ঢাকা শহরের উন্নয়ন ও নগর পরিকল্পনায় রাজউক কতটা উন্নতি করেছে তা এখন ভাবার বিষয়। তারা মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার ও পার্ক তৈরি করে ভাড়া দিয়ে খাচ্ছে। গরিবদের কাছ থেকে কম দামে জমি কিনে বড়লোকদের কাছে বিক্রি করছে। এর মাধ্যমে শহর থেকে তারা গরিব তাড়ানোর কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেন, ‘রাজউক নগর উন্নয়নে কতটুকু করেছে, আর গরিব তাড়ানোর কাজ কতটুকু করেছে সেটা চিন্তার বিষয়। গরিব মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে এদিক-সেদিক থাকছে।’
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অডিটরিয়ামে অধ্যাপক আদনান জিল্লুর মোর্শেদের ‘ঢাকা ডেলিরিয়াম’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও বাংলাদেশ আরবান নলেজ হাবের যৌথ উদ্যোগে ‘পারস্পেক্টিভ অন সাউথ এশিয়ান আরবানিজম’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেসব প্রতিষ্ঠান যে উদ্দেশ্য নিয়ে গঠন হয়েছিল তারা কতটুকু তা করতে পারছে সেটা এখন ভাবার বিষয়। আমাকে পরিকল্পনামন্ত্রী বলা হয়, কিন্তু আমি পরিকল্পনার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত না। আমার আশপাশের কিছু লোক আছে তারা পরিকল্পনা করে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার এখন দারিদ্র্যমুক্ত এবং সারা দেশে বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গ্রামের মানুষ যাতে শহরের সুবিধা পায় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। ঢাকা যে ৮০ ভাগ জিডিপিতে অবদান রাখে এটা আদৌ কত ভাগ বাস্তব তা ভাবার বিষয়। এখানে সুষম বণ্টন নেই। সরকারপ্রধান এখানে সুষম অবস্থা চাইছে সারা দেশে। এটির জন্য গ্রাম হবে শহর সেটি ভাবা হচ্ছে।’
পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ঢাকাকে পরিকল্পিত করতে হলে ঢাকার বাইরে সমন্বিত পরিকল্পনা ও ঢাকাকেন্দ্রিক পরিকল্পনা একসঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রাম পর্যায়ে নিশ্চিত করতে হবে। মফস্বলে পুনর্জাগরণ প্রয়োজন। শুধু নগরায়ণ করলে হবে না, অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণ প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সুবিধা ছাড়া কোনো উন্নয়নই টেকসই হয় না। তবে এ উন্নয়নে অর্থায়ন প্রয়োজন। সুন্দর নগরায়ণের সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। সব জায়গায় সমান আইন থাকতে হবে। এজন্য নাগরিককে সচেতন হতে হবে।’
আদনান জিল্লুর মোর্শেদ বলেন, ‘শহর পরিকল্পনায় সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া। তাই পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দু-চারজনকে দিয়ে মহাপরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। টেবিলে বসে নগর পরিকল্পনা করলে হবে না। বাইরে বের হতে হবে। শহর কখনো বেহেশত হবে না। সবাইকে কাজ করতে হবে। বর্তমান যুগে শহর হচ্ছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ভালো শহর করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নগর ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে হবে। সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না। এটাকে সামাজিক দায়বদ্ধতায় আনতে হবে।’
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ‘ঢাকা এখন বহু চরিত্রের সংমিশ্রণ। এ শহরটা অনেক বড় হয়ে গেছে। সময় ও চাহিদার অনুপাতে এখানে নানা কিছু তৈরি হয়েছে, তবে এখনো নারীদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়নি। পাবলিক টয়লেটের সংখ্যাই এত অপ্রতুল যে কর্মজীবী নারীরা প্রতিদিনকার জীবনে চরমভাবে ভুক্তভোগী হন। এ বিষয় নিয়ে আমাদের আরো সংবেদনশীল হয়ে কাজ করতে হবে।’
স্পেনভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা অলট্রিম পাবলিশার্স ‘ঢাকা ডেলিরিয়াম’ বইটি প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত আদনান জিল্লুর মোর্শেদের অর্ধশতাধিক লেখা এতে স্থান পেয়েছে।
বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের আগে ‘জনঘনত্বই হতে পারে ঢাকার আশীর্বাদ’ শিরোনামের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, ফরহাদুর রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।