চিকিৎসার নামে তিয়ানশি কোম্পানির লাগামহীন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সকল প্রকার রোগ নিরাময়ের মিথ্যা প্রলোভন দেন তারা। চীনভিত্তিক তিয়ানশি কোম্পানির ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে শারীরিক জটিলতা বেড়েছে। অথচ ফুড সাপ্লিমেন্টারির নামে চিকিৎসায় ব্যবহৃত এসব সামগ্রীর নেই সরকারের ওষুধ প্রশাসন, খাদ্য বিভাগ কিংবা বিএসটিআইয়ের কোনো প্রকার অনুমোদন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ওষুধ ও ফুড সাপ্লিমেন্টারি ব্যবহারে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদিত চিকিৎসক কর্তৃক ব্যবস্থাপত্র প্রদানের আইন রয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য ঝুঁকির চিন্তা না করে মনগড়া ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন তিয়ানশির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন সব অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তি যাদের চিকিৎসাসংক্রান্ত কোনো ধারণাই নেই। এভাবে দিনের পর দিন ভুয়া চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত বেআইনি ফুড সাপ্লিমেন্টারি চড়া দামে কিনে ব্যবহার করে শত শত মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতির মুখে পড়লেও প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকায় চরম ক্ষুব্ধ সাধারণ জনগণ।
মসজিদের ইমাম ও জামিয়া ইমদাদিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আনোয়ার শাহ ৮ হাজার টাকা ব্যয়ে রক্তের উচ্চ চাপরোধক চিরুনি কেনেন। কিন্তু কোনো উপকারই পাননি অভিযোগ করেন। একইভাবে চাদর কিনে পরে তা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছেন কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া কাঞ্চন। পৌরসভার দুই নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জালাল উদ্দিন, কৃষি কর্মকর্তা খোরশেদ আলম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাদল রহমান, আইনজীবী সাইফুল হক, গৃহিণী মাহফুজা হক, শোলাকিয়া এলাকার বৃদ্ধা নীলুফা আক্তার, কাদিরজঙ্গল গ্রামের মিয়া বকস্, বর্শিকুড়া গ্রামের সঞ্জিত চন্দ্র শীল এবং নীলগঞ্জ গ্রামের কিতাব আলী এরা প্রত্যেকেই ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদরোগসহ অন্যান্য জটিল রোগে চড়া দামে তিয়ানশির ওষুধ সেবন করে ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
জেলা শহরে প্রাণকেন্দ্রে শহীদি মসজিদের ঠিক পেছনেই একটি একতলা বিশাল বাড়িতে অবস্থিত তিয়ানশির কার্যালয়। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি এখানে চলে রোগী দেখা, ওষুধ বিক্রি, সদস্যদের মোটিভেশনসহ যাবতীয় কার্যক্রম। জেলায় সংগঠনের সার্বিক দায়িত্ব পরিচালনা করছেন সেভেন স্টার র্যাংকধারী মো. জামাল উদ্দিন। রোগী দেখা, রোগ নির্ণয় ও ব্যবস্থাপত্র প্রদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম তিনিই করে থাকেন। মো. জামাল উদ্দিনের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার পানুর গ্রামে।
জানতে চাইলে জামাল উদ্দিন বলেন, আমি কোম্পানির নিজস্ব পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় করে থাকি, যা শতভাগ নির্ভুল। এখানে চিকিৎসা গ্রহণ করে সকল রোগের নিরাময় সম্ভব এবং এখানকার ওষুধের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
এ ব্যাপরে ওষুধ প্রশাসন ময়মনসিংহ অঞ্চলের ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক মো. ওয়াহেদুর রহমান বলেন, তিয়ানশির এ ধরনের ওষুধ সামগ্রী বিক্রির কোনো অনুমতি নেই। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রতারণার মাধ্যমেই এ কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) কিশোরগঞ্জ জেলার পরিদর্শক পূজন কর্মকার এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল মালেক তিয়ানশির পণ্যে কোনো প্রকার অনুমোদন না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. হোসাইন সারোয়ার বলেন, চিকিৎসার নামে অবাধে ওষুধ ও ফুড সাপ্লিমেন্টারির অবাধ ব্যবহারে মানুষের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় ব্যতিরেকে এবং উপযুক্ত চিকিৎসক ছাড়া ব্যবস্থাপত্র প্রদান সম্পূর্ণরূপে বেআইনি এবং প্রতারণামূলক। এ ধরনের বেআইনি কার্যক্রম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১২ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।