটি ওয়ালমেটের ওপর কুটে কুটে রাখা হয়েছে। কিছুণ পর এগুলো না ধুয়েই ডেকচিতে রান্নার জন্য ঢেলে দেয়া হলো। এসব বিষয়ে সেখানকার কর্তব্যরতদের প্রশ্ন করলে তারা দাঁত উচিয়ে হাসতে থাকে। যেনো এটি মজার কোনো বিষয়।
অন্যদিকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের পূর্ব দিকে রান্না ঘরের পাশে যে টয়লেটটি রয়েছে, সেটি যেনো কোনো হাজার বছর আগের প্রাগৈতিহাসিক কালের তৈরি। বাথরুমে মাকড়সার জাল ভর্তি, ময়লা আবর্জনার উৎকট গন্ধে বমি আসার মতো অবস্থা। এসব বিষয় পেরিয়ে পাশের একটি কলাপসিবল গেটের বন্ধ সিঁড়ির কাছে গিয়ে দেখা গেলো এটির অবস্থাও তথৈবচ। এটি দীর্ঘদিন ধরে কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় এ সিঁড়িটি মাকড়সার জালে ভর্তি হয়ে আছে। অথচ এ সিঁড়িটি রোগীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে পশ্চিমের একমাত্র সিঁড়িটিতে ভীড় না হয়ে দুটি সিঁড়ি রোগী ও রোগীদের অভিভাবকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারতো।
অন্যদিকে ডাক্তারদের কগুলো পরিদর্শন কর দেখা যায়, রোগীদের চেয়ে ডাক্তারের চেম্বারে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সংখ্যাই বেশি। ডাক্তাররা বেশিরভাগ রোগীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্যস্ত থাকেন স্যাম্পল ঔষধ কোনটা কোনটা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে নেবেন সেই প্রচেষ্টায়। ওদিকে দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের অবস্থা নাভিশ্বাস। এসব অবস্থা দেখে অনেকেই তখন দ্বারস্থ হন প্রাইভেট হাসপাতাল অথবা ডাক্তারের কাছে। সেখানে গিয়েও লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, কারণ ঢেঁকি তো স্বর্গে গেলেও বিপদ! সেখানেও একই অবস্থা।
শিরোনাম:
সোমবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৮ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।