রফিকুল ইসলাম মিয়াজী : চাঁদপুর নৌ-সীমানাসহ মৎস্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ মতলবের ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত্ম ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ১১দিন সকল নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষানা করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত্ম কার্যকর থাকবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারী মৎস্য বিভাগের এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবাধে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার হচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে। এ সকল মাছ চাঁদপুরের ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত বড় স্টেশন মৎস্য আড়তে এসে, সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া জেলেরা নদীতে মাছ ধরার পর নদীর আশ পাশের গড়ে উঠা বিভিন্ন আড়তে এ সকল মাছ বাঙ্ ভর্তি করে আড়তদাররা ভারত, মায়ানমারসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গোপন পথে পাচার করছে। এতে করে নদীতে অভিযানকারী কোস্টগার্ড, টাস্কফোর্স কর্মকর্তা, নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগ পদ্মা-মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়ে কোন ফল পাচ্ছে না। নদীতে মাছ শিকারকারী ও দাদনদাররা ওই বাহিনীর সাথে তাদের নিজস্ব সোর্স ব্যবহার করে নদীতে অভিযানের পূর্বে মোবাইল ফোনে আগাম খবর পৌঁছে দেয়। এতে চলমান অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে সকল ঘাটে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ নিধন, আড়ৎদারী ও সরবরাহ কাজ নির্বিঘ্নে করে যাচ্ছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন, বহরিয়ার ছলেমান মাঝি, হরিণার কাদের ছৈয়াল, হারুন খাঁ, লক্ষীপুর মৃধা বাড়ীর বাসু মৃধা, ছায়েদ মাষ্টার, দোকানঘরের ফরিদ বেপারী, ভূট্টো, পুরাণ বাজার রনা গোওয়াল এলাকার শাহজাহান গাজী, আখনের হাট ঘাটের কালু চৌকিদার, গেসু চৌকিদার, খলিল চৌকিদার, রহুল আমিন খান, শহিদ সরদার, আনন্দ বাজারের শফিক সরদার। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকার জাটকা মৌসুমে ৩মাস অভয়াশ্রম ঘোষণার সময়ও অবাধে জাটকা নিধনের ফলে জাতীয় মাছ ইলিশ পরিপক্ক হতে পারে না। যার ফলে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশের ভর মৌসুমে আশানরূপ ইলিশ পাওয়া যায়নি। সরকার ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ১১দিন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ইলিশসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ রক্ষায় নদীতে জাল ফেলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন। চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার জেলে তাদের দাদনদার কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দাদন নিয়ে সরকারের বেঁধে সময় না মেনে প্রকাশ্যে নদ-নদীতে ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ শিকার করছে কারেন্ট জালের মাধ্যমে। চাঁদপুর নৌ-সীমানার ষাটনল এলাকা থেকে শুরু করে গড়ে উঠা আড়ৎ- আমিরাবাদ, আনন্দ বাজার, সফরমালী, কানুদী, মাছুয়া খাল, লঙ্গিমারা, রাজরাজেশ্বরের চেয়ারম্যান স্টেশন, ইশানবালা, আলুর বাজার, দোকানঘর, বহরিয়া, হরিণা ফেরিঘাট, আহনঘাট, নীলকমল, হাইমচর, চরভৈরবীসহ আশ পাশের এলাকা। এতে করে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে না পারায় ইলিশের বংশ বিস্ত্মার ব্যাহত হচ্ছে। কম পরিমাণ ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষা না করতে পারলে, আগামী ইলিশ ভর মৌসুমে এর উৎপাদন বিগত বছরের তুলনায় অনেক গুন হ্রাস পেতে পারে।
প্রজনন সময়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলেও আড়ৎদাররা জানালেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, যে সময়ে সরকার প্রজনন মৌসুম হিসেবে সময় নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক সময় নয়। আরো ১০ থেকে ১৫দিন পরে এ অভিযান প্রয়োজন ছিলো। বর্তমানে শতকরা ৮০%ইলিশ মাছের পেটে ডিম নেই। যা সাধারণ ভোক্তারা নিশ্চিত করেছে। জেলেরা আরো জানায়, যে সময়ে সরকার মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে, এ সময়ই নদীতে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন দত্ত জানান, আমরা ১১দিন নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করলেও ঘরে বসে থাকিনি। আমরা মেঘনা ও পদ্মা নদীতে অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। আমাদের অগচোরে রাতের আঁধারে মাছ ধরছে গুটি কয়েক জেলে কারেন্ট জাল দিয়ে। নদীতে মৎস্য বিভাগ, জেলা টাস্কফোর্স, কোস্টগার্ডসহ ৩টি টীম প্রতিনিয়ত কাজ করছে এবং ইলিশ বহন ও সড়ক পথে পরিবহন নজরদারী করার জন্য একটি ভ্রাম্যমান মোবাইল টীম কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি যেন নদীতে মা ইলিশ ধরা না হয়। ঢাকা থেকে চাঁদপুর ও লক্ষীপুরে একটি স্পেশাল টীম এসে নদীতে মনিটরিং করছে। সকলের সহযোগিতা ছাড়া এ কার্যক্রম শতভাগ সফল করা সম্ভব না। প্রজনন মৌসুমের সময় নির্ধারণের ব্যাপারে তিনি বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত্ম সে সময় র্নিধারণ করা হয়েছে, এটি ইলিশ প্রজনেনর পিক আওয়ার। ইলিশ সারা বছরই ডিম ছাড়ে। কিন্তু আশ্বিনের প্রথম পুর্ণিমার প্রথম ৫দিন ও পরের ৫দিন হিসেবে এ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ২০ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৬ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।