চাঁদপুর
শহরের পুরাণবাজার নিতাইগঞ্জ এলাকার ব্রজেন্দ্র সাহার ছেলে বৈদ্যনাথ সাহা
(সনু সাহা) (৩৭) গতকাল শনিবার পরলোকগমন করেছেন। তবে তার মৃত্যুটি ঢাকাস্থ
কুর্মিটোলা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে হওয়ায় এ মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন,
জল্পনা-কল্পনা, সন্দেহ ও তোলপাড় চলছে। একই সাথে এলাকাবাসী আতঙ্কিত এই খবরে
যে, সনু সাহার মৃত্যুর আগে তাকে নাকি তার বাবা এবং বোন দেখতে গিয়েছিল। এখন
ভীতির কারণ হচ্ছে, সনু সাহা যদি সত্যিই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা
গিয়ে থাকেন, তাহলে তো তার সংস্পর্শে থাকার কারণে তার বাবা এবং বোন থেকে এই
ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার খুবই আশঙ্কা থেকে যায়। এ আশঙ্কা থেকেই নিতাইগঞ্জ
এলাকার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে। তবে সনু সাহার বাবার দাবি হচ্ছে, তার ছেলে
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় সনু সাহার প্রতিবেশী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা
গেছে, সনু সাহা নারায়ণগঞ্জে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত
কয়েকদিন যাবত তিনি জ্বর, সর্দি, কাঁশি ও গলা ব্যথায় ভুগছিলেন। স্থানীয়ভাবে
চিকিৎসা নিলেও তিনি ভালো না হওয়ায় গতকাল শনিবার সকালে কুর্মিটোলা হাসপাতালে
তিনি ভর্তি হন। তখন তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
পরে তার শরীর থেকে নানা নমুনা নেয়া হয় পরীক্ষার জন্যে তিনি করোনায় আক্রান্ত
কি না সেটি জানতে। কিন্তু এর রেজাল্ট আসার আগেই সনু সাহা গতকাল বিকেলে
মারা যান।
এদিকে গতকাল বিকেলে তার মৃত্যুর খবর পুরাণবাজার এসে পৌঁছলে এই মৃত্যু
নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, সনু সাহা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এক কান
দুই কান হতে হতে এটি প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ পর্যন্ত পৌঁছে। তখন সদর
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সাথে সাথেই একজন স্বাস্থ্য কর্মীকে ঘটনাস্থলে
পাঠানো হয়। আর যাকে পাঠানো হয় তিনি সনু সাহার প্রতিবেশী। তিনি বিভিন্ন
মাধ্যম থেকে উপরোক্ত তথ্যগুলো সংবাদকর্মীদের জানান।
এদিকে সন্ধ্যায় পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ মাসুদ তাঁর ফোর্স
নিয়ে সনু সাহার ঘরের আশপাশ পুরো এলাকা কর্ডন করে রাখেন যেনো ঘর থেকে কেউ
বের না হতে পারে। বলতে গেলে সনু সাহার বাবা ও বোনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা
হয়।
এদিকে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, সনু সাহা অস্বাভাবিক নিউমোনিয়ায়
আক্রান্ত ছিলো। আর অস্বাভাবিক নিউমোনিয়া করোনার একটি লক্ষণ বলে জানা গেছে। এ
কারণে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহর সাথে যোগাযোগ
করা হলে তিনি জানান, আমরা সনু সাহার মৃত্যুর সনদে মৃত্যুর কারণ হিসেবে
পেয়েছি এটিপিক্যাল নিউমোনিয়া অর্থাৎ অস্বাভাবিক নিউমোনিয়া। আর এটি হলে
করোনার টেস্ট রেজাল্ট অবশ্যই লাগবে। তিনি আরো জানান, যদি তিনি করোনা রোগী
হয়ে থাকেন, তাহলে তার লাশ চাঁদপুর আনা যাবে না, ঢাকাতেই সৎকার করতে হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি
বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো আমরা নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না। মৃত্যুর কারণ
হিসেবে যে ‘অস্বাভাবিক নিউমোনিয়া’ বলা হয়েছে তা তো হতেই পারে। নিউমোনিয়ায়
আক্রান্ত হয়ে তো মানুষ মারা যেতেই পারে। এটা নিয়ে খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার
কিছু নেই।
পুরাণবাজার নিতাইগঞ্জ মন্দির পূজা কমিটির সভাপতি অসীম মিশ্র জানান, সনু
সাহার বাড়ি মন্দিরের পেছনে। নারায়ণগঞ্জেই একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরির
সুবাদে সনু সাহা সেখানেই আত্মীয়ের বাড়িতে বসবাস করতেন। গত ৫ মাস হয় বিয়ে
করেছেন। নারায়ণগঞ্জে ভীষণ জ্বর নিয়ে গত ১২/১৪ দিন যাবৎ তিনি অসুস্থ। আমরা
শুনেছি গতকাল শনিবার স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তারা দুই ভাই ১ বোন।
পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ মাসুদ জানান, করোনাভাইরাসের লক্ষণে
চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার নিতাইগঞ্জের এক যুবক ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। এমন
খবর পেয়ে আমরা নিতাইগঞ্জ মন্দিরের গেইট বন্ধ রাখতে বলেছি। মারা যাওয়া
যুবকের বাবা ও বোনকে বাসা থেকে বের না হবার জন্য বলা হয়েছে। এখন তারা হোম
কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছেন
সনু সাহা ঢাকা কুর্মিটোলা হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
মারা যান। চিকিৎসক তার লালা ও রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছেন।
সর্বশেষ আপডেট
সনু সাহা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান নি। রাত পৌনে ১০টায় এ তথ্য
জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ। তিনি জানান, ঢাকা
কুর্মিটোলা হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জামিল সাহেব জানিয়েছেন সনু
সাহার রিপোর্ট করোনার নেগেটিভ এসেছে। রাতেই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর
করে দেয়া হয়েছে।