দেশের ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের ৭০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। বর্তমানে আমদানিকারকদের কাঁচামাল আনতে এলসি বা ঋণপত্র খুলতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের উৎপাদন ও সরবরাহে সংকট দেখা দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খুলছে না ব্যাংকগুলো। আমদানিও করা যাচ্ছে না অনেক জরুরি ওষুধ। সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। তারা বলছে, যে পরিমাণ কাঁচামালের মজুত আছে তাতে খুব বেশি হলে দুই থেকে তিন মাস চলতে পারে। তবে অনেক কোম্পানি ইতিমধ্যেই সংকটে পড়েছে। যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন ও সরবরাহ। তবে সরকার জীবনরক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহে যাতে সংকট দেখা না দেয় সেদিকে নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে দেশে যেসব ওষুধ তৈরি হয় না সে সব ওষুধ আমদানি করতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এলসি করতে নানা জটিলতা। এ কারণে সময়মতো রোগীদের জীবনরক্ষাকারী ওষুধ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ক্যানসার, কিডনি, নিউমোনিয়া, ইনসুলিনসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আমদানির প্রয়োজন হয়। আমদানিকৃত ওষুধের মধ্যে ইনসুলিনসহ কিছু সংখ্যক ওষুধ বাংলাদেশে তৈরি হয়। কিন্তু বিদেশি ওষুধে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়। কিছু দিনের মধ্যে এসব জীবনরক্ষাকারী ওষুধ আমদানি করতে না পারলে অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবন মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে দেশে নিষিদ্ধ যেসব ওষুধ তা অনেক ডাক্তার প্রেসক্রিপশন করে থাকেন। এসব নিষিদ্ধ ওষুধে ব্যাপক চাহিদা থাকায় চোরাই পথে বা ল্যাগেজের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করছে। এই ওষুধ রাখার কারণে ওষুধ বিক্রেতারা জেল-জরিমানার শিকারও হন। তাদের বক্তব্য হলো, ব্যাপক চাহিদা থাকায় এসব ওষুধ তারা রোগীদের জীবনরক্ষার্থে রাখেন। এ প্রসঙ্গে একাধিক বিশেষজ্ঞ ইত্তেফাককে বলেন, বাজারজাতকৃত ওষুধের চেয়ে এই নিষিদ্ধ অনেক ওষুধ আছে, যা রোগী ব্যবহার করে দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন। অপরদিকে বাজারজাতকৃত কোনো কোনো ওষুধের গুণমান নিয়েও প্রশ্ন আছে। এসব কারণে রোগীদের জীবন রক্ষার্থে ব্যবস্থাপত্রে তারা ঐ সব ওষুধ লিখে থাকেন। অনেক রোগী নিজ উদ্যোগে বিদেশ থেকেও এসব এনে সেবন করেন।
এদিকে দেশে প্রায় ২০টি কোম্পানির ওষুধের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ১০০ দেশে তারা ওষুধ রপ্তানিও করে। দেশে ২৯৪টি ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ কোম্পানির ওষুধের গুণমান নিম্নমানের। এ সব ওষুধ রাজধানীতে বাজারজাত করা হয় না। গ্রাম অঞ্চলে নিম্নমানের ওষুধ বাজারজাত করা হয়। কাঁচামাল আমদানি করতে সময় মতো এলসি করতে না পারায় ওষুধের উৎপাদন কমছে। ওষুধের দোকানগুলোতে গিয়ে জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।
ওষুধ বিক্রেতারা বলেন, এই সংকটে কিডনি, ক্যানসারসহ অনেক জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দামও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাদের মতে, ৩০ শতাংশ ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে সামনে ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দেবে। ওষুধ উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, যারা ঋণখেলাপি তাদের জন্য এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। এই মুহূর্তে তেমন কোনো সংকট না থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ওষুধের সংকট দেখা দেবে বলে জানান তারা।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমাদের কাছে যারা অনুমোদন চায় তাকে দিয়ে দেই। আমরা কাউকে আটকাই না। অননুমোদিত ওষুধ যখন ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশন দেন, সে ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। ডাক্তার যদি মনে করেন রোগীর জন্য এটা প্রয়োজনীয় ওষুধ, তাহলে তা অনুমোদন দিয়ে দেব। কিন্তু দেদারসে লিখবেন আমাদের অনুমোদন ছাড়া-এটা একটা অপরাধ। ডাক্তার তো জানেন কোনোটা অনুমোদন নয়। অননুমোদিত ওষুধ আনতে প্রয়োজন হলে এনওসি দিয়ে দেব। বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির তথ্য মতে, ‘বাজারের প্রায় ৯০ ভাগ ওষুধই ২০টি কোম্পানির। বাকি কোম্পানিগুলো কী ওষুধ তৈরি করে তা আল্লাহই জানে। ’