প্রতিনিধি
চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর উপর প্রায় একই মাপের তিনটি সেতু। বিএনপি সরকারের সময় চালু করা হয়েছিল এই তিনটি সেতুর টোল আদায়। গত মহাজোট সরকারের সময় দুটি সেতুর টোল আদায় বন্ধ করা হয়। কিন্তু গত ৯ বছর যাবৎ চলছে ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের চাঁদপুর অংশে অবস্থিত চাঁদপুর সেতুর টোল আদায়। এবারও এই সেতুর টোল আদায়ের জন্য ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
এ টোল আদায় নিয়ে ওই সেতু পারাপার হতে রাজস্ব আয়ের অজুহাতে চাঁদপুরের সওজ কর্তৃপক্ষের দ্বৈত নীতি নিয়ে পাশাপাশি চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী এই তিন জেলার বিশাল জনগোষ্ঠী বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাফ জবাব, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা না আসলে এই টোল আদায় বন্ধ করার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই।
এ চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধের জন্য প্রায় সবাই একমত। তবে বাধা হয়ে আছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা না পাওয়া। যে কারণে আবারও ওই সেতুর টোল আদায়ের জন্য ইজারা দেয়ার পাঁয়তারা চলছে।
এবার এই সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবিতে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া দশম জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরুর প্রথম দিকেই জাতীয় সংসদে উক্ত বিষয়টি উত্থাপন করে বক্তব্য রাখেন। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপ চেয়ে সরকার দলীয় এ সাংসদ ফরিদগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবি হিসেবে উক্ত টোল বন্ধের দাবিতে জরুরি ব্যবস্থা নিতে দাবি করেছেন।
এর আগে একই দাবিতে গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ফরিদগঞ্জের বিএনপির দলীয় সাংসদ লায়ন হারুনুর রশিদও উক্ত সেতুর টোল বন্ধের জন্য যোগাযোগ মন্ত্রী বরাবরে ডিও লেটার দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে বিএনপির সরকারের সময় ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যে ও ৭ দশমিক ৭০ মিটার প্রস্থের এ সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উদ্বোধন করার পর শুরু হয় টোল আদায়। আর এর ধারাবাহিকতা হিসেবে এ টোল আদায়ের প্রথা চালু রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও। তিন জেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর এ সেতু পারাপারে যানবাহনের টোল দিতে হয়। আর এ টোল আদায়ের অজুহাতে বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বিএনপি সরকারের সময় চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর উপর প্রায় একই দৈর্ঘ্যরে তিনটি সেতু চালু হওয়ার পর টোল আদায় শুরু হয়। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চাঁদপুরের নতুনবাজার-পুরাণবাজার ও হাজীগঞ্জে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সেতুর টোল আদায় বন্ধ করা হয়। শুধুমাত্র ফরিদগঞ্জ-চাঁদপুর-রায়পুর যাতায়াতের ক্ষেত্রে চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধ না করায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের দ্বৈত নীতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে।
উক্ত সেতুর টোল আদায় বন্ধের জন্য ফরিদগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে জোরালো দাবি উঠলেও গত ৯ বছরে উক্ত সেতুর টোল আদায় বন্ধ করা হচ্ছে না। যে কারণে ফরিদগঞ্জবাসাীর প্রাণের দাবিটি বারবার উপেক্ষিত হওয়ায় ভুক্তভোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। অথচ প্রতিনিয়ত চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার বিশাল জনগোষ্ঠী উক্ত সেতু পারাপার হতে গিয়ে তাদের ব্যবহার করা যানবাহন থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে জনসাধারণ বিভিন্ন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবিতে ইতিপূর্বে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের পক্ষ থেকেও সরকারের কাছ স্মারকলিপি প্রদান ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। পরে বিভিন্ন সময়ে ফরিদগঞ্জে আসা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের হাতেও আনুষ্ঠানিকভাবে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিলো।
বাস মালিক সমিতির ফরিদগঞ্জের প্রতিনিধি পৌর মেয়র মনজিলের ভাই আবদুর রাজ্জাক রাজার নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন স্মারকলিপি সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একই দাবিতে সর্বদলীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে খোদ চাঁদপুর সেতুর উপর মানববন্ধন করা হয়েছিলো। উক্ত দাবি বাস্তবায়নের জন্য ফরিদগঞ্জের বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যন ওয়াহিদুর রহমান রানা, আবদুর রাজ্জাক রাজা, সাংবাদিক আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও ফরিদগঞ্জ সাংবাদিক ক্লাবের সভাপতি এম কে মানিক পাঠানের স্বাক্ষর করা একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিলো চাঁদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেনের হাতে। এই টোল নিয়ে বিভিন্ন সময় স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা ছাড়াও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে মানুষের দুর্ভোগের চিত্রও প্রচার করা হয়েছে।
ফরিদগঞ্জের বাস মালিক সমিতির প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাক রাজা বলেন, চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধ করতে আমরা পরিবহনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ক�জন মন্ত্রী ছাড়াও ফরিদগঞ্জের দু� কৃতী সন্তান ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া ও জেলা পরিষদের প্রশাসক লেঃ কর্নেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরীর হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন দেয়া ছাড়াও জনস্বার্থে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছি। বাসদ নেতা বাদশা জানান, উক্ত সেতুর টোল আদায় বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বাসদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন করা ছাড়াও জনস্বার্থে এ আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।
( লেখাটি পড়া হয়েছে ৬ বার )