আবারো বন্ধ হয়ে গেলো পুরাণবাজারের ডাব্লিউ রহমান জুট মিল। গত ৯ দিন যাবৎ মিলের সকল উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মিলটি বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় হাজার থেকে ১২শ� শ্রমিক। যাদের এ মিলের উপর জীবন জীবিকা তারা চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে, অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বহু বছর পর বন্ধ মিলটি চালু হওয়ায় চাঁদপুরের দরিদ্র পরিবারগুলোতে নূতন করে বাঁচার আশা জেগে উঠে। বিশেষ করে স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা ও যুবতী নারী শ্রমিক এ মিলে কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছিল। এখন তারা কী করবে? জীবন বাঁচাবে কীভাবে? এ শঙ্কায় তারা রয়েছে।
সরজমিনে মিল এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ডাব্লিউ রহমান জুট মিলস্ চাঁদপুর কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি অনুযায়ী মিলটি ভাড়া নিয়ে উৎপাদন পরিচালনা করে আসছিল পাবনা জুট বেলিং কোম্পানি নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ওয়াহিদুর রহমান সূত্রে জানা যায়, টানা ৫ বছর পাবনা জুট বেলিং কোম্পানি ভাড়া নিয়ে মিলটি চালিয়ে আসছিলো। পাটজাত পণ্যের চাহিদা কম থাকায় এবং পাটের দাম বৃদ্ধি ও পাট সঙ্কটসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানি মিল চালাতে অপারগতা প্রকাশ করে ডাব্লিউ রহমান জুট মিল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে। সিবিএ নেতা নুরুল ইসলাম মিজি (সভাপতি চাঁদপুর জেলা শ্রমিক লীগ) ও আঃ মতিন মোল্লা (সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেলা শ্রমিক দল) জানিয়েছেন, যারা ভাড়ায় মিলটি এতদিন চালিয়ে আসছিল একের পর এক লোকসান দিয়ে আসছে বিধায় তারা বন্ধ করে দিয়েছে। শ্রমিকদের বকেয়া বলতে মাত্র ৯ দিনের মজুরি তারা পাবে। আর কর্মচারীদের এক মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে পাবনা জুট কোম্পানি মিল কর্তৃপক্ষকে সবকিছু বুঝিয়ে দেয়ার সময় বকেয়া বিষয়টির মীমাংসা হবে। সিবিএ নেতারা আরো জানান, ভাড়াটিয়া খোঁজা হচ্ছে। মিলটি পুনরায় চালুর জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ডাব্লিউ রহমান জুট মিলস্ চাঁদপুর ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম জানান, নতুনভাবে ভাড়া নিতে যারা আসবে, তখন মিল চলবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য মিলটি বন্ধ হয়ে যায়নি।
এক সময় বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি হতো। তখন ছিল পাটের সুদিন। সে সময় ডাকাতিয়া নদীর বুকে গড়ে উঠে ডাব্লিউ রহমান ও স্টার আলকায়েদ জুট মিলস্ নামক দু�টি পাটের কল। যাদের অবস্থান বাণিজ্যিক এলাকা পুরাণবাজারে। বহু বছর মিলটি চলার পর পাটের বাজার বিশ্বব্যাপী ধস নামায় একে একে দেশের চালু পাটকলগুলো বন্ধ হতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ ও ২০০০ সালে ২ দফায় ডাব্লিউ রহমান জুট মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। মিল মালিক বকেয়া সমুদয় অর্থ পরিশোধ করে দীর্ঘ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় মিলটি ফেলে রাখে। পরবর্তীতে চাঁদপুর শহরবাসীর আন্দোলন সংগ্রাম ও দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে পুনরায় চালু করা হয় এ মিলটি। প্রায় ১০ বছর যাবৎ এ মিলটি চালু রয়েছে। মিল সচল রাখতে ৩টি ভাড়াটিয়া প্রতিষ্ঠান মুখ্য ভূমিকা পালন করে বলে শ্রমিকরা জানায়। মুনসুর এন্ড ব্রাদার্স, এশিয়া জুট ম্যানুফেকচারিং ও সর্বশেষ পাবনা জুট বেলিং এ তিনটি প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় মিল চালু রেখে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রেখে আসছিল। এবার ভাড়াটিয়া চুক্তি নবায়ন না করে মিল চালাতে অপারগতা প্রকাশ করায় আবারো বন্ধ হয়ে পড়ে ডাব্লিউ রহমান জুট মিলস্। এখন অপেক্ষা নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিয়ে ফের চালু করে কি-না। এমনটাই জানালেন মিল সংশ্লিষ্ট অনেকেই। বেকার শ্রমিকরা জানেন না কবে নাগাদ তাদের মিল চালু হবে এবং ডিউটিতে আসবে। এখানে আরো উল্লেখ্য, ৫শ� তাঁতের মধ্যে শতাধিক তাঁত চালু করে ভাড়াটিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ১০টি বছর মিলটি সচল রেখেছিলো। এ সময়ে মিলে পাটের চট, বস্তা ও নলি সুতা উৎপাদন হতো। একটি সূত্র জানা যায়, পাটজাত এ পণ্যের চাহিদা দেশের অভ্যন্তরেই অনেকাংশে কমে যাওয়ায় উৎপাদন কার্যক্রমও হরাস পেতে শুরু করে। এখনও বিপুল পরিমাণ পাটের চট ও বস্তা অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। এর চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদন কার্যক্রমে কোম্পানিগুলোকে লোকসান গুণতে হচ্ছে।