দেশ মাতৃকার জন্য বিজয়ের পতাকা ছিনিয়ে আনলেও জীবন যুদ্ধে এক পরাজিত সৈনিক বীর বিক্রম আব্দুছ ছালাম। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছেন তিনি। বেকারত্ব জীবনের অভিশাপ নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটে এ বীর সেনানীর। চিকিৎসার অভাবে রোগ-শোকে-ভোগে মারা গেছে তার সহধর্মিণী মমিনা খাতুন। তাঁর দুই ছেলে আলম (৩৬) ও ইব্রাহীম (৩১) বেকার। দুই মেয়ের বিয়েও হয়েছে দরিদ্র পরিবারে। দিন আনে দিন খায়। দৈন্যতার এক চরম কুপোঘাতে জর্জরিত এই বীর সেনানীর পরিবার ।
বীর বিক্রম ছালামের একমাত্র আয় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। সহায়-সম্বল বলতে একটা পুরনো জীর্ণ-শীর্ণ ঘর। ঘরের মেঝেতে পাতানো একটা ভাঙাচুরা চৌকি। কোনো জমি-জমা নেই। তার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় মুক্তি বার্তা নং (০২০৫০২০৪০৪)। বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়ন্থ ছোট হলদিয়া গ্রামে। স্বাধীনতা যুদ্ধে আব্দুছ ছালাম কুমিল্লা অঞ্চলে ২নং সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হায়দারের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। তিনি অষ্টম শ্রেণী পাস করে ১৯৬৭ সালে সেনাবাহিনীতে চাকরি নেন। ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চলে যান ভারতের মেলাঘরের অম্পিনগরে। সেখান থেকে ৪ সপ্তাহের বিশেষ ট্রেনিং নিয়ে কুমিল্লা সীমান্ত এলাকায়, সালদা নদী, কসবা উপজেলার মঈনপুর, ফেনীর বেলুনিয়া সীমান্ত ও নোয়াখালীর দুম ব্রিজ এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। কসবা উপজেলায় এক রাতে পাক বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করে ৯ হানাদার বাহিনীকে হত্যা এবং ১ জনকে বন্দী করেন।
সম্মুখ সমরে বীরত্বপূর্ণ এ অবদানের জন্য তাঁকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতার ৪১ বছর পূর্তি উপলক্ষে বীর বিক্রম ছালামের আনন্দ-অশ্রু গড়িয়ে পড়ে নিজের দৈন্যতার কথাই জানান। স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও যেনো তার যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। নিজের বেকারত্ব জীবনের পাশাপাশি আছে পরিবার পরিজনের অসহায়ত্বের বোঝা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এ বীর সেনানী বিষাদময় জীবনের ভারে ন্যূব্জ হয়ে গেছে।
বীর বিক্রম আঃ সালাম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, তার ছোট ছেলে ইব্রাহীম (৩১) এর জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এমএলএস পদে চাকরির জন্য অনেক কষ্টে ৫০ হাজার টাকা জোগার করে এক প্রভাবশালী মুক্তিযোদ্ধা নেতার হাতে দিয়ে তার মাধ্যমে চেষ্টা করেও চাকরি আর হয়নি।