মুক্তিযুদ্ধের ৮নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার সদ্যপ্রয়াত লেঃ কর্নেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ চান্দ্রা-সেকদী-টুবগী সড়কের বেহাল দশা চরমে। সড়কের দুপাশে মাছের ঝিল থাকায় কয়েক বছর পূর্বে যেই সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করতো সেই সড়ক দিয়ে এখন হাঁটাও মুশকিল। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সড়কটি ১৮ ফুট চওড়া করার জন্যে প্রস্তাবনা তৈরি করলেও জেলা পরিষদের একটি ব্রিজ নিয়ে মামলা জটিলতায় সবকিছুই থমকে গেছে। ফলে উপজেলার সবচেয়ে বৃহৎ বাজার চান্দ্রাবাজার ও ইউনিয়নের সাথে ওই এলাকার তিনটি ওয়ার্ডের জনগণের চলাচল প্রায় বিচ্ছিন্ন। বাধ্য হয়ে লোকজনকে অনেক পথ ঘুরে ইউনিয়ন পরিষদ, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং হাট-বাজারে আসতে হয়।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে চান্দ্রাবাজার এ ইউনিয়নেই অবস্থিত। ডাকাতিয়া নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই বাজারটি ব্যবসা-বাণিজ্যে জমজমাট হিসেবে জেলার সকলের কাছে পরিচিত। কিন্তু চান্দ্রা-সেকদী-টুবগী সড়ক পরিকল্পিতভাবে সংস্কার না হওয়ায় প্রতি মাসে বাজারের ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ ইউনিয়নের মানুষের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হতো এই বাজারটিকে কেন্দ্র করে। কিন্তু একটি সড়কের কারণে আজ এই ইউনিয়নের বাসিন্দারাই ছুটে চলছে অন্যখানে, অন্য বাজারে। ইউনিয়নের ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডকে ডাকাতিয়া নদী আলাদা করেছে বহু আগেই। প্রাচীনকাল থেকেই বড় বড় নৌকা আর জাহাজের মাধ্যমেই ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান ছিলো। সময়ের পরিক্রমায় ডাকাতিয়া নদীগুলো চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় নৌকা চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আধুনিকতায় যুক্ত হয়ে দুই যুগ আগেই ইউনিয়নটি একত্রিত করার জন্যে সেকদী-লোহাগড় ও সেকদী-আমতলী ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এই সড়কটি হওয়ার পরে সেকদী, পালতালুক, তরজিরান্তি গ্রামের শত শত মানুষের দৈনন্দিন চলাচলের পাশাপাশি ইউনিয়নের এই বাজারটির সাথে জেলার বিভিন্ন বাজার ও উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়িক কার্যক্রম জোরদার হয়ে উঠে। কিন্তু টুবগী থেকে শুরু হওয়া রাস্তাটি চান্দ্রা ব্রিজে এসে শেষ হয়েছে। রাস্তার দুপাশেই পানি থাকে বছরজুড়ে। যেখানে মাছের চাষ হয়।
ব্যবসায়ী ও এলাকার লোকজনের সুবিধার্থে এলজিইডি, জেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ বিভিন্ন সময়ে সড়কটি সংস্কার এবং ব্রিজ নির্মাণ করলেও পরিকল্পিতভাবে না হওয়ায় নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যেই তা ভেঙ্গে যায়। যেই সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচল করতো, সেই সড়কটির দুপাশে মাছের চাষ হওয়ায় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে সরু হয়ে গেছে।
চান্দ্রাবাজারের ব্যবসায়ী হাসেম কাজী বলেন, এক সময় এই অঞ্চলের মানুষের কাছে মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় ওই অঞ্চলের মানুষ চলে যাচ্ছে অন্য বাজারে। নূরে আলম মাসুদ মিজি নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, সড়কটির কারণে চান্দ্রাবাজার ব্যবসায়ীরা প্রতি মাসে কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত একটি ব্রিজ নিয়ে মামলা হওয়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক জুবায়ের হোসেন বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি সেকদীতে অবস্থিত হওয়ায় সড়কের কারণে পূর্বাঞ্চলের মানুষগুলো চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুর রহমান পাটওয়ারী জানান, সড়কটির দুপাশের ঝিলের ইজারাদারদের সাথে কথা বলেছি। ইউনিয়ন পরিষদ ও ঝিলের ইজারাদারদের সহযোগিতায় ১৮ ফুট চওড়া সড়ক নির্মাণের জন্যে কাজ শুরু হয়েছে। সড়কের দুপাশে গাইডওয়াল নির্মাণ ও মাটি ফেলা হবে।
উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আইয়ুব খান বলেন, এলজিইডি চান্দ্রা-সেকদী-টুবগী সড়কটিকে ১৮ ফুট চওড়া সড়ক হিসেবে নির্মাণের জন্যে প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। কিন্তু জেলা পরিষদের একটি ব্রিজের মামলা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।