চাঁদপুর :চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গুবিন্দিয়া গ্রাম ও হরিনা ফেরিঘাট এলাকা মেঘনার কোড়াল ঘ্রাসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে বরাদ্দ না থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনার প্রবল ভাঙ্গনে গুবিন্দিয়া গ্রাম ও হরিনাফেরিঘাট এলাকায় দিন দিন ক্রমান্বয়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়ে আয়তনে কমে আসছে। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন প্রভাব যেতে না যেতে শুরু হয়েছে কয়েক দিনের টানা বর্ষন। এর ফলে প্রতিদিনই হরিনা ফেরিঘাট সহ আশ পাশের এলাকা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া গুবিন্দিয়া গ্রামের কয়েকশ পরিবার ভিটে বাড়ি হারিয়ে অসহায়ের মত দিন কাটাচ্ছে।
হরিনা ফেরি ঘাট এলাকাটি প্রতিদিনই নদী ভাঙ্গনের কারণে ফেরি চলচল ব্যহত হচ্ছে। ভাঙ্গনের কারণে কয়েকদিন পর পর ফেরি ঘাটের পল্টুন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সড়াতে হচ্ছে। এ কারণে প্রচুর সময় ব্যয় হচ্ছে। যার ফলে দক্ষিণাঞ্চল গামী যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন দীর্ঘ যানজটে পড়ে থাকতে হচ্ছে। হরিনা ফেরিঘাটটি ভাঙ্গন কোবল থেকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ’র কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এ হরিনাঘাটের আশে পাশে বেশ কয়েকটি দোকান ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্য দোকানীরা প্রতিনিহত আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে কখন না যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে, এ ভয়ে। ফেরিঘাট এলাকা দোতলা ভবন নির্মিত একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে এ মসজিদটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মসজিদের পাশে রয়েছে একটি পুকুর। নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন পুকুরটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যে কোন সময় এ এলাকার একমাত্র হরিনা মসজিদ ও মাদরাসাটি নদী গর্ভে তলিয়ে যাওয়ার জোর আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। এ এলাকার কয়েকশ ছাত্র এ মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছে। এলাকার মুসল্লিরা ও ফেরির যাত্রীর প্রতিদিন এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়ে। যদি এ মসজিদ নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে অচিরে রক্ষা করা না যায়, তাহলে এ এলাকার মুসল্লিরা নামাযের পবিত্র স্থানটি হারাবে ও মাদ্রাসা পড়য়া ছাত্ররা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হবে।
এলাকাবাসী জানায়, ভাঙ্গন কবল থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রয়োজন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কিছু দিন পূর্বে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি হরিনা টার্মিনাল ও আবাসিক হোটেল উদ্বোধন করতে এসে তিনি নদী ভাঙ্গন কবল থেকে রক্ষা করার জন্য চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিকে সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে এলাকাবাসীদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু দিনের পর দিন নদী গর্ভে হরিনা গুবিন্দিয়া গ্রাম ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যাচ্ছে অথচ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এলাকার লোকজন এখন হতাশ হয়ে পড়েছে। এ এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়ে অসহায় লোকজন খোলা আকাশের নিচে দিন যাপন করছে। আর কত দিন সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে সেটাই তাদের প্রশ্ন। আর কি হবে না হরিনা গুবিন্দিয়া গ্রাম রক্ষা। কবে কত দিন পর হবে, কে করবে? এ সব প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সূত্রে জানা, হরিনা গুবিন্দিয়া গ্রাম রক্ষায় বরাদ্দ না থাকার কারণে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। হরিনা ফেরিঘাট ও গুবিন্দিয়া গ্রাম এবং চরভৈরবীর কিছু অংশ মোট ১ কিঃমিঃ ভাঙ্গন কবলিত এলাকা নির্ণয় করা হয়েছে। এ ভাঙ্গন রক্ষার জন্য ৭১ কোটি টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রতিবেদন ডিপিটিতে পাঠানো হয়েছে। এখনো অনুমোদন পাশ না হওয়ায় ভাঙ্গন থেকে এ সব এলাকা রক্ষা করার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ২১ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।