নিজস্ব প্রতিনিধি
চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী শিা প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এটি শুধু চাঁদপুর জেলাবাসীর জন্যই নয়, এ জেলার আশপাশের জেলাবাসীর জন্যে আশীর্বাদ। বিশেষত, বৃহত্তর কুমিল্লার মধ্যে এ শিা প্রতিষ্ঠানটি একটি বিশাল শিা প্রতিষ্ঠান। সেটি দেশের সর্বোচ্চ যে ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম। শিা ও ঐতিহ্যের দিক দিয়ে সারাদেশের মধ্যে এটি বৃহৎ আকারে জনপ্রিয়তার কোনো অংশেই কমে নয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটি ১৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স ১৩টি মাস্টার্স কোর্স, ডিগ্রি সকল বিভাগ ও ইন্টারমিডিয়েটের সকল বিভাগ চলমান রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের ওপরে। দীর্ঘদিন যাবত এ জেলাবাসীর দাবি, এ প্রতিষ্ঠানটিকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করার। কিন্তু বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটি ৩টি ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস রয়েছে। তাও সমস্যা অন্তহীন। সমস্যা রয়েছে, সমাধানের উপায় খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ সরকারের এমন নিয়ম হয়তো এ সমাধানটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা যায়, চাঁদপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ প্রায় ১০ হাজারের ওপরে ছাত্র-ছাত্রী বর্তমানে অধ্যয়নরত রয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদের জন্যে রয়েছে দুটি ছাত্রাবাস। এর একটি এ প্রতিষ্ঠানটির সম্মুখেই। যার নাম শহীদ জিয়া ছাত্রাবাস। অপরটি রয়েছে কলেজ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরবর্তী চাঁদপুর কুমিল্লা মহাসড়কের পাশেই শেরে বাংলা ছাত্রাবাস নামে। আর ছাত্রীদের জন্যে একটি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। যার নাম ‘শেখ হাসিনা ছাত্রীনিবাস’।
এ ৩টি হোস্টেলেই সমস্যার পাহাড় হয়ে রয়েছে। শহীদ জিয়া ছাত্রাবাসে যারা অবস্থান নিয়ে অধ্যয়নরত রয়েছেন, এ সকল ছাত্ররা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা অন্যতম। রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী বহিরাগতদের আনাগোনা। তারাও প্রায় সময় সেখানে বিভিন্ন কারণে অবস্থান করেন। কিন্তু যে সকল ছাত্ররা এ ছাত্রাবাসে অবস্থান করে অধ্যয়ন করে তারা এদের ভয়ে কোনো কথা বলতে পারেন না। অনেকেেত্র দায়িত্বরত শিকদের কাছে নালিশ দিয়েও লাভ হয়নি। এছাড়াও এ ছাত্রাবাসের প্রায়ই পানির সমস্যা লেগে থাকে। তাছাড়া ৪তলা বিশিষ্ট একটি ভবন, এ ভবনে মাত্র ১০৪জন ছাত্র থাকার সরকারের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দেখা যায়, তার ছেয়েও বেশি ছাত্র এখানে অবস্থান নিয়েছেন।
ছাত্রদের আরেকটি ছাত্রাবাস যেটি কলেজ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত সেটি হচ্ছে শেরেবাংলা ছাত্রাবাস। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওপরে উল্লেখিত একই অভিযোগ। নিরাপত্তাহীনতা, বহিরাগতদের আনাগোনা প্রায়ই পানির সমস্যা আর সবচেয়ে বড় হলো এ ছাত্রাবাসে ভবনটি অনেক পুরোনো। যার কারণে ভবনটি সম্পূর্ণই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রায়ই দেওয়ালের বা ছাদের কংক্রিট খসে ছাত্রদের শরীরের ওপর পড়ে। খাওয়ার রুমটিরও করুণ অবস্থা। ১০৮জন ছাত্র থাকার ব্যবস্থা থাকলেও তার চেয়েও বেশি ছাত্র এখানে থাকছে। কারণ বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে ছাত্রের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে ছাত্রাবাসের থাকার চাহিদা বেশি কিন্তু আবাসন সমস্যা প্রকট। যার কারণে সহপাঠী একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে এখানে অবস্থান নিতে সহযোগিতা করছেন।
এদিকে চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রীদের জন্য একমাত্র ছাত্রীনিবাস শেখ হাসিনা ছাত্রীনিবাস। এটি কলেজের সম্মুখেই। তিনটি হোস্টেলের মধ্যে এখানে সমস্যা যেন পাহাড়সম। কিন্তু আমাদের বর্তমান চলমান সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা সকল েেত্র অসহায়। এটি এই ছাত্রীনিবাসের মাধ্যমেই আরেকবার বুঝা যায়। নিরাপত্তার বেস্টনিতে এ ছাত্রীনিবাসটি থাকলেও ছাত্রীনিবাসের সম্মুখে বখাটে ও বহিরাগতদের আড্ডা থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য, মাঝে মধ্যে সরকারের পুলিশবাহিনী টহল দিলে সেটি তাৎণিক সময়ে ওই হোস্টেল সম্মুখ থেকে আড্ডাবাজরা দূরে সরে যায়। পুলিশ চলে আসলে আবার আড্ডার স্থানে পরিণত হয়। তাছাড়া মেয়েদের ছাত্রীনিবাসে পানি সমস্যা তো রয়েছেই। সবচে বড় সমস্যা হলো এ ছাত্রীনিবাসের একটি মাত্র ৪তলা ভবন। এ ভবনে ১০৪জন ছাত্রী থাকার কথা থাকলেও অবস্থান করছেন ২২০জনের মতো। প্রতিটি সিটে ২জন করে ছাত্রী রয়েছে। কিন্তু সমস্যার কথা প্রতিনিয়ত কর্র্তৃপকে জানালেও কর্তৃপ সরকারের জারি করা পরিপত্রের নিয়মের কারণে অসহায় হয়ে চেয়েই থাকেন। এ যেন কিছু করার নেই! আমাদের দেশের প্রবাদে রয়েছে ‘দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার’ এটিই যেন এ ছাত্রীনিবাসটিতে বিরাজমান। অর্থাৎ নারীদের সমস্যা নিয়েই চলতে হবে, এটিই সত্য।
এ শিা প্রতিষ্ঠানের ৩টি হোস্টেল বিষয়ে কথা হয় চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ভূগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ওয়াহিদুজ্জামানের সাথে। তিনি মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে জানান, শেখ হাসিনা ছাত্রীনিবাস, শহীদ জিয়া ছাত্রাবাস ও শেরেবাংলা ছাত্রাবাস সমস্যা রয়েছে। সমাধান অচিরেই করা হবে। তিনি বলেন, সরকারের বর্তমান নিয়মানুযায়ী এ সকল ছাত্রীনিবাস ও ছাত্রাবাসে নিরাপত্তা প্রহরী, বিদ্যুৎ বিল, বাবুর্চি, মসজিদের ইমাম অর্থাৎ সকল কিছুই ছাত্র ও ছাত্রীদের হোস্টেলের আয় থেকেই ব্যয় করতে হবে। এ নিয়মের কারণেই উন্নয়ন কর্মকান্ড একটু ধীর গতিতেই হয়। কলেজ ফান্ডে অন্য কোনো খাতের টাকা থাকলেও বা তদ্বির করে টাকা আনলেও সরকারের দেওয়া নিয়মের কারণে সমস্যাগুলো সমাধান করতে বিলম্ব হয়। তবে বর্তমানে যে সকল সমস্যার কথা বলা হয়েছে। আসলে এতো সমস্যা নেই। অধিকাংশই সমাধান হয়ে গেছে। তারপরও বিষয়গুলো আমি দেখবো। অপরদিকে শহীদ জিয়া ছাত্রাবাসের দায়িত্বরত শিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মুসলিম সর্দার মিশু’র সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, সমস্যাগুলোর কথা যেভাবে শুনানো হয়েছে আসলে এতো সমস্যা নেই। তবে আবাসন সঙ্কট রয়েছে। এগুলো খুব অচিরেই সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সমস্যা নিয়েই মানুষ। তারপরও সমাধান তো রয়েছে। বর্তমান সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে এ জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চাঁদপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পাহাড় সমান সমস্যা সমাধান করেছেন। ইতিমধ্যে অবকাঠামোর সকল সমাধান সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। আরো ৯ কোটি টাকা রয়েছে। এই তিনটি হোস্টেলে ভবন করা হবে। যার মাধ্যমে অবকাঠামোর সমস্যার সমাধানসহ সকল সমস্যার সমাধান করা হবে।