প্রতিনিধি
কুমিল্লা-চাঁদপুর-রায়পুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মধ্যে চাঁদপুর সড়ক বিভাগের ৫টি সেতুর পুনঃ নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে এ সকল সেতু দিয়ে এখন যানবাহন চলাচল করছে। ফলে সেতুর দিক বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে ঝুঁকিমুক্ত হলো উল্লেখিত দু’টি আঞ্চলিক মহাসড়ক। হাজীগঞ্জ সেতু পুনঃ নির্মাণের কারণে হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট অনেকাংশে কমে গেছে আর ফরিদগঞ্জে ডাকাতিয়ার উপর নির্মিত ফরিদগঞ্জ সেতুর কল্যাণে ফরিদগঞ্জ তথা দক্ষিণাঞ্চলের জনগণকে আর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে না।
জানা যায়, ব্রিটিশ কিংবা পাকিস্তান শাসনামলের শুরুর দিকে হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজার এলাকায় বোয়ালজুরী খালের উপর হাজীগঞ্জ সেতু, একই এলাকার ধেররা নামক স্থানে মিঠানিয়া খালের উপরে মিঠানিয়া সেতু, মহামায়া বাজার সংলগ্ন চরবাকিলা এলাকায় ঝমঝমিয়া খালের উপর ঝমঝমিয়া সেতু, মহামায়া বাজার এলাকায় মহামায়া বাজার সেতু ও ফরিদগঞ্জে ডাকাতিয়ার উপরে ফরিদগঞ্জ সেতু নির্মিত হয়।
আরো জানা যায়, হাজীগঞ্জ বাজার সেতু, ঝমঝমিয়া সেতু ও ফরিদগঞ্জ সেতু এই ৩টি বড় সেতু মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক-হানাদার বাহিনী ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ঐ সময় পাক বাহিনী এই সেতুগুলোকে ধ্বংসের জন্য ডিনামাইড ব্যবহার করে এর অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি করে। স্বাধীনতা লাভের পরে এগুলোর অবকাঠামো মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়। আর সেই ১৯৭১ সালের পর থেকে এই সেতুগুলো জোড়াতালি দিয়ে কিংবা মেরামত করে সচল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায় সড়ক বিভাগ। এর পরে মাঝে মধ্যে এই ৩টি সেতুর মধ্য দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণে নষ্ট হয়ে যেতো, যার কারণে যান চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতো।
বর্তমান সরকারের আগের শাসনামলের প্রথম দিকে হাজীগঞ্জ সেতু ও মিঠানিয়া সেতু নির্মাণকারী সংস্থা কার্যাদেশ পাওয়ার পরে এই দুটি সেতুর পার্শ্ব সড়ক তৈরি করে প্রথম বিল উঠিয়ে নির্মাণকারী সংস্থা পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে। একই প্রক্রিয়ায় বেশ ক’বার সরকার চেষ্টা করে সেতু নির্মাণে সমস্যায় পড়ে।
সর্বশেষ বর্তমান সরকারের বিগত সময়ে ২০১২ সালের দিকে এ ৫টি সেতুর মধ্যে বড় তিনটি সেতু হাজীগঞ্জ বাজার সেতু, মহামায়া ঝমঝমিয়া সেতু ও ফরিদগঞ্জের ডাকাতিয়ার উপর নির্মিত ফরিদগঞ্জ সেতু নির্মাণে এগিয়ে আসে সাহায্যকারী সংস্থা জাপান অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানী (জাইকা)। ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে জাইকার এ দেশীয় প্রজেক্ট ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেতু নির্মাণে হাত দেয়। সেই সাথে কুমিল্লা-লাকসাম-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ সড়কের মধ্যে চাঁদপুরে ৫৬-৫৭-৫৮ তম এই ৩টি সেতু অর্থায়ন নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে জাইকা। জাইকার সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩৩ কোটি টাকায় নির্মিত এই সেতুগুলো পুরোপুরি নির্মাণ শেষে সড়ক বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়ার বিধান রয়েছে। এরপর থেকে এই সেতুগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাঁদপুর। অপরদিকে নিজেদের অর্থায়নে মহামায়া বাজার সেতু ও মিঠানিয়া সেতুর নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শেষ করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব অরুণ বলেন, হাজীগঞ্জ বাজারের যানজটের জন্য প্রতিনিয়ত কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশকে গলধঘর্ম হতে হতো। এ সেতুটি নির্মাণ ও যান চলাচলে খুলে দেয়ার পরে বাজারের যানজট অনেকাংশে কমে গেছে।
চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কে চলাচলকারী বোগদাদ পরিবহনের চালক আঃ হালিম এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, আমাদের গাড়িগুলো সময় গুণে চলাচল করতে হয়। আগে সেতু এলাকায় এসে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো ১৫-২০ মিনিট ধরে। এখন আর তা হয় না।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ চাঁদপুর-এর নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদ হোসেন জানান, ৩৩ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে জাইকার নির্মিত সেতুগুলো এখনো আমরা বুঝে না পেলেও যান চলাচলের জন্য ইতিমধ্যে তা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বাকি দুটি আমাদের অর্থায়নে নির্মাণ শেষে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।