মিজানুর রহমান রানা
চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের আয়োজনে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবসের আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নূরুল্লাহ নূরী বলেন, তামাক স্বাস্থ্যের জন্য একটি তিকর পদার্থ। এটির নিকোটিন মানবদেহে প্রবেশ করে মানুষের তি ছাড়া কোনো উপকার করে না। ৯০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিার্থী ধূমপান জনিত রোগে আক্রান্ত। তারা মোহের ছলনায় বিভ্রান্ত হচ্ছে মাদকের গোলক ধাঁধায়। অনেক সম্ভাবনার অকাল প্রয়াণ যেমন ঘটে মাদকের জন্য তেমনি স্তিমিত হয়ে যায় কত না প্রাণোচ্ছ্বাস। অসময়ে মৃত্যু কখনই গ্রহণযোগ্য বা কাম্য নয় কারও কাছে। তারপরেও নিত্যদিনই নতুন নতুন ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনই নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অজস্র তরুণের স্বপ্ন। এক নিরীায় দেখা গেছে ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী ধূমপায়ীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ হিসেবে যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা, সেগুলো হলো কৈশোর কিংবা তারুণ্যের অহেতুক খেয়ালিপনা, বন্ধুদের অসৎ প্ররোচনা, পারিবারিক দায়িত্বহীনতা, বাবা-মায়ের সম্পর্কের বিচ্ছেদ, প্রেমের ব্যর্থতা, নায়কোচিত মনোভাব, অতি আধুনিকতার ব্যর্থ চিন্তা, নিঃসঙ্গতা, সৃজনশীলতার বিকাশ মনে করা ইত্যাদি। প্রেমে ব্যর্থ হলেই মাদক গ্রহণ করে জীবনকে দুর্বিষহ করতে হবে এমন মনোভাব কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। যে ছেলেটি কিংবা মেয়েটি জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তার জন্য অশ্র“রোদন থাকতে পারে, স্মৃতিকাতরতা থাকতে পারে, কিন্তু মাদক গ্রহণ করে তাকে ভুলে থাকার ইচ্ছেটার কোনো মানে হয় না। মনে রাখতে হবে যে ভুলে যায়, সে তো ভালোই থাকে। তাই আপনার ভালো থাকতে দোষটি কোথায়? অন্যদিকে কেউ কেউ মাদককে সৃজনশীল কাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করেন, যা হাস্যকর বৈ কিছু নয়। কৈশোরে অজানাকে জানার অহেতুক কৌতূহলে যে নামটি বিষাক্ত অজগর হয়ে গিলে ধরে সবাইকে, তা হলো সিগারেট। নিজেকে জাহির করা, কখনো অভিমান, হতাশা আর নিঃসঙ্গতার সঙ্গী খোঁজার ছলে দুই আঙুলের ফাঁকে আটকে যায় সিগারেট। সহজ নিঃশ্বাসের দরজায় ঢুকিয়ে দেয় বিষাক্ত খিল। তারুণ্যের মুগ্ধ পথচলায় মাদক প্রায়শই রোদেলা দুপুরের আলোতে গোধূলি হয়ে দেখা দেয়। তামাক বা মাদক কখনই মানুষের বন্ধু হতে পারে না। সিগারেটের সঙ্গে কোনো রোমাঞ্চ থাকতে পারে না। শুধু মাদকই একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। যে তরুণ সমাজ আজ মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকছে, তারাই কিন্তু ভবিষ্যতের নেতৃত্ব। ‘তামাকের ওপর কর বাড়াও, রোগ মৃত্যুর হার কমাও’ এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে শনিবার চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস মিলনায়তনে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নূরুল্লাহ নূরী এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. রুস্তম আলী। এ সময় তিনি বলেন, দুনিয়াজুড়ে মাদকবিরোধী প্রচারণা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। মাদক নিয়ে অসংখ্য সভা, মজার বিষয় হলো এই প্রচারণাগুলোতে বহু ধূমপায়ী অংশ নিয়ে থাকে। সেমিনার আর গোলটেবিল বৈঠক হলেও মাদকের ব্যবহার কখনই কমেনি। সিগারেট দিয়েই মূলত মাদকের শুরু হয়। তারপর ক্রমান্বয়ে গাঁজা, চরশ, ফেনসিডিল, হিরোইন, পেড্রোথিন আরও কত কি। সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবা শব্দটি নেশার জগতকে খুব আলোড়িত করেছে। উচ্চ মধ্যবৃত্ত ও ধনী পরিবারের মাদকাসক্ত তরুণদের কাছে ইয়াবা বেশ পরিচিতি পেলেও এর ধ্বংসাত্বক বিষয়ে কতটা ভয়াবহ তা ইতোমধ্যেই অনেকের মাঝে দেখা দিয়েছে। সিগারেটে আসক্ত হলে যে রোগগুলো হতে পারে সেগুলো হলো ফুসফুসে ক্যান্সার, উচ্চরক্ত চাপ, গলব্লাডারের ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সারসহ চুল পড়ে যাওয়া, ঠোঁট ও দাঁতের মাড়ি কালো হওয়া ছাড়াও সিগারেটের আলকাতরা জাতীয় পদার্থ গলা থেকে মুখাবয়বের সৌন্দর্যহানি ঘটায়। ফুসফুস সব সময়ই নির্মল বাতাস নিতে চায়। কিন্ত ধূমপায়ীরা তার বদলে দেয় নিকোটিনের কালো ধোঁয়া। ফুসফুসকে প্রতিনিয়ত নির্মল বাতাস গ্রহণ করতে দিন। সব দ্বিধা, ভুলকে প্রশ্রয় না দিয়ে সিগারেট তথা মাদককে না বলুন। কারণ মাদক কখনই আপনার বন্ধু হতে পারে না। জীবন সুন্দর, তাই সুন্দরকে আলিঙ্গন করুন ভালোবেসে। মাদক থেকে একজন তরুণকে ফেরাতে পারে তার পরিবার। সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের কর্তব্য সঠিকভাবে হওয়া উচিত। গাইডনেস ব্যাপারটি তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাবাকে সিগারেট টানতে দেখে অনেক সন্তান এই বস্তুটির মোহে পড়ে যায়। তাই পিতার দায়িত্ব রয়েছে সন্তানকে সিগারেটে আসক্ত না করার বিষয়ে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসকাবের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জীবন, ডা. বদরুন নাহার চৌধুরী, ডা. আশরাফ আলী প্রমুখ। আলোচনাসভার পূর্বে সকালে তামাক মুক্ত দিবসের র্যালি শহর প্রদণি করে।
শিরোনাম:
বুধবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।