শওকত আলী
মতলব উত্তর উপজেলায় অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির রোপা আউশ পানির নিচে। সেচ প্রকল্পের টরকী বিল, ইসলামাবাদ বিল, ইন্দুরিয়া বিল, ফতেপুর বিল, দূর্গাপুর বিল, ব্রাহ্মনচক বিল, আমুয়াকান্দা বিল’সহ কয়েকটি বিল ঘুরে দেখা গেছে অন্তত ১০টি বিলের রোপা আউশ এখন থৈ থৈ পানির নিচে। ফলে এই রোপা আউশ মৌসুমে উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ধানের চারা লাগানো শেষ হয়েছে মাত্র এক মাস আগে। সেচ প্রকল্পের প্রত্যেকটি বিল এখন সবুজ আর সবুজ। কিন্তু টানা ভারী বর্ষণের কারনে বিলগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে কৃষকের আউশ ফসলের স্বপ্ন মাটি হতে বসেছে। উদ্দমদী ও কালীপুর পাম্প হাউজের ৬ টি পাম্প অনবরত পানি নিষ্কাশন করেও জলাবদ্ধতা রোধ করতে পারছে না। দেখা যাচ্ছে সারাদিন পানি টেনে পানি কিছু কমলেও আবার এক ঘন্টার বৃষ্টিতেই বিলগুলো তলিয়ে যাচ্ছে। আমুয়াকান্দা গ্রামের কৃষক খোকন মিয়া ও ইন্দুরিয়া গ্রামের কৃষক আঃ আউয়াল’সহ একাধিক কৃষক জানান, আউশ মৌসুমের শুরুতে চাহিদা অনুযায়ী বৃষ্টি হওয়ায় ধান গাছের গঠন ভাল হয়েছে। তবে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বিলগুলো তলিয়ে যাওয়ায় ধানের ক্ষতি হবে। এভাবে যদি ৫-৬ দিন ধরে পানির নিচে থাকে তাহলে ধান গাছে পচন ধরার আশংকা রয়েছে। এবং গরীব কৃষকরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মূখীন হবে। ১৯৮৭-৮৮ অর্থ বছরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নির্মাণ হওয়ার পর প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমি নিয়ে প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। বর্তমানে জমি ভরাট, অপরিকল্পিত ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ফসলী জমিতে বৃক্ষ রোপন করায় এখন সেচ প্রকল্পের আবাদী জমি এসে দাঁড়িয়েছে ১৫-১৭ হাজার হেক্টরে। সরকারি খাল, পানি নিষ্কাশনের ক্যানেল, ট্রেইনেতা ক্যানেল, পানি নামার জলাশয়গুলো অবৈধভাবে দখল ও ভরাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার যে খালগুলো দিয়ে উদ্দমদী ও কালীপুর পাম্প হাউজের দিকে পানি নিষ্কাশন হবে সে খালগুলোতে কচুরিপানা জমাট বাঁধার কারনে দ্রুত গতিতে পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। অথচ এ খালগুলো কচুরিপানা মুক্ত থাকলে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই পানি নিষ্কাশন হয়ে যেত। কিন্তু এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একেবারেই উদাসীন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ মৌসুমে ৩ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রি-২৮, ব্রি-২৭, ব্রি-৪৮, বিআর-২৬, বিআর-১৪’সহ কয়েকটি উন্নত জাতের ধান। এ মৌসুমে হেক্টর প্রতি চাউলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩.৮০ মেট্রিক টন। মোট লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৯৪৬ মেট্রিক টন চাউল। মতলব উত্তর উপজেলা সহকারি কৃষি কর্মকর্তা তফাজ্জল হোসেন জানান, প্রবল বর্ষণের ফলে বিলগুলোতে দ্রুত পানি জমে যাচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বিশেষ করে বিভিন্ন খালের মুখ বন্ধ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যথাযথ না হওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হতে থাকলে এবারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত নাও হতে পারে। তবে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের স্লুইচগেটগুলো অনবরত পানি টানছে। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন সরকার বলেন, উদ্দমদী ও কালীপুর পাম্প হাউজের ৬টি পাম্ব রোটেশন অনুযায়ী অনবরত পানি নিষ্কাশন করছে। যতক্ষণ বিদ্যুৎ থাকে ততক্ষণ পাম্পগুলো চলতে থাকে। দু’টি পাম্প হাউজেরই সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিলগুলো যেন তলিয়ে না যায় সে জন্য আমরা সর্বাত্তক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।