মানিক দাস
চাঁদপুর শহরের ১০নং চৌধুরীঘাট এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর পাড় অবৈধভাবে দখল করার হিড়িক পড়েছে। বিআইডাব্লিউটিএ’র কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে দিয়েছে ভূমিদস্যুরা। তবে বসবাসকারীরা প্রকৃত দখলদার নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গরীব লোকজনের নাম ভাঙ্গিয়ে বসবাসের নাম করে ডাকাতিয়া নদীর পাড় দখল করা শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে ডাকাতিয়া নদীতে যান-বাহন চলাচল ও নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
জানা যায়, প্রায় ১০০বছর ধরে চৌধুরীঘাট এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে নৌকায় বসবাস করে আসছে বেধে পল্ল¬ী সম্প্রদায়। বর্তমানে তারা প্রায় ২শ’৫০ পরিবারে ১হাজার মানুষ বসবাস করেছে। বেশ কয়েক মাস থেকে তারা নদীর পাড় ঘেষে একটি দু’টি করে ঘর তৈরি করতে থাকে। বর্তমানে প্রায় ৫০/৬০টি ঘর নির্মাণ করেছে। এতে করে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের সরকারি জমি বেদখল হয়ে পড়ছে। ফলে নদীর প্রশস্ততা কমে আসছে দিন দিন। আর ডাকাতিয়া নদী পড়ছে হুমকির মুখে। এভাবে চলতে থাকলে চাঁদপুরের গর্ব ডাকাতিয়া নদী বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে মুছে যেতে বেশি দিন লাগবে না।
অবৈধভাবে বসবাসের খবর জানতে পেরে গত রোববার সকাল ১১টায় বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা ও মডের থানার এসআই ফিরোজ এসে তাদেরকে অবৈধভাবে তৈরি করা স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্যে ৩দিনের সময় দিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা মোঃ মোবারক হোসেন বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তারা আমাদের কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তারা সম্পূর্ণরূপে অবৈধভাবে এসব ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে। আমরা তাদের ৩দিন সময় দিয়ে এসেছি। এরমধ্যে তারা যদি তাদের ঘর নিজেরা উচ্ছেদ না করে, তাহলে আমরা নিজেরাই উচ্ছেদ করতে বাধ্য হব।
এদিকে বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন বলেন, আমরা ভূমিহীন গরীব মানুষ। আমাদের থাকার কোন জায়গা নেই। বর্ষার সময় আমাদের শিশুরা পানিতে পড়ে মরে যাচ্ছে। তাই আমরা সরকারি এই খাস জমিতে কোন মতে মাথা গোঁজার জন্যে ঘর তৈরি করে থাকছি। কিন্তু আমরা এদেশেরই নাগরিক। আমাদের এ পল্লীতে প্রায় ৭শ ’ভোটার রয়েছে। কিন্তু আমাদের কথা ভাবার জন্যে কেউ নেই। এক শ্রেণী ভূমি দস্যুরা আমাদের এ ভূমি থেকে বিতাড়িত করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু আমাদের এখান থেকে বিতাড়িত করলে আর যাওয়ার কোন জায়গা থাকবে না। আমরা এস্থানে প্রায় শতবছর বসবাস করে আসছি। সরকার যদি এ জায়গা লিজ দেয় তা হলে আমাদেরকে দেয়া হউক। আমরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী লিজ নেবো।
চৌধুরীঘাট এলাকার হোটেল গার্ডেনের মালিক পুরাণবাজার মেরকাটিজ রোডের বাসিন্দা মোঃ মাসুদ বেপারী জানায়, ঐ জায়গা লিজ নেয়ার জন্য কাগজপত্র জমা দেয়া হয়। কিন্তু বেদে পল্লীর লোকজন ঐ স্থানে কাউকে না জানিয়ে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করছে।
নাম না জানাতে অনিচ্ছুক চৌধুরীঘাট এলাকার কয়েক ব্যবসায়ীরা জানান, চৌধুরীঘাট এলাকার হোটেল গার্ডেনের মালিক মোঃ মাসুদ বেপারী বেদে পল্লী এলাকার জায়গা দখলের পাঁয়তারা করছে। এছাড়াও মোঃ মাসুদ বেপারীর হোটেল গার্ডেনে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলছে। পূর্বেও এ হোটেল থেকে পুলিশ বেশ কয়েক বার অভিযান দিয়ে সাজা প্রদান করে।
সমাজের সচেতন মহল চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী এ ডাকাতিয়া নদী রক্ষার জন্যে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে। এতে করে তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করে, যাতে করে অবৈধভবে কোন ভূমিদস্যুরা ডাকাতিয়া নদী দখল করতে না পারে।
এছাড়াও ১০নং চৌধুরীঘাটের সাবেক ফেরিঘাট এলাকায় ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের নামে জায়গা দখল করার সময় গত ১২ মে জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মোঃ আমিনুর রহমান ও বিআইডব্লি¬উটিএ উপ-পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) কর্মকর্তা মোঃ মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ করা হয়। পুনরায় ঐ স্থানটি ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাইন বোর্ড সাঁটিয়ে দখল করা হয়েছে।