চাঁদপুর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মারা যাওয়া ব্যক্তি
ফয়সালের শ্বশুরও গতকাল মারা গেলেন। শ্বশুর আলী আজ্জম পাটওয়ারীও
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু
সুস্থ হওয়ার নয়দিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি মারা
যান। তারপরও সন্দেহ দূর করতে তার পুনরায় স্যাম্পল নেয়া হয় এবং করোনার
উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে যেভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয়, আলী
আজ্জম পাটওয়ারীকেও সে বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয়। চাঁদপুর সদর উপজেলা
স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন এসব তথ্য জানান।
আলী আজ্জম পাটওয়ারীর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর
ইউনিয়নের উত্তর কামরাঙ্গা গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ি। ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন
পাটওয়ারী জানান, আলী আজ্জম পাটওয়ারী কয়েক বছর আগেই মূল বাড়ি থেকে বের হয়ে
একটু দূরে ভিন্ন জায়গায় বাড়ি করেন। তার আশপাশে কোনো প্রতিবেশী নেই। তাই
তাদের পরিবারের খোঁজখবর এলাকার কেউ তেমন একটা রাখতে পারেনি। অসুস্থতার
বেলায়ও তাই হয়েছে।
আলী আজ্জম পাটওয়ারীর তিন মেয়ে এক ছেলে। এর মধ্যে বড় মেয়ে জান্নাতুল
ফেরদৌসের স্বামী ফয়সাল আহমেদ (৪১) নারায়ণগঞ্জে একটি ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি
করতেন। তিনি গত ১ এপ্রিল তার শ্বশুর বাড়িতে আসেন। কিন্তু তার মধ্যে যে
করোনার উপসর্গ ছিলো তা ফয়সাল এবং তার পরিবারের সদস্যরা তেমন একটা গুরুত্ব
দেননি অথবা গোপন রাখেন। তার শ্বাসকষ্ট ছিলো খুব বেশি। শ্বশুর বাড়িতে মারাও
গিয়েছেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। ১১ এপ্রিল রাতে ফয়সাল আকস্মিকভাবে মারা যান।
এদিকে এলাকাবাসীর মধ্যে তার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে তার দাফন বিশেষ
ব্যবস্থায় করা হয় সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে। একই সাথে
ফয়সালের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হয়। ক’দিন পর রিপোর্ট আসে
ফয়সাল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এ রিপোর্ট আসার পর ফয়সালের শ্বশুর
বাড়ির সকলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ফয়সালের স্ত্রীর
রিপোর্ট নেগেটিভ আসলেও তার শ্বশুর ও শ্যালিকা মারজান বেগমের রিপোর্ট পজিটিভ
আসে। মারজানের দুগ্ধপোষ্য সন্তান থাকায় তিনি বাড়িতে চিকিৎসাধীন এবং হোম
কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। আর আলী আজ্জম পাটওয়ারী চাঁদপুর সরকারি জেনারেল
হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। নির্দিষ্ট সময় চিকিৎসা
শেষে আলী আজ্জম পাটওয়ারীর দুই বার করে স্যাম্পল পুনরায় পরীক্ষা করা হয়। পর
পর দুই বার তার নেগেটিভ রিপোর্ট আসায় নিয়ম অনুযায়ী তাকে পূর্ণাঙ্গ সুস্থ
ঘোষণা করা হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে।
আলী আজ্জম পাটওয়ারী গত ২৯ এপ্রিল সুস্থ হয়ে বাড়িতে যান। এ বিষয়টি নিশ্চিত
করেন সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল। এর নয়দিনের
মাথায় গতকাল তার মৃত্যু হলো। ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন পাটোয়ারী জানান,
গতকাল সকাল ১০টায় আলী আজ্জম পাটওয়ারীর বুকে ব্যথা অনুভব হয়। তখন তিনি নিজেই
মোবাইলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে ঔষধ সেবন করেন। এর দু ঘণ্টা পর বেলা ১২টায়
তিনি মারা যান। এদিকে এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ফয়সালের শ্যালিকা মারজান যার
দ্বিতীয় দফা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে, সেও এখন ঝুঁকিতে পড়ে গেলো।