দেশ জুড়ে ভয়াবহ দাবদাহে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। দুঃসহ গরমে গত এক সপ্তাহ ধরে সবার হাঁসফাঁস অবস্থা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। তাই গরমে ঘরে-বাইরে ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। একই সঙ্গে বাড়ছে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে জ্বর ও ডায়রিয়া রোগী। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ছে। বিশেষ করে ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস, লিভার, ক্যানসার ও কিডনি রোগীরা বেশি সমস্যায় পড়ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই গরম অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। ব্লাডপ্রেশার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। তারা বলেন, গরমে অতিরিক্ত ঘামলে শরীর ডিহাইড্রেড হয়ে পড়ে। এর ফলে ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, পেটের সমস্যা, সর্দি-জ্বর, হাঁপানি, গ্যাসের সমস্যা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ত্বকে সমস্যা, নানা ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও অন্তঃসত্ত্বাদের এই ঝুঁকি বেশি।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, এবারের গরমে ভিন্নমাত্রা রয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাই দাবদাহের মধ্যে ঠোঁট শুকিয়ে ও ফেটে যাচ্ছে। বাতাসে জ্বলীয়বাষ্প কম থাকায় মূলত এমন হচ্ছে। এছাড়া রোজায় দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়া অবস্থায় প্রচুর ঘাম হলে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হতে পারে। তাই বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে পান করতে হবে। এছাড়া ফলমূলের শরবত পান, পচা-বাসি ও বাইরের খাবার না খাওয়া এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এই গরমে যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে কিডনি, লিভার, হার্টের রোগী, গর্ভবতী মা, ক্যানসারের রোগীদের বেশি ঝুঁকি রয়েছে। গরমে প্রস্রাব কমে যায়, ব্লাডপ্রেশার কমে যায়, পালস থাকে না। হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। গরমে শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে যায়। মাথা ঘুরায়। এই সব রোগীর শরীর মুছে দিতে হবে। পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে পান করাতে হবে। এটা পান করতে না পারলে স্যালাইন দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রয়োজন ছাড়া শিশুরা বাইরে যেন না যায়। টাইট কাপড় না পড়ে সুতির ঢিলেঢালা কাপড় পড়তে হবে। যারা কায়িক পরিশ্রম করেন, তাদের কয়েক ঘণ্টা কাজের পর বিশ্রাম নিতে হবে। একই সঙ্গে একটু লবণমিশ্রিত পানি পান করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তার পরও শরীর বেশি খারাপ হলে হাসপাতালে যেতে হবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের যুগ্ম-পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. বদরুল আলম বলেন, একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম, তাই শরীর খুবই দুর্বল হয়ে যায়। এই গরম অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটবে। যারা খেতে-খামারে কাজ করেন, তাদের হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা বেশি। সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। তাই স্বাস্থ্যসচেতন হতে হবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন প্রচণ্ড গরম। গরমে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশু হাসপাতালে আসছে। কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড দাবদাহে শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশ থেকেই ডায়রিয়ার রোগী আসছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে। রোগীরা ডায়রিয়া শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং হাঁটাচলার শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলছে। যদিও এখন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রচণ্ড গরমে হাসপাতালে রোগীর চাপ প্রতি বছরই হয়। সাধারণত প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ রোগী থাকে। কিন্তু গত কয়েক দিনের দুঃসহ গরমে রোগী ভর্তির সংখ্যা গড়ে ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে।