চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াতের লাগাতার অবরোধকালে আলোচিত চাঁদপুরের ঘোষেরহাট এলাকায় পেট্রোল বোমায় ট্রাক হেলপার নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র অবশেষে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এটিএম আরিচুল হক গতকাল বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিককে প্রধান (১নং) আসামী করে ৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। চার্জশীটভুক্ত অন্য আসামীরাও বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী। এদিকে এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ছিলো ২২ জন। এ ২২ জন থেকে মিল্টন ভূঁইয়াকে অব্যাহতি দিয়ে আরো নতুন ১০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ৩১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ডাকে। টানা তিন মাস এ অবরোধ হয়। অবরোধকালে সারাদেশে ব্যাপক নাশকতা হয়। পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে অনেক নিরীহ মানুষ মারা যায়। চাঁদপুরও এর বাইরে ছিলো না। এখানেও কম-বেশি নাশকতা হয়েছে। সবচে’ আলোচিত ঘটনাটি ঘটে ২৮ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ১১টার সময় চাঁদপুর সদর উপজেলার ঘোষেরহাট এলাকায়। এ এলাকায় নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুরের মতলবগামী টাইলস্ বোঝাই একটি ট্রাকে দুর্বৃত্তরা পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে ট্রাকের সামনে থাকা হেলপার আঃ মোতালেব (৩৫) অগি্নদগ্ধ হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে ট্রাকটি রাস্তার পাশে খালে পড়ে যায়। আর তখন জীবন বাঁচাতে ট্রাকের হেলপার, চালক ও আরোহী একজন ট্রাক থেকে লাফিয়ে পড়লে ট্রাকের পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই হেলপার আঃ মোতালেব মারা যান। ঘটনার পরপরই পুলিশ সুপারসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
ঘটনার পরদিন চাঁদপুর মডেল থানার এসআই মোঃ আবু সাঈদ বাদী হয়ে এ ঘটনায় ২২ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করেন। এ মামলার তদন্তভার দেয়া হয় মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এটিএম আরিচুল হককে। তিনি দীর্ঘ তদন্তশেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এজাহারনামীয় ২২ জনের মধ্যে ২১ জনকে রেখে নতুন আরো ১০ জনসহ মোট ৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এজাহারভুক্ত আসামী মিল্টন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার স্বপক্ষে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এ মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী হচ্ছেন : জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডঃ সলিম উল্লাহ সেলিম, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন মাঝি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক অ্যাডঃ জাহাঙ্গীর খান, শহর জামায়াতের সেক্রেটারী অধ্যাপক আরিফ উল্লাহ, জামায়াত নেতা অ্যাডঃ সালেহ (৫৫), পিতা মৃত শেখ আব্দুল বারী, সাং রহমতপুর কলোনী চাঁদপুর, মাহমুদুল হাসান ফয়সাল (২৩), পিতা মৃত আঃ রব মিজি, সাং- প্রফেসর পাড়া, চাঁদপুর, ইব্রাহীম কাজী জুয়েল (৩৮), সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রদল, স্বপন মাহমুদ (৩৮), চেয়ারম্যান ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদ, চাঁদপুর সদর, দেলোয়ার হোসেন মাস্টার (৪৫), চেয়ারম্যান, ২নং আশিকাটি ইউনিয়ন পরিষদ, মোঃ ইসমাইল হোসেন তালুকদার (৩২), পিতা মহিউদ্দিন তালুকদার, সাং মান্দারী, চাঁদপুর, মোঃ নুরে আলম তালুকদার (২৮), পিতা মহিউদ্দিন তালুকদার, সাং- মান্দারী, চাঁদপুর, মোশারফ হোসেন ক্বারী (৪২), পিতা বাচ্চু ক্বারী, সাং শাহ্তলী, চাঁদপুর, আবুল হাশেম রুশদী (৪৮), পিতা মৃত মাওলানা এটি আহম্মদ হোসেন রুশদী, সাং শাহ্তলী, চাঁদপুর, মিন্টু মিজি (২৫), পিতা গফুর মিজি, সাং সেনগাঁও, চাঁদপুর, আশ্রাফুল আশ্রাফ (২৫), পিতা অহিদ খান, সাং- পূর্ব উত্তর হাঁপানিয়া চাঁদপুর, সাদ্দাম হোসেন পাটওয়ারী (২৫), পিতা সাহেব আলী পাটওয়ারী, সাং- কুমারডুগী, চাঁদপুর, রিফাত খান (১৮), পিতা লোকমান খান, সাং কুমারডুগী, চাঁদপুর, শাওন খান (১৮), পিতা মৃত দুলাল খান, সাং কুমারডুগী, চাঁদপুর, আল আমিন (১৯), পিতা খোরশেদ খান, সাং- কুমারডুগী, চাঁদপুর, আজমীর খান (১৮), পিতা শাহআলম খান, সাং- কুমারডুগী, চাঁদপুর, মোঃ মেরাজ খান (২০), পিতা মকবুল খান, সাং কোড়ালিয়া রোড, চাঁদপুর, মোঃ শাহীন শেখ (২৫), পিতা বাবুল শেখ, সাং শিলন্দিয়া, চাঁদপুর, মোঃ সালাহ উদ্দিন মৃধা (২৮), পিতা হাকিম মৃধা, উত্তর মৈশাদী চাঁদপুর, সোহেল মিজি (৩১), পিতা সফিকুল ইসলাম মিজি, সাং- শিলন্দিয়া চাঁদপুর, মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩৬), পিতা মাওলানা তাফাজ্জল হোসেন খান, সাং সেনগাঁও চাঁদপুর, তালহা শরীফ (৩২), পিতা আনোয়ার হোসেন খোকন, সাং- দিঘিরপাড় শাহরাস্তি চাঁদপুর, মোঃ সাজ্জাদুল হক সোহাগ (৩৪), পিতা রুহুল আমিন পাটওয়ারী, সাং মান্দারী চাঁদপুর, মোঃ হাবিবুর রহমান মিঠু (৩২), সাং কোড়ালিয়া রোড, চাঁদপুর, শাহনেওয়াজ পাটওয়ারী (৪০), পিতা আঃ মান্নান মাস্টার, সাং মান্দারী চাঁদপুর। এদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(১)(ক)(৩)/১৬(২) তৎসহ প্যানাল কোড ১৪৩/৩৪১/৪২৭/ ৪৩৫/৩০৭/৩০২/১০৯/১১৪/৩৪ ধারায় আদালতে চার্জশীট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।