স্টাফ রিপোর্টার
‘হায় হায় কোম্পানী’ কর্তৃক অসংখ্য গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপন দু বোনের দীর্ঘদিনের মারাত্মক দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত থানা, পুলিশ, আইন, আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুরহাটে বহুল আলোচিত চিহ্নিত প্রতারক মিজান মুন্সী কর্তৃক বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ অসংখ্য গ্রাহককে অধিক মুনাফার প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার কারণে আপন দু বোনের সম্পর্ক মারাত্মক দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে রূপ নেয়। তাদের মধ্যে মনোমালিন্য থেকে শুরু করে কথা কাটাকাটি, গালাগালি, মারধর করে স্ট্যাম্প ছিনিয়ে নেয়া, সম্পত্তিগত বিরোধ, আদালতে মামলা, নারী ডাকাত সাজানো, থানায় জিডি, পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তথা মামলা-পাল্টা মামলায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। লাপাত্তা হয়ে যাওয়া ওই বিপুল অংকের টাকার মধ্যে মোটা অংকের টাকা রয়েছে একই উপজেলার উত্তর তরপুরচন্ডী গ্রামের মতিউর রহমান তালুকদারের দু’কন্যা রাবেয়া খাতুন (৪২) ও রেহানা আক্তার (৪০) সহ তাদের আত্মীয়স্বজনের।
সদর উপজেলার শিলন্দিয়া গ্রামের আবুল বাশার মুন্সীর পুত্র মোঃ মিজানুর রহমান মুন্সী ওরফে মিজান মুন্সী বাবুরহাটে ‘নিউ লাইফ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ’ নামীয় প্রতিষ্ঠানের কথিত চেয়ারম্যান হিসেবে অধিক মুনাফার প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে স্থায়ী আমানত ও মেয়াদী আমানত বাবদ বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় অসংখ্য গ্রাহকের কাছ থেকে সুকৌশলে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় পরিস্থিতি বর্তমানে এমন আকার ধারণ করেছে যে, গ্রামের লোকজন পৃথকভাবে দু বোনের পক্ষ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এই মারাত্মক ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোনো সময় গ্রামবাসীর মাঝে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জোর আশঙ্কা রয়েছে। জনৈক কুচক্রী ছোট বোন রেহানাকে বিভিন্ন সময় কুপরামর্শ দিয়ে একের পর এক ভিত্তিহীন আইনী জঞ্জালের মাধ্যমে এহেন ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অবস্থা বেগতিক ও ভয়াবহ করে তুলেছে। এতে বড় বোন রাবেয়া ও তার স্বামী দেলোয়ার হোসেন ছোট বোন রেহানার আজগুবি অভিযোগে নানাভাবে হয়রানির সম্মুখীন হয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে দেখা যায়। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশ্বস্ত ও গোপন সূত্রের।
একটি সূত্র জানায়, ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর তারিখে রেহানা ভগ্নিপতি দেলোয়ারের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ দেয়। এর মাত্র ৬ দিন পর অর্থাৎ ১৭/১২/২০১২ খ্রিঃ তারিখে রেহানা তা আপোষ-নিষ্পত্তির জন্য প্রত্যাহার করে নেয়। পরে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ অক্টোবর তারিখে উক্ত বিষয়টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে আপোষ-নিষ্পত্তি হয় এবং ওইদিনই রেহানা ও তার স্বামী জাকির হোসেন শেখ রাবেয়াকে বেধড়ক পিটিয়ে তার কাছ থেকে উভয় পক্ষের সই-স্বাক্ষর সম্বলিত আপোষ-নিষ্পত্তির ৫০ টাকা মূল্যমানের ৬টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প (নং-২২০৫৫১০ থেকে ২২০৫৫১৫ পর্যন্ত) ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে রাবেয়া সাথে সাথে মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ চাঁদপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করে। রেহানা প্রায় ১ বছর পর পুনরায় ভগ্নিপতি দেলোয়ারের কাছে ১২ লক্ষ টাকা পাবে বলে কাগজের ফটোকপিসহ এ বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দায়ের করে। এ অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করে এবং প্রতিবাদ জানিয়ে তার বোন রাবেয়া ২/১০/২০১৪ খ্রিঃ তারিখে পুলিশ সুপার বরাবর পাল্টা অভিযোগ দাখিল করে। এসব অভিযোগ ও মামলাগুলো তদন্ত করছেন যথাক্রমে চাঁদপুরের সহকারী পুলিশ সপুার শচিন চাকমা, চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মামুনুর রশিদ সরকার, চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মানিক ও সহকারী উপ-পরিদর্শক নোমান।
সূত্র জানায়, প্রকৃতপক্ষে রেহানার স্বামী জাকির হোসেন শেখ তার স্ত্রীর স্বপ্রণোদিত অধিক লাভের আশায় মিজানুর রহমান মুন্সীকে চেক মারফত ৪ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। উক্ত চেকের সামনের পৃষ্ঠায় এবং পিছনের পৃষ্ঠায় মোঃ জাকির হোসেনের ৩টি স্বাক্ষর এবং মিজানুর রহমানের ২টি স্বাক্ষর স্পষ্টতঃ বিদ্যমান রয়েছে। যার হিসাব নম্বর-৩৮২১০১০৫৫০৫৩, চেক সিরিজ নম্বর-২০৩৫১৫২, তারিখ ১৭/০৯/২০০৯, টাকা ৪,০০,০০০/-(চার লক্ষ), পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, চাঁদপুর শাখা। উক্ত ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বিধি মোতাবেক উল্লেখিত তারিখে চধু ঈধংয (নগদ প্রদান)-এর ৫৭ (সাতান্ন) নং স্ক্রলের মাধ্যমে চেকের বাহক মোঃ মিজানুর রহমানকে উল্লেখিত টাকা প্রদানের আদেশ দেন। এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, রেহানার স্বামী মোঃ জাকির হোসেন মিজানুর রহমানকে চেক মারফত ৪ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। উক্ত ৪ লক্ষ টাকার চেকের সামনের পৃষ্ঠায় এবং পিছনের পৃষ্ঠায় কোথায়ও দেলোয়ার হোসেনের স্বাক্ষর নেই। এছাড়া রেহানা ভগ্নিপতি দেলোয়ারের কাছে কখনো ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আবার কখনো ১২ লক্ষ টাকা পাবে বলে বিভিন্ন সময় দাবি করে। এমতাবস্থায় চাঁদপুরের আইন প্রয়োগকারীর সংস্থা কর্তৃক বিষয়টি তদন্ত^ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হলে থলের বিড়ালের ন্যায় ধীরে ধীরে সব রহস্যই বেরিয়ে পড়বে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।