কবির হোসেন মিজি
চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অঙ্গীকারের পাদদেশে ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। এবারের বিজয় মেলা প্রথম দিন থেকেই জমে উঠতে শুরু করেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ডিসেম্বরের এক তারিখ মেলার শুভ সূচনা লগ্নে অর্থাৎ প্রথম দিন থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের কম বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ওই দিন দুপুর থেকেই চাঁদপুর শহর এবং শহরের আশপাশের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ ছোট বড় অনেক মানুষের আনাগোনা হতে থাকে। আজ মেলার পঞ্চম দিন অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিদিনই বিকেল থেকে রাত ১০-১১ পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজনের আনাগোনা লেগেই আছে। গত কয়েক বছরের বিজয় মেলায় প্রথম দিন থেকে শুরু করে মেলার আট দশ দিন যাবৎ দর্শনার্থীদের তেমন কোনো ভিড় হতো না। দশ পনের দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আস্তে আস্তে মেলা মাঠে দর্শনার্থীদের কমবেশি ভিড় লক্ষ্য করা যেতো। তবে সপ্তাহের শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে প্রতি বছরই মেলা মাঠে দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড় হয়ে থাকতো। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন তারা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মেলা দেখতে আসেন। সে হিসেবে তুলনামূলকভাবে এবারের মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু থেকেই জমে উঠতে শুরু করেছে।
গত ক’ দিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দর্শনার্থীদের এমনই দৃশ্য অবলোকন করা যায়। অনেক দর্শনার্থীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী এ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলাটি হচ্ছে আমাদের চাঁদপুরবাসীর প্রাণের মিলন মেলা। প্রতি বছরই ভ্রমণ পিপাসু ও সংস্কৃতিমনা মানুষজন অপেক্ষায় থাকে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের জন্য। কারণ এ বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে চাঁদপুরে উদ্যাপিত হয়ে থাকে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী এ প্রাণের মিলন মেলায় যদি আমরা না আসি তাহলে যে এই বিজয় মেলা প্রাণ পাবে না। আমরা নিয়মিত যখন পারছি তখনই মেলায় আসার চেষ্টা করছি এবং ঘুরে ঘুরে দেখছি মেলায় থাকা বিভিন্ন স্টল ও পুতুল নাচ, নাগরদোলাসহ দর্শনীয় অনেক কিছু। এসব দেখে আমাদের খুবই ভালো লাগছে। আমরা চাই প্রতিবছরই যেনো নিয়মিত এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন মেলা উদযাপনব পরিষদের নেতৃবৃন্দ। বিভিন্ন স্থান থেকে মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা আরো জানান, মেলায় আরো কিছু ভালো লাগার দিক হচ্ছে প্রতিদিন মেলা মঞ্চে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠান হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ, বিতর্ক অনুষ্ঠান, নাটক মঞ্চায়ন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনেক সংস্কৃতিমনা মানুষ আছেন যারা প্রতিদিন নিয়মিত এসব অনুষ্ঠান দেখার জন্য মেলায় ঘুরতে আসেন।
বিজয় মেলা উদযাপনব পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও মেলাতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে মেলা মাঠের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি)ক্যামেরা। এর পাশাপাশি প্রশাসনের সহযোগিতায় মেলার প্রবেশ মুখে এবং মেলাকে ঘিরে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর বাইরেও মানুষজনের চলাফেরার সুবিধার্থে মেলা মাঠের পশ্চিম পাশে আবু ওসমান সড়কের পাশ দিয়ে একটি বাড়তি গেট রাখা হয়েছে। তাই বিজয় মেলার চেয়ারম্যান অ্যাডঃ সেলিম আকবর ও মহাসচিব অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরনসহ মেলা কর্তৃপক্ষ মনে করছেন অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মেলাতে যতই মানুষের ভিড় হোক না কেন, বাড়তি ওই গেটটি থাকার কারণে মানুষজনের প্রবেশে বাইরে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আগামী ৮ ডিসেম্বর মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। তার আগেই প্রতিদিন মেলায় মানুষের কমবেশি ভিড় লক্ষ্য করার যায়। সবকিছু মিলিয়ে অন্যান্য বছরগুলোরে তুলনায় এবারের বিজয় মেলা প্রথম দিন থেকে মানুষের আনাগোনায় জমে উঠতে শুরু করেছে।