মুহাম্মদ মাসুদ আলম:
চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের আওতাধীন নদী পাড়ের রিংবাঁধগুলোর বহু বছর যাবৎ সংস্কার না করায় ওই এলাকার শত শত একর জমিতে চাষকৃত বোরো চাষ হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়ছে। রিংবাঁধগুলো স্থানীয় কৃষকদের খরচে কোনরকম মেরামত করা হলেও প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা অতিরিক্ত পানির চাপে বহুবার বঁাঁধ ছুটে পানিতে তলিয়ে গেছে ফসল। এ কারণে কৃষকদের লক্ষ লক্ষ টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সরেজমিন ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানাগেছে। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের সেকদী গ্রামের কৃষক খলিল মিজি জানান, বর্ষা মৌসুমে রিংবাধের ভিতরের জমিগুলোতে পানি বেশী থাকায় মাছ চাষ ছাড়া অন্য কোন ফসল হয় না। কিন্তু শুকনো মৌসুমো পূর্ব থেকেই কৃষকরা বোরো-ইরি চাষ করে আসছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা রিং বাঁধা দেওয়ার পর থেকে আর কখনোই কৃষকদের খোঁজ খবর নেয়নি। একই গ্রামের মৃত আঃ ছাত্তারের ছেলে কৃষক সাইদ জানায়, শুধুমাত্র সেকদী গ্রামের কৃষকদের রিংবাঁধের ভিতরে ৫০ একর জমি রয়েছে। এ জমিগুলোতে বোরো চাষের জন্য প্রতিবছর কৃষকরা নিজ উদ্যোগে অর্থ ব্যয় করে রিংবাধ মেরামত ও সংস্কার কাজ করে। কিন্তু বাঁধ দূর্বল হওয়ার কারণে বাঁধ ভেঙ্গে বহুবার ফসল নষ্ট হয়ে যায়। গত ১ সপ্তাহ ধরে রিংবাঁদের পানি বাহির করার জন্য পাম্প মেশিন লাগানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, সেকদি গ্রামের গাজী বাড়ী, মিজি বাড়ী, বড় বাড়ী, তালকুদার বাড়ী ও তপদার বাড়ীসহ মোট ১০টি বাড়ীর বহু সংখ্যক কৃষকের জমি আছে রিংবাঁধের আওতায়। এসব বাড়ীর মধ্যে রহমান মিজি, জহির মিজি, খলিল মিজি, আহসান মিজি, তাজুল ইসলাম ও রৌশন গাজীর জমির পরিমাণই বেশী। খোঁজ নিয়ে ও সেচ প্রকল্প এলাকার বাঁধ নির্মাণকালীন সময়ের প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প শুধু বাংলাদেশ নয় এশিয়ার মধ্যে বড় বাঁধ হিসেবে পরিচিতি। বাংলাদেশ সরকার এসব অঞ্চলের কৃষকদের ফসল উৎপাদনের কথা চিন্তা করে ১৯৭৬-৭৭ সালে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে। এরপর থেকে সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের নানুপুর এলাকার পাম্প হাউজ (সুইজ গেইট) থেকে বেড়িবাঁধের ভিতরে পানি সরবরাহ হয়ে আসছে। চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের আওতাধীন এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য কর্তৃপক্ষ ১০-১২ আরএল (ওয়াটার লেভেল) পানি সরবরাহ করলে রামগঞ্জ, নোয়াখালী, রায়পুর এলাকায় চাহিদামত পানি পৌঁছাতো। কিন্তু ৯ আর এল পানি সরবরাহ করার পরেই চাঁদপুর সদর, ফরিদগঞ্জ ও হাইমচর উপজেলার বিশেষ নি¤œাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যেতো। যার কারণে কৃষকরা আর ফসল করা সম্ভব হতো না। ৮০ দশকের পর এ বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় বহু লেখাÑলেখি ও কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার ৮ কোটি টাকায় ব্যায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার সেকদি, টুগ্গী গ্রামসহ নি¤œাঞ্চলের জমিগুলোর পাশে রিংবাঁধ নির্মাণ করে। বাঁধ নির্মাণের ফলে কয়েক বছর কৃষকরা এর সুবিধা ভোগ করলেও কর্তৃপক্ষ আর কোন সংস্কার কাজে এগিয়ে আসেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের নিকট ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় রিংবাঁধগুলোর স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন কৃষকরা।
শিরোনাম:
শনিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৬ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।