ঘন কুয়াশা ও ঠাণ্ডার সাথেই অকাল মেঘ-বৃষ্টিতে ফসলহানির শঙ্কা : সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বান্দরবানে ৯.৪ ডিগ্রি বিক্ষিপ্ত হালকা বৃষ্টির আভাস : বাড়বে শীতের দাপট
কথায় আছে ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’। অব্যাহত ঘন কুয়াশার সাথে হাড় কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় কাঁপছে সারা দেশ। গতকাল অনেক জেলায় তাপমাত্রা আরো কিছুটা বেড়েছে। সূর্যের দেখা মিলেছে আগের চেয়ে বেশী সময়। এর ফলে জনজীবনে সাময়িক স্বস্তি দেখা দেয়। কিন্তু সন্ধ্যায় আগেই ফের শুরু হয় ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে শীতকষ্ট। হিমালয় ছুঁয়ে আসা হিমেল উত্তর দিকের বায়ুপ্রবাহ, ঘন কুয়াশা, আংশিক মেঘলা আকাশ, বাতাসের আদ্রতার পরিমাণ বেশী থাকায় ও উপরিভাগ থেকে হিম জেটবায়ু তীব্র হওয়ায় ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত জীবনযাত্রা। দরিদ্র, দিনমজুর, শ্রমিক জনগোষ্ঠীর আয় রোজগারে সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
গতকাল বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে রাতের তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রিতে নেমে গেছে। শ্রীমঙ্গলে ৯.৬, বরিশালে ৯.৭, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গায় ৯.৮ ডিগ্রি সে. ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ঢাকায় ছিল ১৩.১ ডিগ্রি সে.। এমনকি বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী মহানগরী চট্টগ্রামে রাতের তাপমাত্রা ১২.২, কক্সবাজারে ১৩.৭ ডিগ্রিতে নেমে গেছে।
প্রায় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীতকষ্ট-দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। গতকাল দিনের বেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুর ও সৈয়দপুরে ১৫.৫ ডিগ্রি। ঢাকায় ১৮.২ ডিগ্রি সে.।
মেঘ বৃষ্টির আভাস : গতকাল সন্ধ্যা থেকে তিন দিনের আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. মানোয়ার হোসেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় আকাশ মেঘলা সহ বিক্ষিপ্ত হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এতে করে আকাশপথ, নৌ, সড়কপথে পরিবহণ ব্যাহত হতে পারে। দিনের বেলায় ঠাণ্ডা অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আদ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ।
এদিকে আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, আকাশ মেঘলাসহ বরিশাল চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং ঠাণ্ডা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। শুক্রবার পরবর্তী সময়ে আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা ক্রমেই হ্রাস পেয়ে শীতের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমানে ঘন কুয়াশা ও ঠাণ্ডার সাথেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও হালকা বৃষ্টিপাত হলে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, সরিষা, তরমুজ ও শাক সবজি, বোরা বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষিবিদগণ। ইতোমধ্যে ঠাণ্ডা ও কুয়াশায় কোল্ড ইনজুরি হচ্ছে ফল ফসলের। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় পোকা মাকড় ও রোগবালাই দেখা দিতে পারে।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, টানা শীত ও কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। এর প্রভাব পড়েছে জেলার কৃষি ক্ষেত্রেও। তাপমাত্রা উঠানামা করলেও কমেনি শীতের দাপট। কনকনে ঠান্ডার জবুথবু হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুর্যের দেখা মিলছে না। দিনের অধিকাংশ সময় থাকছে মেঘাচ্ছন্ন।
গতকাল সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা মঙ্গলবার ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র ঠাণ্ডায় গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছে শীত কাতর মানুষগুলো। ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে গৃহপালিত পশু-পাখীরাও। শীত ও কনকনে ঠান্ডায় হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি কাশিসহ- ঠান্ডাজনিত রোগ।
গত ১ সপ্তাহে কুড়িগ্রাম জেনারেল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৪৪৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৭০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১২ শর্য্যার বিপরীতে ভর্তি আছে ৫৭জন শিশু। দিন ও রাতের তাপমাত্রার কাছাকাছি হওয়ায় দিনভর ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা আধুনিক সদর হাসপাতালে দেখাগেছে দৈনিক গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ জন ডায়রিয়া রোগী আসছে। চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাসায় ফিরছে। পৌষের প্রকৃতিতে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় বাড়ছে রোটাভাইরাসসহ বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার সংক্রমণ। এ সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু।
চিকিৎসারা বলছেন, শীত মৌসুমে রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। এখন পৌষের শেষ দিকে শৈত্যপ্রবাহ ও উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে প্রকৃতিতে ঠান্ডা জেঁকে বসেছে। যেহেতু শীতকালে শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী সংক্রামক ভাইরাস ‘রোটা’। ফলে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরা এই ভাইরাসজনিত ডায়ারিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
আন্ততর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিআরবি) সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ জন ডায়রিয়া রোগী আসছে। তবে এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় স্বাভাবিক।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি এস, কে মাসুদ রানাকে বলেন, দেশে সাধারণত প্রি-মনসুন তথা বর্ষার আগে (গ্রীষ্মকাল) ও শীত মৌসুমে রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। এখন পৌষের শেষ দিকে শৈত্যপ্রবাহ ও উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে প্রকৃতিতে ঠান্ডা জেঁকে বসেছে। যেহেতু শীতকালে শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী সংক্রামক ভাইরাস ‘রোটা’। ফলে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরা এই ভাইরাসজনিত ডায়ারিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাজ্জ্াদ হায়দার শাহীন জানিয়েছেন, ডায়রিয়া রোগ সাধারণত রোটা, সিজেলা, ডিসেন্ট্রি, ই-টেক ও কলেরাসহ বিভিন্ন ধরনের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়। তবে শীতকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগই রোটাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়। আমরা সাবক্ষনিক তাদের উন্নত সেবা দেবার চেষ্টা করছি।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে সংবাদদাতা জানান, মাঘের শুরু আর শীতের গর্জনে চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
বিষয়টি দৈনিক ইনকিলাব’কে নিশ্চিত করেছেন শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক বিপ্লব দাশ। তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৬ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গল।
আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এখানে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সকাল থেকে মৌলভীবাজার জেলার কোথাও সূর্যের দেখা মিলেছে না। এতে মানুষের জনজীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
সৈয়দপুর (নিলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সৈয়দপুরের মানুষ ভুলেই গেছে রোদ্রের প্রখরতা। টানা ৯ দিন সূর্যের দেখা নেই। প্রতি বছর শীত আসে চলে যায়, তবে অনেকেই শেষ কোন বছরে এমন টানা শীত পড়েছে ও দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষের কাছ থেকে সূর্য আড়াল হয়েছিল মনে করতে পারছে না।
কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার মানুষ। গেল কয়েকদিন ধরে দিনের বেশিরভাগ সময় দেখা মিলছে না সূর্যের।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম বলেন, জেলায় বুধবার সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উত্তরওপূর্ব দিক থেকে বাতাসের গতিবেগ ৪ কিলোমিটার। ঘন কুয়াশার কারণে বেলা ২টা পর্যন্ত সৈয়দপুর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকছে।
স্টাফ রির্পোটার মাদারীপুর থেকে জানান, কুয়াশা আর তীব্র শীতে মাদারীপুরে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বুধবার মধ্যরাত থেকে বাড়তে থাকে কুয়াশা। ঘন কুয়াশার কারণে বুধবার সকাল থেকেই পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচলে রয়েছে ধীরগতি। মহাসড়কে যানবাহন চলাচলও কম। ঘন কুয়াশায় দিক নির্ণয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে চালকেরা জানান। এ কারণে ধীরগতিতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে পরিবহন।
শিবচর উপজেলার সূর্য্যনগর ও পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, শীতের তীব্রতার কারণে বাইরে যাত্রীদের উপস্থিতিও কম। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রোদের দেখা নেই বেলা ১২টার দিকে কিছূটা কুয়াশা কেটেছে তবে রোদের দেখা মেলেনি।বিকেলে দিকে আবারো কুয়াশায় চারপাশ আচ্ছন্ন। সড়কে ঢাকাগামী পরিবহনও মহাসড়কে কম।
বদলগাছী (নওগাঁ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, হিমেল বাতাস ও ঘনকুয়াশায় মানুষসহ গরু-ছাগল অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এবং জনজীবন থমকে গেছে। এমন অবস্থায় ঠাণ্ডার সঙ্গে অভিজানে ফুটপাতে গরম পোশাকের দিকে ছুটছে ছিন্নমূল দিন মজুর অসহায় মানুষ।
বদলগাছী উপজেলা প্রশাসনের অপেক্ষারত সালমা, হামিদা, জায়দাসহ অনেকে বলছেন, প্রতি বছর শীতের সময় সরকারী কম্বল পাওয়া যেত, কিন্তু এবছর পাওয়া যাচ্ছে না। চেয়ারম্যানেরা নাকি সব নিয়ে গেছে।
বদলগাছী আবহাওয়া দফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ হাসান আলী জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরআগের দিন ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েকদিন এই হারে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। কিন্তু বুধবার-বৃহস্পতিবার একটু বৃষ্টির আভাস রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলায় টানা ৩৯ দিন নিম্ন তাপমাত্রা আর এলোমেলো ঠান্ডা বাতাসে জনজীবন ওষ্ঠাগত। কর্মহীন মানুষের খাদ্য সহায়তায় কেউ নেই। তারা কিভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটাচ্ছে সে খোঁজ প্রশাসনসহ নিচ্ছে না কেউ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্নো খাবার ও কম্বল বিতরণ অব্যাহত থাকলেও তা এ জেলার জন্য অপ্রতুল। প্রশাসনের তালিকায় নিত্যদিন মজুর এবং ছিন্নমূল মানুষ ঠাঁই পাচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আদ্রর্তা ছিল ৯৭ শতাংশ। এদিন সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আদ্রর্তা ছিল ৯৬ শতাংশ। একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে মো. হায়দার আলী জানান, উপজেলাজুড়ে তীব্র শীত উপেক্ষা করে পুরোদমে চলছে বোরো ধান লাগানোর কাজ। ১৫ জানুয়ারি থেকে এ ধান লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। মাঝে মধ্যে ঘনকুয়াশা ও প্রচন্ড ঠান্ডার জন্য বোরো ধান লাগানোর কাজে কিছুটা বিঘ্ন হলেও কৃষকরা বসে থাকেনি বেশিদিন।
বীজতলায় কোল্ড ইনজুরির কারণে কিছুটা সমস্যা দেখা দিলেও সেই সব সমস্যা কাটিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা বোরো ধান লাগানো কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার গোটা বরেন্দ্রর মাঠ জুড়ে যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই চোখে মিলবে কৃষক-কৃষাণীরা ধান লাগার দৃশ্য। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, চলতি মৌসুমে ১৫ হাজার ৮শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ মাত্র ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪ শ” ২০ হেক্টর বোরোর চারা রোপণ শেষ হয়েছে।
হিলি (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, হিলিতে ৭ দিন পর সূর্যের দেখা মিলল। শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠান্ডা বাতাসের সাথে জেঁকে বসেছে শীত। গত ৬ দিন ধরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে থাকায় সূর্যের তাপ তেমন ছড়ায়নি। ফলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। অবশেষে গতকাল দুপুর ২টার দিকে সূর্যের দেখা মিলছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন সেবামুলক সংগঠন ও এনজিওকে শীত বস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়নি।
ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে খেটে খাওয়া নিন্ম আয়ের মানুষেরা পরেছে বিপাকে। শীতের সাথে যোগ হয়েছে ঘণ কুয়াশা। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শীতের কারণে জ্বর, কাঁশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
গত কয়েকদিনের তীব্র শীতে কাপছে ঝালকাঠি জেলা। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল মানুষের। প্রচণ্ড শীত আর ঘণ কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠান্ডা বাতাসে হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে এ জেলার মানুষ। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। দিনের বেলাও সূর্য্যরে দেখা মেলে না। সড়কে হেডলাইট জ¦ালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। অনেকেই শীত নিবারণের পোশাকের কষ্টে ভুগছেন।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, তীব্র শীতে কাঁপছে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়ার হতদরিদ্র মানুষ। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে গ্রামীন জনপদ। গতকাল সকাল নয়টায় জেলায় সর্বনিম্ন ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে খেপুপাড়া আবহাওয়া অফিস। এতে ভোগান্তিতে রয়েছে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। বেকায়দায় পড়েছে গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ শিকারী জেলে ও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবিরা। অনেকেই খড়কুটো জালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভীড় করছে অনেক হতদরিদ্র মানুষ। এদিকে উপজেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠান্ডা জনিত শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা।