মিজান লিটন
নিরীহ মানুষ হত্যা, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আওয়ামী লীগ-বিএনপি অফিসে আগুন, নেতাদের বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাটসহ ব্যাপক সহিংস ঘটনার মধ্য দিয়ে চাঁদপুর জেলায় ১৮ দলীয় জোটের টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল গতকাল ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের পাঁচ বছরে এ প্রথম বিরোধী দলের কোনো হরতাল চাঁদপুরে স্বতস্ফূর্তভাবে পালিত হলো। জেলা শহর ও উপজেলা শহরগুলো ছাড়াও গ্রামে-গঞ্জেও এবারের হরতালে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ ছিলো বেশ জোরালো। কচুয়া উপজেলায় পাঁচ বছরের মধ্যে এ প্রথম সর্বাত্মক হরতাল হলো। আর হরতালে এবারই প্রথম জেলার বিভিন্ন স্থানে পক্ষ-বিপক্ষ মুখোমুখি হয়েছে, সংঘর্ষ হয়েছে। এমনকি হরতালে প্রাণ গিয়েছে চাঁদপুরে এ প্রথম। এ ভাবে চাঁদপুরে এবার ঘটনা বহুল ৬০ ঘণ্টার হরতাল পার হয়েছে।
২৭ অক্টোবর রোববার থেকে চাঁদপুরসহ সারাদেশে ১৮ দলীয় জোটের ৬০ ঘণ্টার হরতাল শুরু হয়। প্রথম দিন হাজীগঞ্জ ছিলো বেশ উত্তপ্ত। সেখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগ তুমুল সংঘর্ষ হয়। প্রশাসন রোববার দুপুর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যনত্দ হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। একই সাথে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এ দিন চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার লোহারপুল এলাকায় হরতালকারীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। নতুনবাজার এলাকায় সংবাদপত্রের গাড়ি, পত্রিকা অফিস, হাসপাতাল, ব্যাংকসহ অনেক বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যক্তিগত চেম্বারে হরতালকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর করে। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরাও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ করে। এ দিন শাহরাস্তির দোপল্লাতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ হয়। এ সময় দোকান ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। এ ছাড়া চাঁদপুর শহরের রঘুনাথপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি অফিস ভাংচুর হয়।
হরতালের দ্বিতীয় দিনে আলোচিত ঘটনা ছিলো চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ। যার মাশুল দিতে হয় আরজু ঢালী নামে ১৪ বছরের এক কিশোরকে জীবন দিয়ে। এ রেশ শহরে এখনো কাটেনি। এ ঘটনায় প্রশাসন ওই দিন দুপুর থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত চাঁদপুর পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। একই সাথে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এ দিন হাজীগঞ্জে আবারো নানা ঘটনা ঘটে। উভয় দল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। উপজেলার ১০নং গন্ধর্ব্যপুর ইউনিয়নের পাঁচৈ গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সদস্য আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন মিয়ার বসতঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে বিএনপি ও জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা। পাল্টা জবাবে সরকার দলীয় কর্মীরা উপজেলা বিএনপি অফিসে আগুন দেয়। এ ছাড়া বিএনপি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সভা করে এবং রেললাইনে আগুন দেয়। শাহরাস্তির দোপল্লায় এদিনও আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ দিন রাতে হাজীগঞ্জের ৬নং বড়কুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
হরতালের শেষ দিন গতকাল চাঁদপুর শহরের ষোলঘর ও বিপণীবাগ এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল মিছিল করে। রঘুনাথপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে ফের সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় দলের কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একে অপরের দলীয় কার্যালয় ভাংচুর ও দু’ দলের দু’ নেতার বসতঘর ভাংচুর করে। এ সময় দু’ আওয়ামী লীগ কর্মী গুরুতর আহত হয়। এ ছাড়া জেলার অন্যান্য স্থানে শানত্দিপূর্ণ হরতাল পালিত হয়। এ তিন দিনে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড শর্ট গানের গুলি ও অর্ধশত রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। সারা জেলায় আটক করা হয় বিশের অধিক। আর মামলা করা হয় বিরোধী দলের সহস্রাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে