চোরের বিচার কাজ যখন চোরই সমাধানে এগিয়ে আসে তখন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার নির্বাক দর্শকের মতো ওই দৃশ্য উপভোগ করতে হয়। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুরের শাহরাস্তি পৌর শহরের ১নং ওয়াডের পশ্চিম উপলতা ফকির গাজী বাড়িতে।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ওই বাড়ির প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের ঘরে ঘটনার দিন রাত অনুমান ৩টার সময় সিঁদ কেটে চোর ভেতরে প্রবেশ করে। চোরের দল বসত ঘরের পশ্চিম-দক্ষিণাংশে সিঁদ কেটে প্রবেশ করে ভেতরে থাকা একটি ১৬ ইঞ্চি ল্যাবটব (এসআর) ও একটি বিদেশী টর্চ লাইট নিয়ে যায়। চোর ঘরের ভেতর হাটা-চলার সময় ঘরের ভেতরে থানা হাঁস-মুরগি আওয়াজ করতে থাকায় ঘরের পূর্ব পাশের্^র কক্ষে অবস্থানরত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফিরোজা বেগমের বড় বোন রেজিয়া বেগম শুনতে পায় এবং ঘুম থেকে উঠে আসে। ওই সময় সে ঘরের ভেতর লোকজনের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে ঘরের অন্যান্য সদস্যদের ডাক-চিৎকার দিতে থাকে। ঘরের সদস্যরা কেউ ঘুম থেকে না উঠায় সে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং সামনে এসে চোরকে ধরার চেষ্টা করে। সামনে এসে সে চোরদের একজনকে চিনতে পারে এবং তার নাম ধরে চিৎকার করতে থাকে। পরে ঘরের সদস্যদের নিকট গিয়ে দেখতে পায় তারা গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছে। এরই মধ্যে চোর পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এ বিষয়ে আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফিরোজা বেগম জানান, শুধু এই বার নয় একই ঘরে এ যাবত ৪ বার চুরির ঘটনা ঘটে। প্রতিবার একই ব্যক্তির দ্বারা চুরি সংঘঠিত হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বার বার সে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। তিনি ঘুম থেকে উঠে বোনের কাছ থেকে জানতে পারেন চোর একই বাড়ির নাজির আহমেদ’র ছেলে স্বপন হোসেন (২৪)। তাদের ডাক-চিৎকারে বাড়ির অন্যান্যরা বিষয়টি ঘটনাস্থলে এসে অবহিত হন। পরদিন চোরকে সকালে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে প্রথমে স্বীকার না করলেও পড়ে সকলে মিলে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে চুরির কথা স্বীকার করে এবং তার সাথের আরও একজন একই এলাকার ডিব্বা’র ছেলে রিপনের নাম স্বীকার করে। স্থানীয় লোকজন তাদের কর্মকান্ডে উত্তেজিত হয়ে মারধর করলে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জনতা কর্তৃক ধৃত রিপনকে থানায় নিয়ে আসে। রিপনকে থানায় নিয়ে আসার পর স্থানীয় কতেক লোক আমাদের উপর উল্টো অপবাদ ও হয়রানি করতে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম ভিংরা গ্রামের এক সময়ের চিহ্নিত চোর বাবুল মিয়া ও মেহের ষ্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী দুলাল সহ কয়েকজন চোরের পক্ষ নিয়ে আমাদের উপর নানা ডিক্রি দিতে থাকে। তারা আমাদের থানা পুলিশের ভয় দেখাতে থাকে এবং আটককৃত চোরকে ছাড়িয়ে আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। বাবুল আমাদের বিরুদ্ধে চোরের বাবা মামলা করেছে মর্মে ভয়-ভীতি প্রদর্শণ করে থানা হতে নাম কাটিয়ে আনার জন্য ৪০ হাজার টাকা দেয়ার জন্য চাপ দেয়। থানায় টাকা না দিলে আমরা চোরকে আটকানোর অপরাধে আমাদের মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে বলেও জানায়।
এ বিষয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সমির জানান, স্থানীয়রা চোর আটক করেছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পাইনি। পরে লোকজনের সংবাদের ভিত্তিতে একেক বার একেক স্থানে চোরকে আটকে মারধর করা হচ্ছে মর্মে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে থাকে। দীর্ঘ সময় পুলিশ বিভিন্ন অঞ্চলে খোঁজ করে অবশেষে মেহের ষ্টেশন এলাকা থেকে আমরা আটককৃত চোর রিপনকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসি। থানায় রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, যারা তাকে চোর হিসেবে আটক করে নির্মম ভাবে মারধর করেছে তাদের সাথে সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছে। ওই সূত্র ধরে তারা তাকে মারতে থাকায় জীবনের তাগিদে চুরির কথা স্বীকার করে। পরে যারা তাকে আটক করেছে তাদের থানায় এসে সঠিক বিষয়টি অবগত করতে বলেছি অদ্যাবধি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার থানায় আসেনি এবং পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা ওই পরিবারের কাছ থেকে টাকা দাবি করেছে এ বিষয়ে আমি অবগত নই। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার মামলা না করায় ও আটককৃত ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে এলাকার লোকজনের মতে চোর সাব্যস্থ হওয়ায় আমরা অন্য চুরির মামলায় তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করি। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার এখনো কোন আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে থানায় এসে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর সাথে পরামর্শ করে সহায়তা নিতে পারবে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, চোরকে চুরির উপযুক্ত শাস্তি না দিয়ে এলাকার কতেক প্রভাবশালী অর্থের বিনিময়ে চোরের পক্ষ নেয়ায় বিষয়টি সকলের নিকট চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার যদি সঠিক বিচার না পায় তাহলে এভাবেই সমাজে একের পর এক অপরাধ করে অপরাধিরা পার পেয়ে যাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও এলাকাবাসী।
শিরোনাম:
শনিবার , ২৪ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।