► আর বসে বসে মার খাওয়ার সময় নেই
► পোড়ার যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে
► প্রতিটি এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে
► অগ্নিসন্ত্রাসীদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না
সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বসে বসে মার খাওয়া যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভায় দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র অংশ নেন।
গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ
সভাপতি শেখ হাসিনা।
চার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুচলেকা দিয়ে গিয়েছিল সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করব, তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ধরে এনে সাজা বাস্তবায়ন করব। আমেরিকা… তারা খুনি পালতেছে একটা, আবার কানাডা পালে আরেকটা, পাকিস্তানে আছে দুইটা। সবার কাছে বলব—এই খুনিদের ফেরত পাঠাতে হবে। আর ব্রিটিশ সরকারকে বলব, তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত পাঠাতে। কারণ সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা (বহির্বিশ্ব) মানবতার কথা বলে, দুর্নীতির কথা বলে, আবার সেই খুনিকে, দুর্নীতিবাজকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয়। কাজেই তাকে বাংলাদেশের কাছে হ্যান্ডওভার করতে হবে। এই দেশে নিয়ে এসে সাজা আমি বাস্তবায়ন করব। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হলো, আমি তখনই দেশে চলে আসছি। ওর (তারেক) বাপও (জিয়াউর রহমান) তো আমাকে ঠেকাতে পারেনি। তারেক জিয়ার বাপও আমাকে ঠেকাতে পারেনি। আবার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তখনো পারেনি। এতই নেতৃত্ব দেওয়ার শখ, দেশের বাইরে পালিয়ে থেকে কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, সেই সুযোগে ডিজিটালি কথা বলে। ’
পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব দেশ আমাদের দেশের গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের দেশের অবস্থা তো আমরা জানি। প্রতিদিন মানুষ খুন হয়, ভোটের সময় ভোট চুরি হয়েছে বলে তাদের ক্যাপিটলেও আক্রমণ হয়; পাঁচ-ছয়জন গুলি করে মারে, আর তাদের কাছ থেকে আমার গণতন্ত্রের ছবক নিতে হবে! আমরা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। ’
বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না : আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরা (বিএনপি) কিভাবে অত্যাচার করেছে, সেটা তুলে ধরতে হবে। বিএনপির অপকর্ম তুলে ধরতে হবে। আমাদের যে নেতাকর্মীরা বিএনপির হাতে ছেঁচা মার খেয়েছে, তাদের বসে থাকলে তো চলবে না। মানুষকে জানাতে হবে ওরা কী করতে পারে, কী করে। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না, এটাও ঠিক। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাসীদের, স্বাধীনতাবিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না, এটা স্পষ্ট কথা। ওরা আমাদের উত্খাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে আবার পকেটেই থাকবে। গণতন্ত্রের কথা ওদের মুখে মানায় না। ’
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার যেন আর কোনো বিআরটিসির বাস পোড়াতে না পারে। যেটা পোড়াতে যাবে, এখন তো সবার হাতে ক্যামেরা…ভিডিও ফুটেজ দেখে যেই হাতে আগুন দেবে, সেই হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দিতে হবে। কোনো দিন বলিনি, এখন বলব। আর মার খাওয়ার সময় নাই। ’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সেই পঁচাত্তর থেকে ২১ বছর শুধু মার খেয়েছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত শুধু মার খেয়েছি। …পোড়ার যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। এখনো পোড়া মানুষগুলোর অবস্থা দেখলে চোখে পানি আসে। মা দেখে চোখের সামনে স্বামী-সন্তান পুড়ে যাচ্ছে। এদের কিসের ক্ষমা, এদের আর ক্ষমা নাই। ’
প্রতি এলাকায় মাঠে থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না—এটা আমার স্পষ্ট কথা। প্রতি এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে। আর আমাদের যতগুলো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, তাদের বলতে হবে, তারা কী শান্তিতে থাকতে চায়? নাকি আবার অশান্তিকে জায়গা দিতে চায়। তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। জ্বালাও-পোড়াও হত্যা-খুন-মানি লন্ডারিং এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের শান্তি বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না। ’
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই প্রস্তুত থাকবেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষের একটা ক্ষতিও যেন করতে না পারে। সবাইকে বলে দেবেন, তারাও যেন প্রতিবাদ করে। এর আগে বহু যন্ত্রণা দিয়েছে তারা। আমরা অনেক সহ্য করেছি। এভাবে আমার কৃষক শ্রমিক, আমাদের নেতাকর্মী কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা নাই। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির জন্ম কোথায়? জিয়াউর রহমানের উর্দি পরা পকেটে। পকেট থেকে কাগজ বের হয়েছে এমন সংগঠন। আওয়ামী লীগ কারও পকেটের সংগঠন না। এটা তাদের মাথায় রাখা উচিত।
কত তেল আছে দেখব : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব মিডিয়া এখন ধরনা দিচ্ছে, এত টেলিভিশন…এ তো আমারই দেওয়া। আমি যদি উন্মুক্ত না করে দিতাম, এত মানুষের চাকরিও হতো না, এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারত না। ’
সংবাদকর্মীদের একটি অংশের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করব। আওয়ামী লীগের সময় আরাম-আয়েশ করে ব্যবসা করে খাচ্ছে তো, কারও ব্যবসায় আমরা বাধা দিইনি তো। বিএনপির আমলে তো এত আরামে ব্যবসা করতে পারেনি। এই মিডিয়া একটা উল্টাপাল্টা লিখলেই তো মারত। তার পরও এত আহ্লাদ কিসের? এত তেল মারা কিসের? আমি তো জানি না। কত তেল আছে, আমি দেখব। ’
কূটনীতিকদের একতরফা উদ্বেগ : ওবায়দুল কাদের
যৌথ সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কূটনীতিকরা একতরফা উদ্বেগ জানিয়েছেন—এটা ঠিক নয়। আমরা আপনাদের বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই। শত্রুতা করবেন না। ’ তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে তারা (বিএনপি) সংঘাতের উসকানি দিচ্ছে, সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গিবাদি শক্তি মাঠে নামিয়েছে। আগুন সন্ত্রাসে নেমেছে। লাশ ফেলার দুরভিসন্ধি তারা গতকাল কার্যকর করেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করে জনগণকে কষ্ট দিয়ে আর সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। আমরাও করব না। ’ তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) পুলিশের ওপর হামলা করেছে। পুলিশ রাস্তায় পড়ে ছিল, সেই ছবি মিডিয়া দেখায়নি। এটা কেন করা হচ্ছে, মিডিয়ার একটি অংশ কেন একটি পক্ষ নিচ্ছে? এটা আমার অভিযোগ। কক্সবাজারে এত বড় সমাবেশ, মিডিয়া ঠিকভাবে দেখায়নি। মিডিয়ার কাছে আমরা প্রত্যাশা করি, তারা যা দেখবে তাই দেখাবে। আমরা সত্যকে তুলে ধরার আহ্বান জানাই। ’