ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও শ্মশান নির্মাণে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি পেতে প্রথমে আবেদন করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পাকা বা স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা প্রস্তুতকৃত প্ল্যান ও ডিজাইন আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশানের জমি/স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/ইউনিয়ন মাস্টারপ্ল্যান (যদি থাকে), স্বাচ্ছন্দ্যে যান চলাচল, জনসাধারণের চলাচল দুর্ঘটনা এড়ানোর সুবিধার্তে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাস্তার পরিকল্পনা এবং উপজেলা মডেল মসজিদের অবস্থান বিবেচনায় নিবেন। ধর্মীয় স্থাপনা অনুমোদনের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এরকম ৯টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে। ধর্মীয় স্থাপনা নিয়ে গত ২৫শে মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বৈঠক করে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে বলা হয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং কবরস্থান স্থাপন বিষয়ে একটি কমিটির মাধ্যমে মতামত নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটিতে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দাখিল করতে।
ওই সিদ্ধান্তের আলোকে স্থানীয় সরকার বিভাগ অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন)কে আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। ১৯শে আগস্ট কমিটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি করে দাখিল করে।
প্রস্তাবনায় যা আছে: প্রস্তাবনা-১ এ বলা হয়েছে- ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ/স্থাপনকারী কর্তৃপক্ষ/ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/ পৌরসভার মেয়র/সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর বরাবর আবেদন করিবেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাকা/স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা প্রস্তুতকৃত প্ল্যান ও ডিজাইন আবেদনের সহিত দাখিল করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ যৌক্তিক মনে করলে আবেদনটি সুপারিশসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রেরণ করবেন। উপজেলা কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত আবেদনটি উপজেলা পরিষদ সমন্বয় সভায় অনুমোদিত হবে। একইভাবে পৌরসভা/সিটি করপোরেশন এলাকায় পৌর কমিটি/সিটি ওয়ার্ড কমিটি যৌক্তিক মনে করলে আবেদনটি সুপারিশসহ যথাক্রমে জেলা প্রশাসক/সিটি মেয়র বরাবর প্রেরণ করবে। পৌর এলাকার ক্ষেত্রে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ক্ষেত্রে মেয়রের সভাপতিত্বে সিটি করপোরেশনের মাসিক সাধারণ সভা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। প্রস্তাবনা-২ এ বলা হয়েছে-(ক) ইউনিয়ন এলাকায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণের ক্ষেত্রে ৮ সদস্যের একটি উপজেলা কমিটি থাকবে। এতে উপদেষ্টা পদে থাকবেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সভাপতি পদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন-সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, ফিল্ড সুপারভাইজার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক মনোনীত একজন করে ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন সকল ধর্মীয় প্রতিনিধি। ওই কমিটির কার্যপরিধি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- কমিটি ইউনিয়ন পরিষদ হতে প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহ বিবেচনা করবে। কমিটির কমপক্ষে তিনজন সদস্য কমিটির পক্ষে সরজমিন স্থান পরিদর্শন করে কমিটির নিকট প্রতিবেদন দাখিল করবেন এবং কমিটি উক্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা পূর্বক সিদ্ধান্ত নিবেন। পৌরসভার ক্ষেত্রে ১০ সদস্যর পৌর কমিটির কথা বলেছে। ওই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে থাকবেন পৌরসভার মেয়র। বাকিরা সদস্য হিসেবে থাকবেন। এ তালিকায় রয়েছে- প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যদি থাকে), সংশ্লিষ্ট সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর সদস্য, সংশ্লিষ্ট সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী/সহকারী প্রকৌশলী, মেয়র কর্তৃক মনোনীত একজন করে ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন সকল ধর্মীয় প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, ফিল্ড সুপারভাইজার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও পৌরসভার সচিব। পৌর কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে- কমিটির কমপক্ষে ৩ জন সদস্য কমিটির পক্ষে সরজমিন স্থান পরিদর্শন করে কমিটির নিকট প্রতিবেদন দাখিল করবেন এবং কমিটি উক্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা পূর্বক যৌক্তিক মনে করলে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করবেন। একইভাবে সিটি করপোরেশন এলাকায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান-শ্মশান নির্মাণে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হয়েছে। ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি হিসেবে থাকবেন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর। বাকি ছয়জন সদস্য। এ তালিকায় আছেন- সংশ্লিষ্ট সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, একজন স্কুলের শিক্ষক সদস্য, একজন কলেজের শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক মনোনীত একজন করে ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন সকল ধর্মীয় প্রতিনিধি, ওয়ার্ড সচিব ও সদস্য সচিব। কমিটির কার্যপরিধি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- কমিটির কমপক্ষে ৩ জন সদস্য কমিটির পক্ষে সরজমিন স্থান পরিদর্শন করে কমিটির নিকট প্রতিবেদন দাখিল করবেন এবং কমিটি যৌক্তিক মনে করলে আবেদনটি সিটি মেয়র বরাবর প্রেরণ করবে। এদিকে প্রস্তাবনা-৩ এ বলা হয়েছে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত না হলে সরকারি/খাস জমিতে এবং পরিত্যক্ত/অর্পিত সম্পত্তিতে কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান/অন্যান্য স্থাপনা ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ/স্থাপন করা যাবে না। অনুমোদন ব্যতীত এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হলে তা উচ্ছেদ করা যাবে এবং নির্মাতাকে জবর দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। ভবিষ্যতে রাস্তা প্রশস্তকরণের বিষয়টি বিবেচনা করে এ ধরনের স্থাপনা রাস্তা থেকে যৌক্তিক দূরুত্বে নির্মাণ/স্থাপন করতে হবে। প্রস্তাবনা-৪ এ বলা হয়েছে- ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণের উদ্দেশ্যে কোনো জমি ওয়াকফ, দান, ক্রয় অথবা আইন অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বরাদ্দ প্রাপ্ত হইলে উক্ত জমিতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ করা যাবে। তবে কোনো জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকলে সেই জমিতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ করা যাবে না। প্রস্তাবনা-৫ এ বলা হয়েছে-সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজস্ব জমিতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাবনা-৬ এ বলা হয়েছে- ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কমপক্ষে ২ কি:মি:/ যৌক্তিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। প্রস্তাবনা-৭ এ বলা হয়েছে- ঈদগাসমূহ উন্মুক্ত থাকবে। বছরের অন্য সময় ঈদগাসমূহ ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে ব্যবহারের সুযোগ রাখতে হবে। প্রস্তাবনা-৮ এ বলা হয়েছে- প্রতিযোগিতামূলকভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ/স্থাপন করা যাবে না। এক্ষেত্রে এলাকার জনসংখ্যা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান/কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আয়ের উৎস জানাতে হবে এবং তিনি আয়কর দেন কি-না তা বিবেচনায় আনতে হবে। প্রস্তাবনা-৯ এ বলা হয়েছে- মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত ‘মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০০৬’ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।