চাঁদপুরে মেঘনার পানি জোয়ারের সময় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে নদী ভাঙ্গন। গতকাল ২২ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যাকালীন জোয়ারে মেঘনার পানি বিপদসীমার ৫৯ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার মেঘনায় জোয়ারের পানি সর্বোচ্চ ৪.৫৯ সে. মি. রেকর্ড করা হয়।
গত এক সপ্তাহ যাবৎ মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা এ তিন নদীর পানি জোয়ারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চাঁদপুর জেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সন্ধ্যার পর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক, পুরাণবাজারের জাফরাবাদ মাদ্রাসা সড়ক, রয়েজ রোড, পুরনবাজার কলেজ রোড, মধ্য শ্রীরামদীসহ অনেক এলাকা জোয়ারের পানিতে ভরপুর হয়ে যেতে দেখা গেছে। এদিকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদী দিয়ে প্রবল বেগে নামছে বন্যা ও উজানের পানি। এ কারণে পদ্মা ও মেঘনা নদীর মিলনস্থলে তীব্র স্রোত বইছে। ফলে আবারো দেখা দিয়েছে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন। পদ্মার ভাঙ্গনে সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লগ্গীমারা, বলিয়ারচর ও মান্দেরবাজার এলাকার বহু বাড়ি-ঘর সরিয়ে ফেলতে হয়েছে। লগ্গীমারা আশ্রয় কেন্দ্রটিও নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সফিউল কুড়ালী জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার এলাকা।
মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে নদী ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হরিণা ও ঘুরখুদি চরে নব নির্মিত এবং নির্মাণাধীন একাধিক আশ্রয়ন প্রকল্প হুমকির মুখে রয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা জানান, এখানে ভাঙ্গন বাড়ছে। পদ্মা ও ঘুরখুদি এ দুটি আশ্রয়ন প্রকল্পে ২০৫টি পরিবার বসবাস করছে। আরো কয়েকটি আশ্রয়ন প্রকল্প সেখানে নির্মাণাধীন। নদী থেকে আশ্রয় কেন্দ্রের দূরত্ব মাত্র ২’শ মিটার। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আশ্রয়ন প্রকল্প রক্ষায় নিজ উদ্যোগে বালু ভর্তি বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী কাশেম খান জানান, এবারের নদী ভাঙ্গনে তার ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঈদগাহ বাজার এলাকার ১৫টি বসতভিটে বিলীন হয়ে গেছে। এসব পরিবার এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাদের পুনর্বাসন জরুরি। ঈদগাহ ফেরিঘাটের বিআইডাবিস্নউটিএ’র টার্মিনালের সিসি বাঁধটিও নদীতে তলিয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী কয়েকটি পুকুরের পাড় ভেঙ্গে চাষকৃত মাছ ভেসে গেছে।
জেলা প্রশাসনের দুযর্োগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী জানিয়েছিলেন, হাইমচর সদর ইউনিয়নে গত ক’দিনের নদী ভাঙ্গনে আধা কি. মি. এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। নীলকমল ইউনিয়নের ঈশানবালা বাজারসহ গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, অমাবস্যার কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারে বাড়লেও ভাটার সময় পানি নেমে যাচ্ছে। আগামি ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পানি হ্রাস পাবে। চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধসহ চাঁদপুর ও হাইমচর রক্ষা প্রকল্প ঠিক আছে। হাইমচর ঈশানবালায় ২শ’ মিটার এলাকা নদী ভাঙছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পভুক্ত না হওয়ায় চর এলাকার ভাঙ্গন প্রতিরোধে তারা কিছু করতে পারছেন না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
শিরোনাম:
বুধবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ১৯ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।