ফাহিম শাহরিন কৌশিক খান ॥
চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারী জেনারেল হাসপাতালে গায়িনী বিভাগ থেকে সম্প্রতিকালে বেশ কয়েকটি বাচ্চা বিক্রি ও হাসপাতাল থেকে নবজাতক শিশু চুরী করে উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটলেও মূল হোতারা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। শিশু পাচার কারী চক্ররা হাসপাতালের দায়িত্বরত নার্স ও আয়াদের সাথে আতাত সম্পর্ক রেখে দীর্ঘ দিন যাবৎ সদর হাসপাতাল থেকে বাচ্চা চুরী করে নিয়ে যাওয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নবজাতক শিশু বিক্রি ও চুরীর ঘটনা নিয়ে চাঁদপুর নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর থলের বিড়ালের মত এর সাথে জাড়িত হোতাদের নাম বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা যায়, নবজাতক শিশু বিক্রির মূল হোতা চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স বিভা মজুমদার। তার নেতৃত্বে সদর হাসপাতাল থেকে শিশু পাচার কারী চক্ররা বেশ কিছু নবজাতক শিশু গায়িনী বিভাগ থেকে পাচার হওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে। সর্বশেষ গত ১৯ অক্টোবর রবিবার হাজিগঞ্জ ডাইটকারা কাশেমাবাদ গ্রামের সুকুমার চন্দ্র দাসের মেয়ে বিনা রাণী দাস হাসপাতালের ৪র্থ তলায় এসে ভর্তি হয়। এসময় বিনা রাণী দাস প্রশব যন্ত্রনায় ছটপট করলে হাসপাতালের সিনিয়র নার্স বিভা মজুমদার তাকে গায়িনি বিভাগে নিয়ে নিজেই ঘটনার দিন ৬টা ৪০ মিনিটে বাচ্চা প্রশব করান। বিনা রাণী দাসের একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিলে হাসপাতালের নার্স বিভা মজুমদার কৌশল খাটিয়ে তাদেরকে ফুশলিয়ে টাকার লোভ দেখিয়ে বাচ্চাটি জনৈক এক ব্যাক্তির কাছে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করে দেয়। জৎ সামান্না কিছু টাকা দিয়ে ঘটনার দিন রাতেই অসুস্থ অবস্থায় নবজাতক শিশুর জন্ম দাতা বিনা রাণী দাসকে শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। নবজাতক শিশু বিক্রির মূল হোতা বিভা মজুমদার অসুস্থ বিনা রাণী দাসের ভর্তি ফর্মে পলাতক লিখে নিজেই সই দেয়। ঘটনা জানা জানি হলে এই প্রতিবেদন পরদিন সোমবার সকালে হাসপাতালে ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়। এসময় গায়িনী বিভাগের ফাইলে পলাতক লেখা দেখা যায়। ঘটনার পর হাসপাতাল তেকে পালিয়ে যাওয়া অসুস্থ বিনা রাণী দাসকে পরদিন তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ৩য় তলায় ৩০৭ নং কক্ষে গিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখা যায়। বাচ্চা বিক্রির ঘটনার সাথে সদর হাসপাতালের নার্স বিভা মজুমদার অতপত ভাবে জাড়িত রয়েছে বলে বিনা রাণী দাসের স্বজনরা জানায়। পত্রিকায় এই সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে শিশু বিক্রির ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়ে সংশিল্ট প্রশাসনের টনক লরে। গ্রাম গঞ্জ থেকে আশা হতদরিদ্র অসহায় রোগীদের ফুসলিয়ে তাদের কাছ থেকে বাচ্চা ছিনিয়ে নিয়ে এই চক্রটি দীর্ঘ দিন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। গতকাল শনিবার ২৫ অক্টোবর সদর হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বৎসর যাবত চাঁদপুর সদর হাসপাতালে সিনিয়র নার্স বিভা মজুমদার নিজেই টাকার বিনীময় অসংখ্য বাচ্চা প্রশব করেণ। বাচ্চা জোর করে প্রশব করার সময় নিজের ভুলের কারনে টেনে হেসরে বেড় করায় বেশ কিছু নবজাতক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটায়। হাসপাতালের দায়িত্ব রত কয়েকজন আয়া জানায়, গায়িনী বিভাগ থেকে এর পূর্বে বেশ কিছু বাচ্চা বিক্রী হয়েছে। এর সাথে অতপত ভাবে বিভা মজুমদার জড়িত রয়েছে। বাচ্চা বিক্রি করে সে, এই হাসপাতাল থেকে অনেক টাকা অবৈধ ভাবে আয় করেছে। এবেপারে অভিযুক্ত নার্স বিভা মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন। বাচ্চা বিক্রির সাথে কোন সম্পর্ক নেই। ১৯ অক্টোবরের বিনা রাণীর বাচ্চা বিক্রির ঘটনা ও গায়িনী বিভাগ থেকে রোগী পলাতকের ঘটনা জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। কেবা কাহারা বাচ্চা বিক্রি করেছে তা তার জানা নেই। হাসপাতালের গায়িনী বিভাগ থেকে বাচ্চা নিয়ে উধাও ও বিক্রীর ঘটনায় কুনখানু ভাবে প্রতিপক্ষ তদন্ত করলে এর সাথে জাড়িতদের মুখোস উন্মোচিত হবে। সদর হাসপাতালের বাচ্চা বিক্রির মূল হোতা বিভা মজুমদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করলে এর প্রবনতা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।