নগদ অর্থের তীব্র সংকটে বিদ্যুৎ খাত
আবু তাহের
অর্থের সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের বিল পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। অন্যদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি আমদানিতে বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না ডলারের অভাবে। এ নগদ অর্থ ও ডলারের সংকট দেশের বিদ্যুৎ খাতকে সার্কুলার ডেবট বা চক্রাকার ঋণের আবর্তে ঠেলে দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
কোনো এক পক্ষ দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে গোটা পেমেন্ট চেইনে যে বিশৃঙ্খলা ও ঋণের দুষ্টচক্র তৈরি হয়, সেটিকেই বলা হয় সার্কুলার ডেবট। বিদ্যুৎ খাতের ক্রেতা সংস্থা উৎপাদনকারী কেন্দ্রগুলোর পাওনা বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে এ সংকট তৈরি হয়। পাওনা বিল না পেলে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর পক্ষে জ্বালানির বিল ও ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। এর সঙ্গে সুদ যুক্ত হয়ে দেনার বোঝা আরো ভারী হতে থাকে। একই বিড়ম্বনায় পড়ে জ্বালানি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোও। বাড়ে আর্থিক খাতে খেলাপির সংখ্যাও। ব্যাংকগুলোও পড়ে যায় মূলধনের সংকটে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাতে নগদ অর্থের সংকট একটি দেশের গোটা সামষ্টিক অর্থনীতিকে দেনা ও ঋণের দুষ্টচক্রে ঠেলে দিতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, অতীতে বিদ্যুৎ খাতের সার্কুলার ডেবট এশিয়া ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশকে দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দেয়ার নজিরও রয়েছে।
আবার ডলারের সংকটেও ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি (জ্বালানি তেল, কয়লা ও গ্যাস) আমদানি। আমদানিতে কয়লার মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় এরই মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়েছে। আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ঋণের অর্থ পরিশোধ নিয়েও দেখা দিয়েছে বিড়ম্বনা। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে আরো কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও।
নগদ অর্থের সংকটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় সরবরাহকৃত গ্যাসের অর্থও ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না বিপিডিবি। আবার বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোরও (আইপিপি) বিপুল পরিমাণ পাওনা টাকা এখন বিপিডিবির কাছে আটকে আছে। এতে আইপিপিগুলোর কাছেও পেট্রোবাংলার সংস্থাগুলোর গ্যাসের বিল বাবদ অনেক টাকা পাওনা হিসেবে আটকে আছে। সব মিলিয়ে শুধু বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছেই পেট্রোবাংলার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাসের বিল বাবদ অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকা পাবে।
চলতি বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত জ্বালানি বিভাগের এক বৈঠকে জানানো হয়, আইপিপিগুলোর গ্যাস বিলের বকেয়ার পরিমাণ ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা। আর বিপিডিবির গ্যাসের বিল বকেয়া পড়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বর্তমানে এ বিলের পরিমাণ আরো বেড়েছে বলে জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। দেশের বেশির ভাগ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তিতাসের আওতাধীন। তিতাসসংশ্লিষ্ট একটি সূত্রও বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া বিলের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছে।
বিল বকেয়া থাকায় এরই মধ্যে অনেকগুলো বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতির জন্য প্রধানত বিপিডিবির কাছে বিল আটকে থাকাকেই দায়ী করছেন আইপিপি উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি ফয়সাল খান এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এটি খুবই দুর্দশাজনক পরিস্থিতি। আমরা প্রত্যাশা করি, লোডশেডিং কমানোর জন্য হলেও সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের এ সমস্যাটি সমাধান করবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে হলে বিদ্যমান এ সমস্যার সমাধান করা জরুরি।’
বিপিডিবির কাছে পাওনা আটকে থাকায় বিপাকে পড়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রতি মাসে বিপিডিবির কাছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি করে আইপিপিগুলো। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আইপিপিগুলোর বকেয়া ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না বিপিডিবি। সংস্থাটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের কাছে পাওয়া চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিদ্যুতের দাম ও ক্যাপাসিটি চার্জসহ বিপিডিবির কাছে আইপিপিগুলোর পাওনার পরিমাণ ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
পাওনা টাকা আটকে থাকায় আইপিপিগুলো এখন নগদ অর্থের সংকটে ভুগছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কয়েকটি আইপিপির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায়ও বিষয়টি উঠে এসেছে। এমনই এক তালিকাভুক্ত কোম্পানি এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড। কোম্পানিসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বকেয়া অর্থ আদায়ে ধীরগতির কারণে কোম্পানিটি এখন নগদ সংকটে ভুগছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
এ বিষয়ে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশীদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিপিডিবির কাছ থেকে টাকা না পাওয়ার কারণে আমরা সময়মতো ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছি না। এতে করে ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিল নয়, অন্যান্য সরকারি অর্থও আটকে আছে। যেসব ব্যবসায় সরকার বা সরকারি সংস্থার কাছ থেকে অর্থ পাওনার বিষয় থাকে, ব্যাংকগুলো এখন সেসব ব্যবসায় ঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। সময়মতো পাওনা অর্থ না পাওয়ার কারণে আমাদের চলতি মূলধন ব্যবস্থাপনাও বিঘ্নিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। বিশেষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা পরিশোধের বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
তালিকাভুক্ত দুই আইপিপি খুলনা পাওয়ার কোম্পানি ও শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, বিপিডিবির কাছে অর্থ বকেয়া থাকায় কোম্পানি দুটির নগদ প্রবাহ কমেছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে খুলনা পাওয়ারের শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট নগদ প্রবাহ (এনওসিএফএস) নেমে এসেছে ঋণাত্মক ৬ পয়সায়। যেখানে এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে এনওসিএফএস ছিল ২ টাকা ৮০ পয়সা। মূলত বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থ পরিশোধে বিপিডিবি দেরি করার কারণেই নগদ অর্থের প্রবাহ কমেছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
একইভাবে শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ারপ্রতি নিট নগদ প্রবাহও বেশ কমেছে। এক্ষেত্রেও বিপিডিবির কাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংকের বিল বকেয়া থাকার বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
এ পরিস্থিতি আরো দীর্ঘায়িত হলে সার্কুলার ডেবটের চক্রব্যূহ ভেঙে বের হওয়া বাংলাদেশের জন্য দিনে দিনে আরো কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে যে সংকট তৈরি হয়েছে, পদ্ধতিগতভাবে এগোলে এ বকেয়া ও ঋণ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তবে শিগগিরই বের হওয়া কঠিন। বরং যেসব সরবরাহকারীর কাছে বকেয়া পড়েছে, তাদের সঙ্গে বকেয়া নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি ডলারের সংস্থানের চেষ্টা করতে হবে। সব খাতেই ডলারের সংকট রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ খাতে এর প্রভাব বেশি। কারণ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক জ্বালানি আমদানিনির্ভরতা আমরা বাড়িয়েছি। ফলে সেই অর্থের জোগান ও উৎস আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে গিয়ে আর্থিক ঘাটতিতে পড়েছে বিপিডিবি। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এভাবে বিদ্যুৎ কিনে বিপিডিবি বিপুল অংকের আর্থিক ঘাটতিতে পড়েছে। সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে বিপিডিবির রাজস্ব পরিচালনে ডিএসএল দায় (ডেবট সার্ভিস লায়াবিলিটি) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকারও বেশিতে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৩-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ২৩১ কোটি টাকায়।
২০২১-২২ অর্থবছরে বিপিডিবির গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা/ইউনিট ৮ টাকা ৮৪ পয়সা। এ বিদ্যুৎ আবার আইপিপিগুলোর কাছ থেকে ইউনিটপ্রতি কিনতে হয়েছে ১১ টাকা ৫৫ পয়সা মূল্যে। বিপরীতে গ্রাহকের কাছে এ বিদ্যুৎ বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৬ টাকার কিছু বেশি। যদিও চলতি অর্থবছরে খরচ বেশে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ সাড়ে ৭ টাকার কাছাকাছি যেতে পারে বলে বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে।
বিপিডিবির আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ এখন প্রতি বছরই বড় হচ্ছে। এ অর্থ সমন্বয় করতে হচ্ছে সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়ার মাধ্যমে। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরেও সরকারের কাছ থেকে ২৯ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা ভর্তুকি সহায়তা নিয়েছে বিপিডিবি।
একইভাবে পেট্রোবাংলাসহ গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোও আর্থিক সংকটের কারণে সরকারের কাছ থেকে সহায়তা নিয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৩-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ পঞ্জিকাবর্ষের জুন পর্যন্ত সরকারের কাছে পেট্রোবাংলার ডিএসএল বকেয়া ৯ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা, তিতাসের ৯৮ কোটি, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ২১০ কোটি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) ৬১২ কোটি এবং বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির (বিজিএফসিএল) কাছে ২ হাজার ১১৯ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ অর্থের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালনে এককভাবে ভূমিকা পালন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। এ খাতে কোম্পানিটির রাজস্ব আয়ের চেয়ে বিনিয়োগ বেশি। সঞ্চালন লাইন নির্মাণে বর্তমানে বিদেশী বিনিয়োগের পাশাপাশি পিজিসিবির নিজস্ব বিনিয়োগ রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় পিজিসিবির বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করে সরকার। এ অর্থায়নের ৬০ শতাংশ ইকুইটি এবং ৪০ শতাংশ ঋণ হিসেবে প্রদান করা হয়। সরকারের কাছে সংস্থাটির বর্তমানে ডিএসএল বকেয়া প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৩ অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সরকারের কাছে পিজিসিবির ডিএইচএল বকেয়া ৯ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা।
দেশের স্থানীয় উৎসের পাশাপাশি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস আমদানি করে পেট্রোবাংলা। এ গ্যাস আবার বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে সংস্থাটি। আমদানীকৃত গ্যাসের দাম ও স্থানীয় উৎস থেকে বিদেশী গ্যাস সরবরাহ কোম্পানিগুলোর কাছে আবার পেট্রোবাংলার বিপুল পরিমাণ বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে শেভরন ও ক্রিস এনার্জির কাছে ২২ কোটি ডলার এবং এলএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সাড়ে ২০ কোটি ডলার। এছাড়া পায়রার কয়লা আমদানির বকেয়া ২০ কোটি ডলার এবং রামপালের কয়লার বকেয়া ৪ কোটি ডলার। এ হিসাব চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত হালনাগাদকৃত। বর্তমানে এ অর্থের পরিমাণ আরো বেড়েছে।
কয়লা ও গ্যাসের মতো জ্বালানি তেলের সংস্থান করতে গিয়েও বিভিন্ন সময়ে নানা বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে একটি জাহাজ ডিজেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে নোঙর ফেলে। কিন্তু বকেয়া পরিশোধের দাবিতে জাহাজে থাকা ৩৩ হাজার টন ডিজেলের খালাস আটকে দেয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড। এক পর্যায়ে জরিমানা ছাড়াই বকেয়া পরিশোধের মাধ্যমে ডিজেল খালাসের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায় দুই পক্ষ। নোঙর ফেলার তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর জাহাজ থেকে ডিজেল খালাস করা সম্ভব হয়।
দেশে জ্বালানি তেলের প্রধান সংস্থানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডলারের অভাবে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আরো পড়তে হয়েছে। সব মিলিয়ে রক্ষণশীলভাবে হিসাব করলেও দেখা যায়, জ্বালানির সংস্থান বাবদ দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরকারি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান-সংস্থাগুলোর দেনা অনেক আগেই ৫০০ মিলিয়ন (৫০ কোটি) ডলারের বেঞ্চমার্ক অতিক্রম করেছে।
নগদ অর্থ ও ডলারের সংকট সামনের দিনগুলোয় বড় বিপত্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের ডলারের সংস্থান করতে হবে। এটি করতে হলে আমদানি কমিয়ে রফতানি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স আনতে হবে, যদি সেটা করা না যায় তাহলে রিজার্ভ থেকে এ ডলারের জোগান দিতে হবে। যদিও সেটা করতে হয় তাহলে কমপক্ষে ১২০ কোটি ডলার আমাদের প্রয়োজন। বিদ্যুতের প্রাথমিক জ্বালানি আমদানিতে আমাদের এতদিন একটা ডেফার্ড পেমেন্টের সুযোগ ছিল। সেটি আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। বকেয়া বাড়িয়েছি। একটা সময় এখানে একটা আস্থার সংকট তৈরি হবে। তখন সবকিছু নগদে কিনতে হবে। কিন্তু এ পরিমাণ অর্থ তো আমাদের হাতে নেই।’