চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
সকলকে ম্যানেজ করার অসামান্য দক্ষতায় যিনি চাঁদপুরে ছিলেন বহুল পরিচিত, সেই তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্যে আগত দলকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করবেন না-তা কি হয়। তার নাম প্রফেসর মোঃ সাদেকুর রহমান। তিনি চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন পাঁচ বছরেরও অধিক সময় ধরে। এখানে অবস্থানকালীন তার বিরুদ্ধে তাবৎ অভিযোগ সামলানো এবং বদলি ঠেকানোর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ভীষণ পারঙ্গম। হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে তিনি যদি হিসেবের অনিয়ম ম্যানেজ করার কৌশল প্রদর্শন করতে না পারেন, তাহলে অর্জিত বিদ্যার সার্থকতা প্রতিপন্ন হবেই বা কীভাবে। সেজন্যে সম্প্রতি উক্ত কলেজ থেকে তার বদলিতে বিদায়ের প্রাক্কালে তাকে সংবর্ধনার জন্যে সংগৃহীত প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকাও তিনি আয়োজকদের ম্যানেজ করে পকেটস্থ করেন। সম্প্রতি প্রফেসর সাদেকুর রহমান চাকুরি থেকে অবসরগ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে অডিট টিম আসে। এসেই তারা হিসাব-নিকাশে খুঁজে পায় বহুবিধ অনিয়ম। যেহেতু তিনি এ কলেজে নেই, অতএব এ টিমকে ম্যানেজ করারও এখন আর কেউ নেই। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এরই মধ্যে প্রফেসর সাদেকুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগও দাখিল হয় শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অফিসে। সেমতে গতকাল শুক্রবার উক্ত অফিসের অডিট অ্যান্ড ইন্সপেকশন টিম ঢাকা থেকে এসেছে চাঁদপুরে। আজ শনিবার থেকে শুরু হবে প্রফেসর সাদেকুর রহমানের বিরুদ্ধে উক্ত টিমের তদন্ত কার্যক্রম।
এ কথা কি আর গোপন থাকতে পারে প্রফেসর সাদেকুর রহমানের কাছে? তিনি যেভাবেই হোক তা জেনে পিছু লেগেছেন উক্ত টিমের। ঢাকা থেকে তদন্ত টিমের সফরসঙ্গী হয়েই এসেছেন চাঁদপুরে। এ টিম উঠেছে চাঁদপুর সার্কিট হাউজে। তিনিও উঠেছেন সেখানে। গতকাল রাতে সার্কিট হাউজে ফোনে যোগাযোগ করে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। সেলুকাস! সত্যিই বিচিত্র এ দেশ!!
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, প্রফেসর সাদেকুর রহমান চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজে তার দায়িত্ব পালনকালীন শিক্ষক সঙ্কট মোকাবেলায় অতিথি শিক্ষক নিযুক্ত করেন। এদেরকে সম্মানী প্রদানের ক্ষেত্রে বৈধ নিয়ম না মেনে তিনি কলেজের বিবিধ তহবিল (Miscellaneous fund) থেকে যথেচ্ছ খরচ করেন। অতিথি শিক্ষক হিসেবে তিনি বিভিন্ন বেসরকারি কলেজের শিক্ষক, এমনকি চাঁদপুর সরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্সে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও নিযুক্ত করেন। একবার এক শিক্ষকরূপী শিক্ষার্থীকে দিয়ে তিনি পরীক্ষার হলে ডিউটি করাতে গেলে ঘটে বিপত্তি, যা সংবাদ হিসেবেও প্রকাশিত হয়। ব্যক্তিগত অনিয়মের ক্ষেত্রে তার উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো-তিনি কলেজের চতুর্থ তলার একটি কক্ষে থাকতেন, মাঝে মাঝে তার সাথে চাঁদপুর সরকারি কলেজের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক ও তার কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপালও থাকতেন। অনেক সময় খাবার আসতো হোস্টেল থেকে। আর অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করার মহড়ায় তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারী কারো সাথে দুর্ব্যবহারে কক্ষণোই পিছপা হতেন না। অডিট টিমকে মোকাবেলার জন্যে দেড় লাখ টাকার তহবিল তছরূপেও তিনি পিছপা থাকেননি। আর তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানানোর জন্যে সংগৃহীত পঞ্চাশ হাজার টাকাও তার পকেটে না ঢুকে পারেনি। তার উপর্যুপরি লোভেই ঘটেছে অনেক বড় বিপত্তি। সে জন্যে আজকে কলেজে এসেছে তদন্ত টিম। টিমকে ম্যানেজ করতে পারলেই প্রফেসর সাদেকুর রহমানের মানেজরিয়াল ক্যাপাসিটি (ব্যবস্থাপনাগত ক্ষমতা) প্রমাণিত সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।