মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্লাসে ৭০ শতাংশ উপস্থিতি থাকলে ছাত্রছাত্রীদের এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে টেস্ট পরীক্ষায় ফেল বাধা হতে পারবে না। বরং শিক্ষার্থীর ফেল করা বিষয়ে শিক্ষকদের জবাবদিহি করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করে
দেশের সব বিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় পাঠিয়েছে।
সরকারের এই পদক্ষেপের কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ না নিতে পেরে যারা ঝরে পড়ে, তাদের সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং পাবলিক পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়বে। তবে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে যাবে এবং পরীক্ষায় পাসের হারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়, সরকার আশা করে প্রতিটি শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে স্কুল জীবন শেষ করুক। সবাই শিক্ষার পরবর্তী ধাপে অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু লক্ষ করা গেছে কোনো কোনো বিদ্যালয় শত ভাগ পাস কিংবা ভালো ফলাফল দেখানোর জন্য নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্যতার অজুহাতে পরীক্ষার্থী ছাঁটাই করে। অপরপক্ষে অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা ও বিভিন্ন অযাচিত ঘটনার জন্যও কিছু শিক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষার আগে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। উপরোক্ত অবস্থা নিরসনে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অনুত্তীর্ণ কিন্তু ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত ছিল এমন শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হলো।
একই সঙ্গে প্রাক নির্বাচনী কোনো পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা খারাপ ফলাফল করলে তা বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে এ ব্যাপারে সতর্ক করতে এবং দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই পরিপত্রে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদারকির জন্য পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধান, ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডিকে সভার আয়োজন করে প্রত্যেক শিক্ষকের দায়িত্বাধীন বিষয়ের কৃতিত্ব মূল্যায়ন এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজন অনুযায়ী পুরস্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয় পরিপত্রে ।
এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে বিষয়টি মনিটর করে স্থানীয় একাডেমিক সুপারভাইজারদের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের এ ব্যাপারে রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়েছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষকদের দায়িত্বাধীন বিষয়ের কৃতিত্ব মূল্যায়ন-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে প্রেরণ করবেন। পরবর্তী সময়ে প্রাপ্ত তথ্যাদি সমন্বিত আকারে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করবেন জেলা শিক্ষা অফিসার।
এ আদেশের ব্যত্যয় ঘটলে দায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই পরিপত্রে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেক স্কুল-কলেজ রয়েছে যারা পাবলিক পরীক্ষায় শতভাগ পাসের এবং বোর্ডে সেরা ২০-এর মধ্যে থাকার কৃতিত্ব দেখানোর জন্য অনেক শিক্ষার্থীকেই টেস্ট পরীক্ষায় ছাঁটাই করে ফেলে। এই পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগই আর লেখাপড়ায় ফিরে আসতে পারে না। কেউ কেউ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রতারিত হয়। এই উদ্যোগের ফলে অশুভ প্রবণতা বন্ধ হবে। তিনি বলেন, কোনো পরীক্ষার্থী কোনো বিষয়ে ফেল করলে তার দায় ওই শিক্ষার্থীর নয়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের। সুতরাং সব শিক্ষার্থী যাতে শিক্ষার সময় সুযোগ পায়, সে বিষয়ে শিক্ষকদের সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।