ডাঃ বশীর মাহমুদ ইলিয়াস
ইদানীং আমেরিকার বিবেকবান এবং গণহিতাকাঙখী অর্থনীতিবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা তাদের জনগণকে প্রতিনিয়ত সতর্ক করিতেছেন যে, হয়ত দু’চার মাসের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসাবে পেট্রো ডলারের পতন হইবে । বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০০৮ সাল থেকেই ডলার হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে আছে । এখন তাহার মৃত্যু ঘোষণা সময়ের ব্যাপার মাত্র । তখনডলারের কোন মূল্যই থাকিবে না, অন্যান্য ফালতু কাগজের মতোই একেবারে মূল্যহীন হইয়া পড়িবে । ফলে আমেরিকা পুরোপুরি দেউলিয়া হইয়া পড়িবে । তখন ব্যাংকসমূহ, শেয়ার বাজারসমূহ এবং কলকারখানাসমূহ একেবারে জনমের মতো বন্ধ হইয়া যাইবে । আর কখনও খুলিবে না । ঘরে এবং ব্যাংকে জমানো ডলার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদি সব মূল্যহীন হইয়া পড়িবে । মানুষ দেখিতে পাইবে তাহাদের সারাজীবনের সঞ্চয় এক নিমিষে উধাওহইয়া গিয়াছে । তারপর দেখা দিবে বেকারত্ব-অভাব-অনটন-অনাহার-দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি । তখন উত্তেজিত জনতা রাস্তায় নামিয়া ভাংচুর-জ্বালাও-পোড়াও শুরু করিবে । তারপর মার্শাল ল জারি করা হইবে, দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ । তারপর শুরু হইবে গৃহযুদ্ধ অথবা রক্তাক্ত বিপ্লব । তারপর সম্ভবত আমেরিকা টুকরা টুকরা হইয়া যাইবে যেমন হইয়াছিল সৌভিয়েত ইউনিয়ন ।এই সকল বিশেষজ্ঞদের মতে, আসন্ন এই ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন বিভীষিকাময় ভবিষ্যতের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে শহর ত্যাগ করিয়াএই মুহূর্তেই গ্রামে চলিয়া যাওয়া উচিত । কেননা শহরের লোকেরা তাদের খাদ্য-বস্ত্র-পানীয়-জ্বালানি-যাতায়াত ইত্যাদি সকল ব্যাপারে সরকারের উপর নির্ভরশীল হইয়া থাকে । আর কোন দেউলিয়া সরকারের পক্ষেই কোটি কোটি শহরবাসীকে খাবার-পানি-জ্বালানি সরবরাহ করা সম্ভব নয় । কাজেই এই পরিস্থিতিতে শহরে বসবাস করিলে হয় না খাইয়া অথবা গুলি খাইয়া মরিতে হইবে। কেননা কাপড় না থাকিলে নগ্নথেকেও জীবন বাঁচানো যায়, জ্বালানি না থাকিলে রান্নাবিহীন খাবার খাইয়াও জীবন বাঁচানো যায়, আলো না থাকিলে অন্ধকারে থাকিয়াও জীবন বাঁচানো যায়, গাড়ি-ঘোড়া না থাকিলে পায়ে হাঁটিয়াও জীবন বাঁচানো যায় ; কিন্তু খাবার-পানি না থাকিলে জীবন বাঁচানো যায় না । কাজেই সকলের উচিত এই মুহূর্ত থেকেই গ্রামে বসবাস এবং নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদনের চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করা উচিত । ডলারের পতনের পর আমেরিকার যেই অবস্থা হইবে একই অবস্থা হইবে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের । কারণ প্রতিটি দেশেই রহিয়াছে একই ধরনের অর্থব্যবস্থা বা মুদ্রা ব্যবস্থা অর্থাৎ কাগজের মুদ্রা ।
তাছাড়া প্রতিটি দেশই কোন না কোন ভাবে অন্যান্য দেশের উপর নির্ভরশীল । অর্থনৈতিক পতনের সাথে সাথে সরকারেরও পতন হইবে অথবা সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমিয়া যাইবে । ফলে বিদ্রোহ-বিপ্লব-অরাজকতা-হানাহানি-গণহত্যা-দুভিক্ষ ইত্যাদি শুরু হইবে । লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের সরকারী বেসরকারী চাকরি হারাইবে । চাউল-আটার মূল বৃদ্ধি পাইবে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় । পূর্বে যাহারা কোটি টাকা মূল্যের মার্সিডিজ চড়িতেন, তখন তাহারা পরের বেলার খাবার কোথা হইতে আসিবে তাহা নিয়া দুঃশ্চিন্তায় থাকিবেন । বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভয়ঙ্কর সময়ে পৃথিবীর পাঁচটি স্থানে বসবাস করা সবচেয়ে বিপজ্জনক হইবে – ইসরাঈল, ইংল্যাণ্ড, নিউ ইয়র্ক, লস এনজেলস এবং ওয়াশিংটন । আসন্ন এই বিভীষিকাময় দুর্যোগ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগণ যাহা বলেন, তাহা শুনিলে রক্ত হিম হইয়া আসে । আর তাহারা এমন সব অর্থনীতিবিদ যাহারা গত দশ বছর পূর্বে আমেরিকার এবং বিশ্বের অর্থনীতি সম্পর্কে যত ভবিষ্যৎবাণী করিয়াছেন, তাহার সবই সত্য প্রমাণিত হইয়াছে । আরেকটি কথা হলো, যুদ্ধ-গৃহযুদ্ধ-বিশ্বযুদ্ধ-রক্তাক্ত বিপ্লব ইত্যাদি সকল অপকর্মের মূল টাগের্ট থাকে শহরগুলি । সাধারণত শক্রপক্ষকে বিনাশ করিবার জন্য প্রতিপক্ষের লোকেরা শহরের খাবার পানি বিদ্যুৎ জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ লাইন বন্ধ করিয়া দিয়া থাকে । আর শহরে যেহেতু চাষাবাদ বা ফসল ফলানোর কোন ব্যবস্থা থাকে না, কাজেই এইসব অবরোধের সময় তাহাদেরকে অনাহারে ধুকিয়া ধুকিয়া মরা ছাড়া গত্যন্তর থাকিবে না । একটি কথা আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখিতে হইবে যে, দাজ্জালেরতৈরী করা বতর্মান সভ্যতার সুযোগ-সুবিধা যেহেতু শহরবাসীরাই বেশী ভোগ করিয়াছে, কাজেই এই অভিশপ্ত সভ্যতার শাস্তিও শহরবাসীদেরকেই বেশী ভোগ করিতে হইবে । এই সকল আমেরিকান বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন এলাকায় গিয়া বসবাস করা উচিত যেখানে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় এবং টর্নেডো-ঘুর্নিঝড় কম হয় । কেননা ভবিষ্যতে জমিতে মেশিন দিয়া সেচ দেওয়ার মতো অবস্থা না থাকিবার সম্ভাবনাই বেশী । সর্বোপরি বন্যা-খরা-তুষারপাত-জলোচ্ছাস-ভুমিকম্প-ফসলে পোকার আক্রমণ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে থাকিবে । কোন কোন অর্থনীতিবিদ মনে করেন, একক মুদ্রা হিসাবে ডলারের পতনের পরে জাতিসংঘ এবং বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে নতুন আরেকটি আর্ন্তজাতিক মুদ্রা চালু হইবে । কিন্তু এতে কোন সুফল আসিবে বলিয়া তাহারা নিজেরাও বিশ্বাস করেন না ।নিশ্চিতভাবেই দেশে দেশে পুণরায় স্বর্ণমুদ্রা চালু হইবে । কেননা ইদানীং চীন-ভারত-জাপান-জার্মান ইত্যাদি নেতৃস্থানীয় সকল দেশই ডলারের পরিবর্তে তাহাদের সোনার মুজত বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিয়াছে ।
সম্প্রতি চীনা সরকার তাদের জনগণকে বেশী বেশী করিয়া স্বর্ণ ক্রয় করিবার আহবান জানাইয়াছে । ইহুদী-খ্রীষ্ঠানরা স্বর্ণমুদ্রার ব্যবহার বন্ধ করিয়া কাগজের মুদ্রা চালু করিয়া মানবজাতির সাথে যেই ধোঁকাবাজি করিয়াছে, তাহা অনন্তকাল ধরিয়া চলিতে পারে না । আর এই প্রতারণামূলক কাগজের মুদ্রা ব্যবস্থার ভয়ংকর কুফল পাশ্চাত্যের সাথে সাথে প্রাচ্যর লোকদেরকেও ভোগ করিতে হইবে । ইদানীং আমেরিকান এবং ইউরোপীয়ান ইহুদী ধনকুবেরগণ হাজার হাজার টন সোনা কিনে গোডাউন ভর্তি করিতেছে আর অন্যদেরকে বলিতেছে যে, স্বর্ণের দাম কমিয়া যাইবে, সোনা কিনিয়া কোন লাভ নাই । কিন্তু ইহুদীদের প্রতারণা সম্পর্কে যাহারা অভিজ্ঞ তাদের পরামর্শ হইল, ইহুদীরা কি করে তাহা লক্ষ্য করুন, কি বলে তাহা বিশ্বাস করিবেন না ।অর্থনীতিবিদগণের মতে, ডলারের পতন মানবজাতির ইতিহাসে এমন একটি ভয়াবহ ঘটনা হইবে, যাহা পৃথিবীর সকল দেশের সকল মানুষকে কম-বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করিবে । পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে অর্থনৈতিক পতন-বেকারত্ব-দুর্ভিক্ষ-অরাজকতা-যুদ্ধ-গৃহযুদ্ধ-বিদ্রোহ ছড়াইয়া পড়িবে । কেননা পৃথিবীর একমাত্র পরাশক্তি আমেরিকা তখন নিজের গৃহযুদ্ধ সামাল দিতে ব্যস্ত থাকিবে । সারা দুনিয়ার নিরাপত্তা-শৃঙখলা নিয়ে চিন্তা করা সময় বা শক্তি আমেরিকার থাকিবে না । দেশে দেশে এই বিশৃঙখলা অরাজকতার সুযোগে পারমাণবিক অস্ত্র সহ অন্যান্য মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিদ্রোহীদের হাতে চলিয়া যাওয়াও বিচিত্র কিছু নয় । আর সন্ত্রাসীদের গুপ্ত হামলায় ভুল বুঝাবুঝির কারণে একদেশ অন্যদেশকে আক্রমণ করিয়া বসিবে । তাছাড়া প্রখ্যাত রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়া-ইরাক-ইরান ইস্যুতে অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর দখলবজায় রাখার ইস্যুতে পরাশক্তিসমূহ ইতিমধ্যেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য জোরেসোরে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করিয়াছে ।তাহাতে একদিকে আছে ইউরোপ-আমেরিকা আর অন্যদিকে আছে চীন-রাশিয়া । অধিকন্তু ভারত-পাকিস্তান, চীন-ভারত, চীন-জাপান, আমেরিকা-উত্তর কোরিয়া, ইরান-ইসরাইলের মধ্যে যে-কোন সময় পারমানবিক যুদ্ধ লাগিয়া যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র । একটি বিশ্বখ্যাত গবেষণা সংস্থার মতে, একমাত্র ভারত-পাকিস্তানের পারমানবিক যুদ্ধেই অন্তত দুইশ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে । সে যাক, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে-সব অস্ত্রসস্ত্র ব্যবহৃত হইবে, তাতে মানবসভ্যতার কোন চিহ্ন আর অবশিষ্ট থাকিবে না ।অন্যদিকে ইহুদী এবং খ্রীষ্টান ধর্মের পন্ডিতদের মতে, ২০১০ সাল হইতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই সাত বছর হইবে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে অকল্পনীয় মারাত্মক ধংসাত্মক বিভীষিকাপূর্ণ । আবার কোরআন-হাদীসেও আখেরী জামানার ভয়াবহ গণহত্যা-ধ্বংসাত্মক চক্রান্ত-ইয়াজুজ মাজুজ দাজ্জালের মহাযুদ্ধের ভীতিকর বর্ণনা বিদ্যমান । এই সাতবছরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরী হইবে এবং তারপর শুরু হইবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ । তখন ইমাম মাহদী (আঃ) আত্মপ্রকাশ করিবেন এবং ঈসা (আঃ) আসমান থেকে নামিয়া আসিবেন । তাহাদের দুইজনের নেতৃত্বে মুসলিম অমুসলিমদের মধ্যে হইবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ তথা শেষ মহাযুদ্ধ । তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে আক্ষরিক অর্থেই মানবজাতি ধ্বংস হইয়া যাইবে । কেননা মহানবী (সাঃ) ভবিষ্যতবাণী করিয়া গিয়াছেন যে, কেয়ামতের পূর্বে এমন একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হইবে যাহাতে একশতে ৯৯ জনই নিহত হইবে । তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও যেই অল্প সংখ্যক মানুষ বাঁচিয়া থাকিবে, তাহাদের পক্ষে কৃষিকাজ এবং মৎস শিকার করা ছাড়া আর অন্য কোন পেশা অবশিষ্ট থাকিবে না ।কাজেই আমেরিকার স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞগণ তাদের দেশ ও জনগণের কল্যাণে যে-সব পরামর্শ – সদুপদেশ দিতেছেন, তাহা আমাদেরও মানিয়া চলা বুদ্ধিমানের কাজ হইবে । আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন ।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ২০ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৬ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।