মিজান লিটন-
চাঁদপুর শহরের বহুল আলোচিত চিকিৎসক ডাঃ মাকসুদা আক্তার ওরফে সীমা আহসানের পরকীয়া প্রেমের জের ধরে মারামারির ঘটনায় দায়েরকৃত পাল্টাপাল্টি মামলায় পুলিশ তার স্বামী ডাঃ আহসান উল্লা ও পরকীয়া প্রেমিক আবদুলস্নাহ আল কাফী ওরফে পাহাড়িকে আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি চাকুরিজীবী ডাঃ মাকসুদা আক্তার ওরফে সীমা আহসানের সাথে দীর্ঘদিন ধরে শহরের তালতলা এলাকার পাহাড়ি নামের ওই যুবকের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য, বিরোধ, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে বেশ ক’বার। বার বার বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। জিডি পাল্টা জিডিও হয়েছে। তাদের পেশাগত অবস্থানের কথা চিন্তা করে পুলিশের মধ্যস্থতায় একাধিকবার তাদের মধ্যে সমঝোতাও হয়।
সর্বশেষ গত ৪ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় পরকীয়া প্রেম নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবার মারামারির ঘটনা ঘটে তাদের তালতলাস্থ হাসপাতাল কাম বাসায়। এরপর তালতলা এলাকায় রাস্তার উপর ডাঃ আহসানের সাথে সীমার প্রেমিক পাহাড়ির হাতাহাতি হয়। ঘটনার পর ডাঃ আহসান ও ডাঃ সীমা উভয়ে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় ডাঃ সীমা ও ডাঃ আহসান পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ গতকাল রোববার সকালে ডাঃ আহসানকে আটক করে কোর্টে প্রেরণ করেছে। একই দিন দুপুরে ডাঃ সীমার প্রেমিক পাহাড়িকেও আটক করে পুলিশ। আজ তাকে আদালতে সোপর্দ করার কথা রয়েছে। থানায় দায়ের করা ডাঃ আহসানের অভিযোগে স্ত্রী ডাঃ সীমা ও তার পরকীয়া প্রেমিক পাহাড়ীকে আসামী করা হয়েছে। আর ডাঃ সীমা শুধু তার স্বামীর বিরুদ্ধেই অভিযোগ দিয়েছেন। তবে পুলিশ মামলা দু’টির তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
এ ঘটনায় পুরো শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে একে তো ডাক্তার, তারপর আবার তিন সনত্দানের জননী হয়ে কীভাবে অন্য ছেলের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন সে প্রশ্ন দেখা দেয় সচেতন মহলে। এর আগে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছিলেন ডাঃ সীমা আহসান। সর্বশেষ তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েকর্মরত ছিলেন। গত কয়েক মাস আগে তাকে চাঁদপুরের বাইরে বদলী করা হলেও তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে চাঁদপুর শহরের তালতলাস্থ ডাঃ সীমা হাসপাতালে নিয়মিত প্রাইভেট প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে মামলা দায়েরের পর তিনি মায়ের বাসায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
আটক ডাঃ আহসান উল্লা জানান, তিনি তার কষ্টার্জিত আয়ের টাকায় স্ত্রীর নামে বাড়ি-গাড়ি করেছেন। তার স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে সরে আসতে বার বার চেষ্টা ও অনুরোধ করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। ছোট ছোট তিন সন্তানের কথা চিন্তা করে তিনি স্ত্রীকে তালাক দেননি বলে জানান। তিনি বলেন, স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় আমার স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক বখাটে যুবক পাহাড়ি আমার উপর শুক্রবার সন্ত্রাসী হামলা করে হত্যার চেষ্টা করে। এর আগেও তারা আমার উপর কয়েক দফা হামলা করেছিল। গত শুক্রবারের হামলার পর উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে। তিনি বলেন, উভয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার সকাল ১১টায় চাঁদপুর মডেল থানায় থানা পুলিশের সমঝোতা বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ আমাকে সমঝোতার কথা বলে থানায় এনে আটক করেছে।
অন্যদিকে ডাঃ সীমা আহসান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার স্বামী অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়ায় আসক্ত। এ কারণে প্রায়ই তাকে মারধোর করতো। শুক্রবারও তাকে বেদম মারধোর ও নির্যাতন করেছে ডাঃ. আহসান। তার সাথে পাহাড়ি নামের যুবকের পরকীয়া প্রেমের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ সীমা সাংবাদিকদের বলেন, পাহাড়ি আমার ছোট ভাইয়ের বন্ধু। সে হিসেবে আমার সাথে তার কথাবার্তা হয়। অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। এদিকে জানা গেছে, দেখতে সুদর্শন যুবক পাহাড়ি এর আগে কয়েকটি বিয়ে করেছে এবং সেগুলো ছাড়াছাড়িও হয়ে গেছে। নারীদের সাথে প্রেমের ছলনায় ফুর্তি করাই তার কাজ।
চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব মোরশেদ বলেন, দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ডাঃ আহসান ও পাহাড়িকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ডাঃ আহসানের আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুরের পর তাকে আদালতে হাজির করায় তার জামিন আবেদন করা হয়নি। আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। আজ সোমবার অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব ও অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন পাটওয়ারীসহ একদল আইনজীবী ডাঃ. আহসানের জামিন আবেদন করবেন বলে জানা গেছে।