শওকতআলী,
চাঁদপুর সেব প্রকল্পের অধীনে ফরিদগঞ্জ, রায়পুর ও রামগঞ্জে স্থাপিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন শ্রেণির বাসা-বাড়ি, ওয়ার্কশপ বেদখলে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় পাউবোর এসব কোয়ার্টারে বহিরাগত এক শ্রেণির ব্যক্তিরা ভাড়া দিয়ে কিংবা অন্যত্র বিক্রি করে মোটা অংকের বাণিজ্য করে আসছে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উপরন্ত পাউবোর নির্লিপ্ততার সুযোগে বাসাবাড়ি নানা ব্যক্তিতে হাত বদল নিয়ে হচ্ছে ঝগড়া এমনকি মারামারিও।
চাঁদপুর, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, রামগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলার ১শ’ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প যা চাঁদপুর সেচ প্রকল্প নামে পরিচিত। জনবল সংকটের পাশাপাশি অর্থাভাবে এ সেচ প্রকল্পের বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাওয়ায় বেদখল হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটছে। এই প্রকল্পের ভিতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যেসব আবাসিক কোয়ার্টার ও রেস্ট হাউজ রয়েছে এর দুই তৃতীয়াংশ এখন বহিরাগতদের দখলে। প্রকল্পের রায়পুর, রামগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জে স্থাপিত কোয়ার্টারগুলিতে বসবাসকারীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বাসা ভাড়া নেওয়ার বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেই সেখানে বসবাস করে আসছেন। রহস্যজনক কারণে ২০১৫ সালের পর থেকে কোন বাসার নিবাসীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বন্ধ রয়েছে। এর ফলে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। পূর্বে বেড়িবাঁধের সাথে থাকা বিশাল বরোফিট খাল ও জলাশয় লীজ দেয়া হতো। তাও দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে। রামগঞ্জ ও রায়পুরে পাউবোর রেস্ট হাউজ এখন সিএনজি অটোরিক্সা স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। রায়পুর, রামগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জে স্থাপিত পাউবো বিভিন্ন প্রকৃতির প্রায় ৪০টি কোয়ার্টারে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার বহিরাগতরা বসবাস করে আসছেন। এদের একজন কৃষি উপসহকারী আঃ মান্নান রামগঞ্জের ডি টাইপের একটি কোয়ার্টারে দীর্ঘ একযুগ ধরে আছেন। কিভাবে থাকছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি যেহেতু কৃষি বিভাগে চাকুরি করি সেহেতু কৃষি বিভাগ ও পাউবোর মধ্যে বাসা বরাদ্দ নিয়ে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। তারপরও যে সিদ্ধান্ত হয় আমি তা মেনে নিব। একইভাবে ফরিদগঞ্জ উপজেলার আ’লীগের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম কাজলের স্ত্রীর নামে আবেদন করা একটি বাসায় দীর্ঘদিন ধরে আছেন। উপরন্ত তিনি পাউবোর ইউনিট ওয়ার্কশপ দখল করে তাতে এলপি গ্যাসের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম কাজলের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘বাসা ভাড়া আমরা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করছি। আর ওয়ার্কশপটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়েছিল এবং অন্যরা দখল করে নিতে চেয়েছিল। আমি এটিকে সংস্কার করে ব্যবহার করছি। তাছাড়া এটি আমাকে বরাদ্দ দেয়ার জন্য মাননীয় এমপি মহোদয় একটি ডিও লেটার দিয়েছেন। তারপরও পানি উন্নয়ন বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নেয় তাতে কোন আপত্তি থাকবে না।’ চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান লীজ বন্ধ থাকার ফলে নানা সমস্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে বিভিন্ন কোয়ার্টার খালি পড়ে থাকলে কোয়ার্টারের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। আবার কোন প্রকার রাজস্ব আদায় ছাড়া কোয়ার্টারগুলি বেদখলে থাকা এটাও ঠিক নয়। কিভাবে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় এনে সরকারের রাজস্ব আদায় করা যায় তার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।