সাখাওয়াত কাওসার
জামিনে যে কোনো সময় মুক্তি পাচ্ছে শীর্ষস্থানীয় অন্তত ১০ জন সন্ত্রাসী। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের দেন-দরবার সম্পন্ন হয়েছে। মিলেছে সবুজ সংকেতও। বিগত সরকারের আমলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অন্ধকারে রেখে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ ও রনির মতো এদেরও জামিন দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থা ও কারাগার সূত্র জানায়, মুক্তির জন্য অপেক্ষমাণ এ ১০ সন্ত্রাসী এখন ঢাকা ও কাশিমপুর কারাগারে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়ে তারা ১২ থেকে ১৫ বছর ধরে কারাগারে আছে। তাদের একেকজনের বিরুদ্ধে ১৫ থেকে ২৫টি মামলা রয়েছে। এদের প্রায় সবাই হত্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলায় খালাস কিংবা জামিন নিয়েও নিজ ইচ্ছায় চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ছোটখাটো মামলায় কারাগারে আটক রয়েছে; যাতে সময়-সুযোগমতো বের হয়ে যেতে পারে।
সূত্রমতে, গত ১ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমদ জোসেফকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে (বি-২) নেওয়া হয়। মূলত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাসপাতালে নিয়ে মুক্তি দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। নির্বাচনের আগের রাতে তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু গণমাধ্যমের সতর্কতার কারণে সেদিন জোসেফকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যে কোনো মুহূর্তে তাকে কারাগার থেকে বের করার সম্ভাবনা রয়েছে। জোসেফ একটি হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও উচ্চ আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রায় দুই ডজন হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ফরমান আলী জানান, পিঠের ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত জোসেফকে প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ হলেই তাকে কারাগারে ফিরিয়ে আনা হবে।
আরেক বন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান। হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মোট ১৪টি মামলার সব কটিতেই সে জামিন পেয়েছে। সম্প্রতি তিনটি মামলায় পেন্ডিং ওয়ারেন্ট নিয়ে কারাবন্দী থেকে সুসময়ের অপেক্ষা করছে। এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে কয়েকদফা দেন-দরবার করেছে। শীঘ্রই হয়তো সবুজ সংকেত মিলবে। জেল সুপার ফরমান আলী তার প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার জানা মতে সে ইচ্ছা করেই কারাগার থেকে বের হচ্ছে না। পেন্ডিং ওয়ারেন্ট লাগিয়ে রেখেছে।’ অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মুক্তি পেলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। তাদের মুক্তির আগেই তাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। আর শীর্ষ সন্ত্রাসী হলে তো কথাই নেই। কাশিমপুর-১ কারাগারে বন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী, একসময়ের ছাত্রলীগ নেতা সানজেদুল ইসলাম ইমন তার বিরুদ্ধে দায়ের নয়টি মামলার সাতটিতেই জামিন নিয়েছে। ইমন আরেক সন্ত্রাসী জোসেফের বড় ভাই টিপু হত্যা মামলার আসামি। সে একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাজন। তার মাধ্যমেই ইমনের মুক্তির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা কর্মকর্তা বলেন, ‘জোসেফ কারাগার থেকে বেরিয়ে গেলে ইমনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এমন আশঙ্কায় যে কোনো মূল্যে সে কারাগার থেকে অতিদ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।’ কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যাসহ ১৯টি মামলা। এর মধ্যে ১৭টিতে জামিন নিয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দুটি মামলায় সে কারাগারে আছে। সন্ত্রাসী খোরশেদ আলম রাশু ১৩টি মামলার ১১টিতেই জামিন নিয়েছে। এ কারাগারে বন্দী আরেক সন্ত্রাসী ভাসানটেকের ইব্রাহীম। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে আটটিতে জামিন পেয়েছে। আর বাকি আটটি নামমাত্র মামলা। সিআইডির একটি দল ২০০৮ সালে ভারত থেকে গ্রেফতার করে দেশে নিয়ে আসে শীর্ষ সন্ত্রাসী লম্বু সেলিমকে। বর্তমানে সে হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ মোট ১৪টি মামলার ১২টিতে জামিন নিয়ে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে সেলিম। কাশিমপুর কারাগারে বন্দী সন্ত্রাসী রামপুরার শাহজাদা, কাফরুলের তাজ ও যাত্রাবাড়ীর মোকসেদ আলী ওরফে মোকসার অবস্থাও অনেকটা একই রকম। এরা সবাই পেন্ডিং ওয়ারেন্ট নিয়ে সবুজ সংকেতের অপেক্ষায়। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনের ব্যাপারে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেসব সন্ত্রাসী জামিনে মুক্ত হয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি কারাগারে আটক সন্ত্রাসীদের মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধীদের ধরন ও জামিনে বেরোলে জানমালের হুমকি সম্পর্কে আদালতকে তথ্য দেওয়া হচ্ছে। তবে আদালত যদি এসব সন্ত্রাসীকে জামিন দেন তাহলে পুলিশের কিছু করার থাকে না। আদালতের নির্দেশ আমাদের মেনে চলতে হয়।’
সূত্র–বাংলাদেশ প্রতিনিধি