নূরনবী নোমান : সরকার বিভিন্ন কাজে জন্ম নিবন্ধন পত্রকে গুরুত্ব দিয়ে আসলেও ফরিদগঞ্জে প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গদের উদাসিনতায় মূল্যহীন হয়ে পড়েছে জন্ম নিবন্ধন পত্র। ইচ্ছে হলেই যে কেউ তার নিজের চাহিদা অনুযায়ী বয়স বসিয়ে ইউনিয়ন বা পৌরসভা তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে জন্ম নিবন্ধন পত্র তৈরি করে নিচ্ছেন। সরকার শিশু শ্রম ও বাল্য বিবাহ রোধে বয়সের মাপকাঠি নির্ণয়ের জন্য পাসপোর্ট কিংবা বিয়েতে কাবিন করার ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন পত্রকে বাধ্যতামূলক করেছেন। যার ফলে গ্রামাঞ্চলগুলোতে বাল্য বিয়েকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য যেকোন বয়সের কিশোরীর বয়স জন্ম নিব�দ্ধনে প্রয়োজনমাফিক পরিবর্তন করে বয়স ১৮তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাসপোর্ট করার জন্য জন্ম নিবন্ধন পত্রে নাবালক ছেলেদের বয়স বাড়িয়ে সাবালক করা হচ্ছে। আর এর সবটুকুই সম্ভব হচ্ছে ইউনিয়ন বা পৌরসভা ভিত্তিক তথ্য সেবা কেন্দ্রগুলোর কান্ডজ্ঞানহীন কিছু দায়িত্বপ্রাপ্তদের দ্বারা। যেকোন জন্ম নিবন্ধন পত্রের বয়স বা কোন তথ্য পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন করতে হলে আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বা ইউনিয়নের মেম্বার বা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর সহ আবেদন করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবিকতা তার ব্যতিক্রম। তথ্য সেবা কেন্দ্র গুলোতে সামান্য কিছু টাকা ঢাললেই সকল অনিয়ম নিয়মে রুপ নেয়। অনেকে মেম্বার বা চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষর জাল করেও বালাম খাতায় তাদের সঠিক বয়স কেটে নকল বয়স বসিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে কোন বিশেষ কারনে বয়স পরিবর্তনকারী লাভবান হলেও পরবর্তিতে তাকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
মূল্যহীন জন্ম নিবন্ধনের অযুহাতে বাল্য বিয়েও বেড়ে চলছে গ্রামাঞ্চল গুলোতে। মানুষের বয়স হ্রাস-বৃদ্ধির মত গুরুত্বপূর্ন এই বিষয়টির দিকে কোন নজরই দিচ্ছেন না উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সম্বলিত বালাম খাতা ঘেটে দেখা যায়, গত ১ বছরে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৭২ জন কিশোর-কিশোরী নানা কারনে তাদের বয়স পরিবর্তন করে ১৮ তে নিয়ে গেছেন। শুধুমাত্র গত ডিসেম্বরে ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য ৩৫ জন ছেলে মেয়ে তাদের বয়সকে ১৪’র কোটা থেকে ১৮তে নিয়ে গেছেন। যার মধ্যে অধিকাংশই ছিল ছেলে। অনেকেই বিদেশ যাওয়ার পাসপোর্ট করার জন্য নিজেদের বয়স পরিবর্তন করছেন বলে জানা যায়। গত বছর ডিসেম্বরে ভোটার তালিকায় নতুন ভোটার যারা নাম উঠিয়েছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশ ভোটারদের জন্ম তারিখই ০১-০১-১৯৯৫ ইং। শুধুমাত্র পৌরসভাই নয় ফরিদগঞ্জ ইউনিয়ন ভিত্তিক তথ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতেও চলছে এমন অনিয়ম। সকলের অগোচরে সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে তথ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে ঘটে যাওয়া এমন দূর্নীতির চিত্রটি যারা দেখেছেন তাদের সকলকেই হতবাক করেছে। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার জন্ম নিবন্ধন বিষয়ক কর্মকর্তা মো: জিয়াউর রহমান জানান, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্বাক্ষর সহ সুপারিশ পাওয়ার পর জন্ম নিববন্ধন পত্র প্রদান করে থাকি। কাজেই কারও বয়স বাড়ানো হয়েছে নাকি কমানো হয়েছে এ বিষয়ে তারাই ভাল জানেন।’ অর্থনৈতিক ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অনেকেই আমাদের খুশি হয়ে কিছু টাকা সম্মান করেন এটাকে ঘুষ বললে ভুল হবে।