টেলিভিশন টকশো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। কিছু অতিথির বক্তব্যের ওপর চলছে খবরদারি। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণমূলক আয়োজন টকশোর ওপর চাপ নতুন নয়। এ সরকারের সময় এর আগেও টকশো নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন নীতিমালা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। টকশোতে স্পষ্ট কথা বলায় বিশেষ মহলের বিরাগভাজন হয়েছেন অনেক আলোচকও। চলমান সঙ্কট, নির্বাচন, হরতাল, অবরোধসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে টকশোতে আলোচকদের বক্তব্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে এমন বিবেচনায় টকশোর সঙ্গে যুক্তদের ওপর চাপ বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে দু’টি টকশো থেকে অদৃশ্য কারণে সরিয়ে দেয়া হয়েছে দু’জন উপস্থাপককে। চ্যানেল ২৪-এর মুক্তবাক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ডাকসুর সাবেক ভিপি ও রাজনীতিক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং একুশের রাত অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সিনিয়র সাংবাদিক মনির হায়দারকে অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন টকশোতে অতিথিদের প্রচারিত বক্তব্যের টেপ চেয়ে পাঠানোর ঘটনাও ঘটছে। বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে সরকারি সমর্থনপুষ্ট ব্যক্তিদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। করা হচ্ছে সেন্সরশিপ আরোপে কমিটি। কি বলা যাবে আর কি বলা যাবে না তা নিয়ে অলিখিত গাইডলাইন আরোপ করা হচ্ছে। এ সরকারের শুরু থেকেই একাধিক আলোচক প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ২০০৮ সালে সামরিক সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এ ধরনের ঘটনা নিয়মিত ঘটলেও বর্তমানে তা অনেকটাই অনাকাঙ্ক্ষিত বলছেন টকশোর সঙ্গে যুক্তরা।
টকশোতে নিয়মিত কথা বলে ইতিমধ্যেই হামলার শিকার হয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. তুহিন মালিক। দু’জনেরই বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। দারোয়ান ও চালককে শাসিয়ে দেয়া হয়েছে টকশোতে অংশ না নিতে। গত ৯ই নভেম্বর ধানমন্ডিতে পিয়াস করিমের বাসায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে বাসার দারোয়ান আহত হন। ৩রা ডিসেম্বর ড. তুহিন মালিকের বাসায় হামলা চালায় একদল সন্ত্রাসী। তারা বাসার দারোয়ানকে তুহিন মালিক যেন টকশোতে অংশ না নেয় ও পত্রিকায় লেখালেখি না করে সেজন্য শাসিয়ে যায়। এর আগে নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীরও একই ধরনের হুমকির শিকার হয়েছেন। টকশোতে সরব এসব আলোচক জানিয়েছেন, টকশোতে কথা বলতে গিয়ে যে পক্ষের বিপক্ষে বক্তব্য গেছে তারাই এই হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এরকম একাধিক ঘটনায় থানায় জিডি হলেও ওই পর্যন্তই। নেই কোন গ্রেপ্তার। নেই নিরাপত্তাহীনতার কোন প্রতিকারও।
সূত্র–মানবজমিন