শাহরিয়ার খান কৌশিক ॥
চাঁদপুর যাত্রীবাহি লঞ্চে মাদক সহ আসামী, পতিতা খদ্দর ও কপোত কপোতি আটকের নামে নৌ-পুলিশের রমরমা গ্রেফতার বাণিজ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। লঞ্চের কেবিনে অভিযান চালিয়ে আসামী ও কপোত কপোতিদের ভিতরে রেখে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে। নৌ-পুলিশের ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম মাদ্রাসা রোডের সোর্স জহিরকে ব্যবহার করে বিকাশের মাধ্যমে টাকা এনে নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে বেশ কয়েকজন সুপারভাইজার জানায়, প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রীবাহি লঞ্চগুলোতে শুরু হয় নৌ-পুলিশের এ গ্রেফতার বাণিজ্য। এর মূলহোতা হচ্ছে নৌ-পুলিশের ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম। সে নৌ-পুলিশের সোর্স জহিরকে সাথে নিয়ে গোপনে যাত্রীবাহি লঞ্চে ও নদীতে স্পীডবোর্ড নিয়ে গিয়ে এ গ্রেফতার বাণিজ্য করছে। প্রতিদিন রাতে লঞ্চ ঘাটে থাকা ঢাকাগামী যাত্রীবাহি লঞ্চগুলোর কেবিন তল্লাশি চালিয়ে পতিতা খদ্দর, যুবক-যুবতী, প্রেমিক- প্রেমিকাদের আটক করে কেবিনের ভিতরে রেখে শারীরিক ও মানুষিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে। তাদেরকে হাতকড়া পড়িয়ে ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে মামলা দিয়ে চালান দেয়ার হুংকার দিয়ে তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার গুরুত্বর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নৌ-পুলিশের ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম সোর্স জহিরের মাধ্যমে আসামীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। আসামীদের কাছে নগদ টাকা না থাকলে জহির তার মোবাইল নাম্বারে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আনলে অবশেষে ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম তাদেরকে মুক্তি দেন। টাকা না দিলেই হাতকড়া পড়িয়ে লঞ্চ থেকে তাদেরকে নৌ-ফাঁড়িতে নিয়ে বেদম নির্যাতন করেন। এসব ঘটনার জানাযানি হলেই নিজেরা বাচতে মডেল থানা পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের হেফাজতে আসামীদেরকে দিয়ে দেয়। বিভিন্ন মাদক সহ মাদক ব্যবসায়ীরা লঞ্চযোগে দক্ষিনা অঞ্চলে যাওয়ার পথে নৌ-পুলিশ তাদের কে ধরে মাদক ও নগদ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। আবার সেই মাদক তাদের সোর্সদের মাধ্যমে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেয়। তেমনি গত কয়েক মাস পূর্বে বারো কেজি গাজা সহ নৌ-পুলিশ এক আসামীকে লঞ্চ ঘাট থেকে আটক করে। ঘটনা জানা জানি হলে পরে সে আসামীর কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে দুই কেজি গাজা দিয়ে মডেল থানায় প্রেরন করে। বাকী দশ কেজি গাজা নৌ-পুলিশের আরেক সোর্স মাঝি দুলালকে দেয় বিক্রি করার জন্য। মডেল থানার পুলিশ ঘটনা জানতে পেরে রাতেই যমুনা রোড টিলা বাড়িতে সোর্স মাঝি দুলালের বাসায় অভিযান চালিয়ে দশ কেজি গাজা সহ তাকে আটক করে। এসময় দুলাল মডেল থানা পুলিশ কে জানায় নৌ-পুলিশের ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম ও একজন এএসআই তাকে দশ কেজি গাজা বিক্রির জন্য দিয়েছে। সে গাজা বিক্রি করে তাদেরকে টাকা পরিশোধ করে। এছাড়া নৌ-পুলিশ গভীর রাতে স্পীডবোর্ড নিয়ে মেঘনা নদী লগ্মিমারা চর এলাকায় বরিশালগামী যাত্রীবাহি লঞ্চগুলো থামিয়ে অভিযান চালিয়ে কারেন্ট জাল ও নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করে। জব্দকৃত মালগুলো পুনারায় মালের মালিকের সাথে কন্টাক করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। তেমনি কিছুদিন পূর্বে কারেন্ট জাল সহ নৌ-পুলিশ যাত্রবাহী লঞ্চ থেকে দুজন আসামীকে আটক করে তাদের কাছ থেকে পনের হাজার টাকা নিয়ে কারেন্ট জালগুলো রেখে বড়ষ্টেশন মূলহেড এলাকায় এনে ছেড়ে দেয়। সে ঘটনা নৌ-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার কারনে দিনের পর দিন তারা এ গ্রেফতার বানিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসকল অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ও এখান থেকে রদবদল না করতে নৌ-পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।