স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেছেন, পবিত্র কুরআনের বার্তা সারাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) কাজ করেছেন। সে আলোকে তিনি সারাদেশে বহু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ঢাকার অধিকাংশ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষক ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিলো একটাই আল্লাহর পবিত্র কালামের হেফাজত।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী-নানুপুর চৌরাস্তা মোড় চাঁদপুরজমিন টাওয়ারের সম্মুখে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এর ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমীরে শরীয়ত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হফেজ্জী হুজুর (রহ.) এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) তাঁর দীর্ঘ কর্মময় জীবনে মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকায় অনেক সময় ব্যয় করলেও শেষ মুহুর্তে একটি বিষয় অভাব উপলব্দি করেন। সেটি হচ্ছে আল্লাহর জমিনে তার দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। সে কারনে তিনি দেশের বড় বড় আলেমদের ডেকে খেলাফত এর দায়িত্বের বিষয়টি অবগত করেন। ওই মুহুর্তে অনেকেই সাড়া না দিলেও তিনি সর্ব প্রথম প্রচলিত রাজনৈতিক প্রথা বন্ধ এবং সকলকে আল্লাহর কাছে তওবা খেলাফত এর দায়িত্ব পালনের জন্য আহবান করেন। সে আলোকে তিনি ১৯৮১ সালে প্রথম বটগাছ মার্কা নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। সে নির্বাচনে তিনি ভোটে প্রথম হলেও অন্যদের কারণে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) কে তৃতীয় দেখানো হয়। পরবর্তী নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় হন।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে ভোটে তিনি প্রথম হলেও তা গোপন করা হয়। তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি না হলেও সারাদেশের মানুষের মনের হৃদয় জুড়ে আছেন। তার সেই খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি। দেশের চলমান অবস্থা থেকে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তির জন্য খেলাফত প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও চাঁদপুর জেলা সভাপতি মোঃ রোকনুজ্জামান রোকন এর সভাপতিত্বে বিশষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সহকারী মহসচিব মাওলানা হাফেজ আবু তাহের, কেন্দ্রীয় মানবাধিকার ও সংখ্যালঘু সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ বাশার, কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা মহানগর নায়েবে আমীর মাওলানা ফিরোজ আশরাফী, কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা মহানগর যুগ্ম সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মাহবুবু রহমান ও নোয়াখালী বেগমগঞ্জ খেলাফত আন্দোলন নেতা আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের চাঁদপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক পাটওয়ারী।
কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আকরাম হুসাইন এর সঞ্চালনায় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গাছতলা দরবার শরীফের পীর মাওলানা খাজা ওয়ালি উল্যাহ, চাঁদপুর জেলা সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ এর সভপতি ও দৈনিক চাঁদপুর সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুর রহমান, বাগাদী দরবার শরীফের পীরজাদা মাহফুজ উল্যাহ খান, ইসলাহুন্নিছা মহিলা মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুফতী মো. শফিকুল ইসলাম ও দৈনিক চাঁদপুরজমিন পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুহাম্মদ মাসুদ আলম।
শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন নানুপুর কবিরাজ বাড়ী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রাকিবুল ইসলাম পাটওয়ারী। হামদে বারী পেশ করেন মমিনপুর মাদ্রাসার হাফেজ মারুফ হুসাইন, হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) স্মরনে তারানা পেশ করেন মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) সারা বাংলাদেশে ২শ’ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেগেছেন। তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামে মক্তব প্রতিষ্ঠা করা। যাতে করে প্রত্যেক ঘরে ঘরে পবিত্র কোরআনের আলো পৌঁছায়। যেহেতু এ জমিন আল্লাহর। সেহেতু এ পৃথিবী ও আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ চলবে আল্লাহ তা’লা অর্থাৎ কুরআনের নিয়মে। জমিন যার আইন চলবে তার এ শ্লোগানে অনেক বক্তাই একমত পোষন করেন।
বক্তারা আরো বলেন, হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) যখন ছোট ছিলেন, তখন থেকেই পবিত্র কুরআনের হেফাজত করার জন্য অঙ্গীকার করেন। সে হিসেবে তিনি অনেক কষ্ট ও প্রচেষ্টায় ভারতে গিয়ে পবিত্র কুরআনের হাফেজ হন। সেই থেকেই তিনি পবিত্র কুরআনের খেদমত করা শুরু করেন। যার কারনে উপমহাদেশে এক নামেই হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) এর নাম সকলের কাছে পরিচিত।
আমরা যারা রাজনীতি করিনা কিংবা অন্য রাজনৈতিক দলের কথা শুনি। আমাদের সকলের লক্ষ্য একটাই হওয়া উচিৎ। কারণ আমরা সকলের দুনিয়াতে এসেছি খেলাফতের দায়িত্ব নিয়ে। পবিত্র কুরআনে যে খেলাফতের দায়িয়েত্বর কথা বলা হয়েছে, তা প্রতিষ্ঠায় আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। আর সেই খেলাফত প্রতিষ্ঠারই ডাক দিয়েছিলেন হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক চাঁদপুর সংবাদ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক জিয়াউর রহমান বেলাল, নানুপুর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি, নানুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি পুলিশের সাবেক অফিসার ইনচার্জ সেকান্দর আলী মিয়াজী, মুমিনপুর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ মাওলানা মুসসিন (রহ.) এর সাহেবজাদা হাফেজ মো. হামেদ ও হাফেজ মো. জায়েদ, বাগড়া বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সুলতান আরেফীন, বাগাদী-নানুপুর চৌরাস্তা জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্ব মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক ফরহাজী, উত্তর ইচলী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মো. ইসহাক তালুকদার, মুমিনপুর মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাসউদ, মুমিনপুর শাহী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শহীদুল ইসলাম, দৈনিক চাঁদপুরজমিন পত্রিকার সহ-সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম অনিক, স্টাফ রিপোর্টার বাবু আলম, গাজী মো. ইমাম হাসানসহ স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লীগণ।