চাঁদপুর সদর উপজেলা বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে চাঞ্চল্যকর কলমতর গাজীর হত্যা মামলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন হত্যার সাথে জড়িত দু’ ঘাতক।
শুক্রবার বিকেলে চাঁদপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিমা শারমিনের আদালতে তারা এ জবানবন্দী দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মানিক আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এ সময় দু’ ঘাতক অকপটে স্বীকার করেন যে তারা নিজেরাই কলমতর গাজীকে হত্যা করেছেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার ঘাতক কবির গাজী ও নিহতের স্ত্রী শিল্পী বেগমকে অতিরিক্ত পুলিশ পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম, মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব মোরশেদ, ওসি (তদন্ত) শাহালম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মানিক ও এসআই গৌতম চন্দ্র দে তাদের দু’ জনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা অনেক কিছু স্বীকার করে। এর সূত্র ধরেই গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষ্ণুপুর গাজী বাড়ির কলমতর গাজীর বসতঘরের সামনে ঝোপঝাড়ের মাটির নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের ভাই লিটন গাজী বাদী হয়ে গত ১১ জুলাই রাতে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা করে যার নং- ১৫ ধারা ৩০২/২০১/৩৪। মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন লিটন গাজী পেশায় একজন কৃষক। তার বড় ভাই কলমতর গাজী (৪২)৭ বছর যাবৎ সৌদিতে চাকুরি করতো। ৩ মাস আগে সৌদি আরব থেকে সে একেবারে দেশে চলে আসে। আমার ভাই কলমতর গাজীর শ্বশুরের কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় ভাবী এক ছেলে জিহাদ, মেয়ে বৃষ্টি আক্তারকে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করতেন। গত বৃহস্পতিবার এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সামনে মৃত কলমতর গাজীর লাশ উঠানো হয় ময়না তদন্তের জন্য। লিটন গাজী তার এজাহারে আরো উল্লেখ করেন তার ভাই বিদেশ থাকার সময় কবির গাজীর সাথে তার ভাবী শিল্পীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এ পরকীয়া প্রেমের কারণেই গত ৭ জুলাই রাতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে তার বসতঘরে পূর্ব পাশের রুমে তার বুকের উপর ছুরি দিয়ে ডান পাশে পেটে আঘাত করে এবং গলায় শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করে। আসামী কবির গাজী, শিল্পী বেগমসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনের সহায়তায় লাশটি মাটির নিচে পুঁতে রাখে।
উল্লেখ্য, পরকীয়া প্রেমকে সফল করে তোলার জন্য নিজ হাতে খুন করে শিল্পী তার স্বামী কলমতর গাজীকে। তার স্বপ্ন ছিলো তার স্বামীকে মেরে চাঁদপুর সরকারি কলেজ পড়ুয়া কবিরকে নিয়ে ঘর সংসার করবে। তিনি গত ৭ বছর সৌদি আরব থেকে কলমতরের পাঠানো টাকা সব নিজের একাউন্টে জমা রাখতেন।
মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাবুব মোর্শেদ দুপুরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জানান, নিহতের স্ত্রী শিল্পী বেগম খুনের ঘটনা স্বীকার করেছেন। হত্যার সাথে জড়িত মূল ঘাতক কবির গাজীর সাথে আলাপকালে সে সাংবাদিকদের জানায়, সে চাঁদপুর সরকারি কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে পড়াশোনা করে। শিল্পী বেগম ১ মাস আগে তাকে প্রস্তাব দেয় কলমতর গাজীকে মেরে ফেলতে। তাহলেই সে কবিরকে বিয়ে করবে আর এ কারণেই তারা দু’ জনে মিলে এ জঘন্যতম কাজটি করে। তবে হত্যার সাথে জড়িত দু’ জনকেই স্বাভাবিক দেখা গেছে।