কবির হোসেন মিজি
আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়মসহ একের পর এক ডাক্তারদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও ডাক্তারদের হাতে রোগীদের প্রহৃত হওয়া কিংবা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার কথা স্থানীয় পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনার বিষয়ে অবগত হলেও কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না অভিযুক্ত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। চাঁদপুর জেলার সর্ববৃহৎ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান এ সরকারি জেনারেল হাসপাতালটি। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা নিতে অধিকাংশ মানুষজন এ হাসপাতালটিতেই আসেন। রোগীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন ডাক্তারের জন্যে। কিন্তু সেই ডাক্তারগণ সময়মতো কর্মস্থলে না এসে বিলম্বে এসে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকেন। ইতিমধ্যে হাসপাতালের ডাক্তারদের হাতে রোগীরা মারধর ও লাঞ্ছিত হওয়ার বেশ ক’টি ঘটনা ঘটেছে।
গত ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার হাসপাতালের ১০৬ নং কক্ষের ডিউটিরত ডাক্তার এবিএম শফিকুর রহমান টিপু বেলা ১২টা ৭ মিনিটে তার কর্মস্থলে আসেন। তার সহকারী টাকার বিনিময়ে রোগীদের সিরিয়াল ভঙ্গ করলে অন্যান্য রোগী তার প্রতিবাদ করতে গেলে ডাক্তার নিজেই রোগীদের সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন। এমনকি তার বাবার বয়সী এক বৃদ্ধ রোগীকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তার রুম থেকে বের করার চেষ্টা করেন। তখন তার কাছে আসা অন্য রোগীরা এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে তিনি রোগীদের কাছে চিকিৎসা দিবেন না বলে ধমকি দিয়ে ডিউটি থেকে চলে যান। শুধু তাই নয়, এ ঘটনার সময় ডাঃ টিপুর বিরুদ্ধে রোগীদের কাছে একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়। এর পূর্বে গত ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের হাবিবুল্লাহ খানের পুত্র হারুন খান (৫৫) তার ভাই মজিব খানকে নিয়ে পায়ের আঙ্গুলের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ডিউটিরত ডাক্তার ফরিদ আহমেদের কাছে আসেন। পায়ের চিকিৎসার বিষয়ে আলাপ করলে তিনি তাদেরকে পুনরায় রোগীর আঙ্গুলটি কেটে অপারেশন করার পরামর্শ দেন। এ নিয়ে রোগী এবং ডাক্তার ফরিদ আহমেদ ও ডাঃ ফয়সালের সাথে বাগ্বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ডাক্তার ফরিদ আহমেদ রোগীর ভাই হারুন খানের শার্টের কলার ধরলে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ডাক্তার ফরিদ তখন হারুন খানের গায়ে হাত তোলেন বলেও রোগীর লোকজন অভিযোগ করেন। এছাড়াও হাসপাতালের আরেক ডিউটিরত ডাক্তার হামিমা আক্তারের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীদের একাধিক অভিযোগ। তিনি প্রায়ই হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মচারী হতে শুরু করে রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকেন। রোগীদের সাথে তার খারাপ আচরণের কথা বেশ ক’বার স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শুধু রোগীদের উপর ডাক্তারের মারধরের ঘটনাই নয়, এর বাইরেও রয়েছে হাসপাতালের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ। সরকারি তালিকায় একজন কর্মচারীকে সকাল সাড়ে ৮টায় কর্মস্থলে আসার কথা থাকলেও প্রতিদিনই অধিকাংশ ডাক্তার ডিউটিতে আসেন সকাল ১১টা কিংবা সাড়ে ১১টার পর। এত কিছুর পরও ওইসব অভিযুক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যতবারই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ততবারই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশার বাণী শুনিয়েছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা শুধু তিনি নিজেই জানেন। তা-ই যা হবার তাই হচ্ছে। একের পর এক ঘটছে ডাক্তারের হাতে রোগী লাঞ্ছিত হবার ঘটনা।
গতকাল ২২ অক্টোবর বুধবার দুপুরে এসব ঘটনার বিষয় নিয়ে কথা হয় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ প্রদীপ কুমার দত্তের সাথে। জানতে চাওয়া হয় ডাঃ শফিকুর রহমান টিপুর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? তিনি বলেন আজ (গতকাল) অপারেশেন রুমে ডিউটি রয়েছে। তাই আমরা আগামীকাল (আজ) সবাই বসে একটা ব্যবস্থা নিবো। কী ব্যবস্থা নিবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাই বসে একটা মতামত নিয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় তা দেখবো। ডাক্তার ফরিদ আহমেদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় দোষী হচ্ছেন রোগী ও রোগীর লোকজন। ঘটনার দিন থানা থেকে পুলিশ এসেছিলো তাদের ধরে নিয়ে যেতে। তারা গরিব মানুষ বলে আমরা সবাই মিলে বিষয়টি মীমাংসা করে তাদের ছেড়ে দিয়েছি।