হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ১৫ মার্চ। এবার এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে যে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক। এই তিন প্রার্থী ইতিমধ্যে ভোটযুদ্ধে জেতার জন্য উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন। এই তিন প্রার্থী হচ্ছেন অধ্যাপক আঃ রশিদ মজুমদার, অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার ও অধ্যক্ষ ড. আলমগীর কবির পাটোয়ারী। এই তিন শিক্ষকের মধ্যে কে জয়ের মালা পরবেন তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল হলেও ভোটাররা দলের অনুসারী প্রার্থীর প্রতি সবসময় দুর্বল থাকেন বলে চাঁদপুর নিউজের নিকট একাধিক ভোটার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের সুযোগ না থাকলেও প্রার্থীরা কোনো না কোনো দলের পরিচয়েই ভোট চেয়ে থাকেন। আর রাজনৈতিক দলগুলোও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করে থাকে। হাজীগঞ্জ উপজেলার বেলায়ও তাই। এ উপজেলায় ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৩শ ২৩ জন। কেন্দ্র ৭৯টি। যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৩৮টি।
চেয়ারম্যান পদে অধ্যাপক আলহাজ্ব আঃ রশিদ মজুমদার আনারস, কেন্দ্রীয় ওলামাদলের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার দোয়াত কলম ও হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. আলমগীর কবির পাটোয়ারী কাপ-পিরিচ প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
এই তিন প্রার্থীর কেহ সাবেক এবং কেহ বর্তমানেও শিক্ষকতা পেশায় জড়িয়ে আছেন। অধ্যাপক আঃ রশিদ মজুমদার হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে দীর্ঘ ২৭ বছর শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর শিক্ষকতা জীবন তিনি বেশ সুনামের সাথে পার করেছেন। অগণিত ছাত্র-ছাত্রীকে তিনি শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেছেন। যারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ও দেশ-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরি করছেন। ৩য় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী শিক্ষকতা পেশা ত্যাগ করে তাঁকে নির্বাচনে আসতে হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন করেছেন চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে।
অপর প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদার উপজেলার কালচোঁ ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী সৈয়দপুর তালুকদার বাড়ির সন্তান। তার চাচা জুনাব আলী তালুকদার রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। আর তিনি নিজে স্থানীয় রামপুর আল বান্না স্কুল ও ক্যাডেট মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা। পিতার নামে আঃ হালিম তালুকদার ফাউন্ডেশন গঠন করে প্রতি বছর শতাধিক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে থাকেন। ঢাকা শ্যামলী এলাকায় নিজের রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেছেন। এক সময় জড়িত ছিলেন শিক্ষকতা পেশায়। ব্যবসা ও পারিপার্শ্বিকতার কারণে সম্প্রতি শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দেন।
আরেক প্রার্থী অধ্যক্ষ আলমগীর কবির পাটোয়ারী ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন কয়েক বছর আগে। হাজীগঞ্জ মডেল কলেজে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বে আছেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে হাজীগঞ্জ মডেল কলেজটি এখন এ এলাকার সেরা বিদ্যাপীঠগুলোর একটি। পারিবারিক কারণে হয়েছেন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের মোতাওয়াল্লী।
নির্বাচনী মাঠে ড. আলমগীর কবির পাটোয়ারী এখন পুরোপুরি ব্যস্ত। একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছেন বলে দাবি করলেও ওই দলটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ তা অস্বীকার করছেন। তবে তাঁকে সাবেক এমপি এমএ মতিনের অনুসারী বিএনপির নেতা বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে তিনি নিজের একান্ত লোকজন নিয়ে দিন-রাত গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
এদিকে অধিকাংশ ভোটার মনে করছেন, দেশের মানুষ দলের প্রার্থীদের ভোট দিতে অভ্যন্ত। দেশে এখনো প্রধান রাজনৈতিক দল বলতে বিএনপি আর আওয়ামী লীগ। এই দু দলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রার্থীদেরকে ভোট দিয়ে থাকেন আমজনতা। দেশ সেরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মতো বড় মাপের ব্যক্তিরা দলের বাইরে গিয়ে ও নিজেরা দল গঠন করার পরেও রাজনৈতিক মাঠ গরম করতে পারেননি। এ থেকে বুঝা যায় হাজীগঞ্জে কে কোথায় শিক্ষকতা করছেন তা না ভেবে দলের অনুসারী প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেয়া হবে বলে অনেক ভোটার ধারণা করছেন।